পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হওয়ায় বাজারে বিভিন্ন পণ্যের ঘাটতি তৈরি হয়েছে। ঘাটতির প্রভাবে বেড়েছে পণ্যের দাম। অস্বাভাবিক বাড়তি দামের কারণে ভোক্তারা অস্বস্তিতে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে দ্রব্যমূল্য নাগালের বাইরে রয়েছে।
আয়ের চেয়ে সাধারণ মানুষকে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। চলমান আন্দোলন বাজারের নিত্যপণ্যের দামকে উসকে দিতে পারে বলে মনে করছেন অর্থনীতি বিশ্লেষকরা। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা উল্লেখ করে বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, গত পাঁচ বছরে চালের দাম বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ, ডাল ও তেলের দাম বেড়েছে শতভাগ, দেড়গুণ বেড়েছে চিনির দাম, অন্যান্য মসলার দাম বেড়েছে কয়েক গুণ। তাঁরা মনে করছেন, বাজার মনিটরিং ব্যবস্থায় দুর্