বুধবার ৩০ অক্টোবর ২০২৪
১৪ কার্তিক ১৪৩১
সরকারি খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহী নন কৃষকরা, লক্ষ্যমাত্রা পূরণে শঙ্কা
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৩০ জুলাই, ২০২৪, ১:৩৪ এএম |


দিনাজপুরের হিলিতে নানা ঝামেলার কারণে সরকারি খাদ্যগুদামে গুদামে ধান দিচ্ছেন না কৃষকরা। তেমনি উৎপাদন খরচের তুলনায় দাম কম হওয়ায় সরকারি গুদামে চাল দিতে আগ্রহী নন মিলের মালিকরা। এতে চলতি মৌসুমে ধান ও চাল সংগ্রহ অভিযানে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে। তবে সংগ্রহ অভিযান খুব সন্তোষজনক দাবি করে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে বলে আশাবাদ উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রকের।
গত ২৩ মে থেকে হিলিতে বোরো মৌসুমের ধান ও চাল সংগ্রহের উদ্বোধন করা হয়। যা চলবে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত। দাম কিছুটা বাড়িয়ে ৩২ টাকা কেজি দরে কৃষকদের কাছ থেকে ৭৭২ মেট্রিক টন ধান ও ৪৫ টাকা কেজি দরে মিল মালিকদের কাছ থেকে ৪১৪ মেট্রিক টন চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। শস্যভান্ডার খ্যাত দিনাজপুরের হিলিতে ইতোমধ্যেই কৃষকরা তাদের বোরো ধান কাটা ও মাড়াই শেষে আমন ধান রোপণে ব্যস্ত সময় পার করছেন। বর্তমানে অধিকাংশ কৃষকের নিকট তেমন কোনও ধান নেই। কিন্তু এখন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ধান সংগ্রহ করতে পারেনি খাদ্য বিভাগ।
খোলা বাজারের চেয়ে খাদ্যগুদামে ধান দিতে গিয়ে নানা ঝামেলা পোহাতে হয়। যার কারণে সেখানে ধান দিতে আগ্রহী নন কৃষকরা। এদিকে বাড়তি মূল্যে ধান ক্রয় করে চাল উৎপাদন করে ৫০ টাকা কেজি পড়লেও সরকারি গুদামে দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ টাকা। এতে করে সরকারি গুদামে চাল দিতে গিয়ে লোকসান গুনতে হওয়ায় আগ্রহী নন মিল মালিকরাও। ২১ জন মিল মালিকের মধ্যে ১২ জন চুক্তিবদ্ধ হয়ে চাল সরবরাহ করেছেন। লাইসেন্স বাঁচানোর তাগিদে কেউ কেউ চাল সরবরাহ করলেও অনেকে চুক্তিবদ্ধ হননি। অনেক মিল মালিক ধারাবাহিকভাবে লোকসানের কারণে মিলই বন্ধ করে দিয়েছেন। চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হলেও ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হওয়া নিয়ে সংশয় রয়েছে।
হিলির চ-িপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সরকারি গুদামে ধান দেই না। কারণ হলো, আমরা ক্ষেত থেকে ধান কেটে সরাসরি বিক্রি করে দেই। এ সময় ধান কাঁচা থাকে কিন্তু খাদ্যগুদামে শুকনো ধান চায়। ১৪ ভাগ মিটার পাস হতে হবে যার কারণে খাদ্যগুদাম আমাদের ধান নেয় না। কিন্তু স্থানীয় ব্যাপারীদের কাছে ধান বিক্রিতে এ রকম কোনও ঝামেলা নেই। এমনকি তারা বাড়ি থেকেই ধান কিনে নিয়ে যায়। আবার গুদামে ধান দিতে গেলে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাওয়া যায় না। টাকা নিতে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট করতে হয়। কিন্তু আমরা কৃষক মানুষ পড়ালেখা তেমন জানি না। এসব ঝামেলার কারণে খাদ্যগুদামে ধান দিতে আগ্রহ নেই আমাদের। সরকারি খাদ্যগুদামের চাইতে দাম কিছুটা কম হলেও কাঁচা ধানসহ নগদ টাকা পাওয়ার কারণে আড়তগুলোতে ধান বিক্রি করে দেই আমরা।’
ইসমাইলপুরের কৃষক ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘ধান শুকনো না হলে খাদ্যগুদাম নিতে চায় না। কিন্তু তখন তো আমাদের কৃষকদের অত সময় থাকে না। আমরা তাড়াতাড়ি ধান কাটা ও মাড়াই করে দ্রুত বিক্রি করে দেই। শ্রমিকদের মজুরি,পানির দাম, সারের দামসহ অন্যান্য পাওনাদারদের টাকা পরিশোধ করার একটা চাপ থাকে। ধান কাটার পড়েই তো তাদের টাকা দিতে হয়। কিন্তু ওই সময় টাকা কোথায় পাবো। ধান তো আর আমরা রাখতে পারি না। যার কারণে বাধ্য হয়ে কিছুটা কম দাম হলেও কাঁচা ধানই বিক্রি করতে হয়।’
একই গ্রামের অপর কৃষক নুর ইসলাম বলেন, ‘গুদামে ধান দিতে হলে বাড়ি থেকে সেই ধান ভ্যান বা অন্যান্য যানবাহনযোগে নিয়ে গিয়ে দিতে হবে। যার কারণে পরিবহনে একটা বাড়তি খরচ গুনতে হয়। আর আড়তদারদের নিকট ধান বিক্রি করলে তারা বাড়ি থেকেই ধান নিয়ে যায়। কী ভেজা আর কী শুকনো, কোনও কিছু তারা দেখে না। কিন্তু গুদামে ধান দিতে গেলে সেটা পরিষ্কার হতে হবে, শুকনো থাকতে হবে এমন নানা ঝামেলার মধ্যে পড়তে হয়।’
হিলির খাট্টাউছনা গ্রামের কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমরা কৃষকরা যে সময় ধান কেটে বাড়িতে তুলি সে সময় কিন্তু সরকারিভাবে ধান কেনা হয় না। অনেক পরে ক্রয় অভিযান শুরু করা হয়। কিন্তু ততদিন আমাদের মতো কৃষকদের ধান ধরে রাখা সম্ভব নয়। আমাদের ধান বিক্রি শেষ হলে সরকার ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করে। এ ছাড়া ধান শুকনো হতে হবে, মিটার পাস করানো ইত্যাদি ঝামেলা তো রয়েছেই। তবে শুরু থেকেই সরকারিভাবে ধান কেনা ও সেই সঙ্গে অন্যান্য ঝামেলাগুলো কমালে কৃষকরা খাদ্যগুদামে ধান বিক্রি করতে আগ্রহী হয়ে উঠবে।’ 
দুদু হাসকিং মিলের স্বত্বাধিকারী মোস্তাফিজুর রহমান দুদু বলেন, ‘চাল ও ধানের বাজারে কোনোরকম সমন্বয় নেই। বর্তমানে ধানের বাজার চলছে প্রতিমণ এক হাজার ২৫০ টাকা। এই দামে ধান কিনে উৎপাদন করতে গিয়ে দাম দাঁড়াচ্ছে ৫০ টাকার ওপরে। অথচ সরকার সেখানে মিল মালিকদের জন্য চালের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ৪৫ টাকা কেজি দরে। খাদ্যগুদামে চাল দিতে গিয়ে কেজিপ্রতি ৫ টাকার ওপরে লোকসান গুনতে হচ্ছে আমাদের। এমন অবস্থায় আমরা কীভাবে খাদ্যগুদামে চাল দেবো?’
এ ব্যাপারে রহিম বক্স হাসকিং মিলের মালিক আলতাফ হোসেন ম-ল বলেন, ‘বর্তমানে এক মণ ধান থেকে চাল বেরোচ্ছে ২৪ কেজি। এতে করে এক হাজার ২৫০ টাকা প্রতিমণ ধান ক্রয় করে চাল উৎপাদন করতে আমাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে। এরপরেও আমাদের খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করতে হবে যেহেতু আমরা চুক্তিবদ্ধ হয়েছি। আর যদি চাল না দিই তাহলে মিলের লাইসেন্স থাকবে না। কালো তালিকাভুক্ত করা হবে। এ কারণে লোকসান করে হলেও যারা চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন তারা খাদ্যগুদামে চাল সরবরাহ করছেন।’
হাকিমপুর উপজেলা খাদ্যনিয়ন্ত্রক সোহেল আহমেদ বলেন, ‘চলতি মৌসুমে উপজেলায় মিল মালিকদের নিকট থেকে ৪১৪ টন সেদ্ধ চাল ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এখন পর্যন্ত ৩২০ টন সংগ্রহ সম্ভব হয়েছে। আতপ চাল ৭৯ টন সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল, যা পুরোটাই সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে। কৃষকদের নিকট থেকে ৭৭২ টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। এখন পর্যন্ত ৪৫৬ টন সংগ্রহ করতে পেরেছি। আরও টুকটাক ধান সংগ্রহ হতে পারে বলে ধারণা করছি। প্রথম দিকে আমরা লটারি করেছি সেখান থেকে নেওয়ার পরে পলিসিগতভাবে তালিকাভুক্ত কৃষকদের নিকট থেকে ধান সংগ্রহ করেছি, যারা আগ্রহী ছিল। আমরা মোটামুটি লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি চলে গিয়েছি। যেহেতু আগস্ট মাস পর্যন্ত সময় রয়েছে আশা করছি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ সম্ভব হবে বলে। আর যেসব মিল মালিক চাল দেবেন না তাদের জামানত বাতিলসহ লাইসেন্স বাতিল বা সাময়িকভাবে লাইসেন্স স্থগিত করা হবে।’













সর্বশেষ সংবাদ
মনোহরগঞ্জে সরকারি খাল দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ
কুমিল্লা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পি.পি. নিযুক্ত হলেন অ্যাড. সুজন
কুমিল্লায় শচীন মেলা শুরু আজ
টুটুল পালালেন অস্ট্রেলিয়ায়
কুমিল্লা জেলা পিপি এড. কাইমুল হক রিংকু
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা সদরের সাবেক চেয়ারম্যান টুটুল অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে গেছেন
কুমিল্লা জেলা পিপি এড. কাইমুল হক রিংকু
সিনিয়র সচিব পদমর্যাদায় পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য নিয়োগ পেলেন ড. নেয়ামত উল্লাহ ভূঁইয়া
কুমিল্লায় ১৮ দিনে ২৭ অভিযানে ৬৭ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
কুমিল্লায় শচীন মেলা শুরু আজ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২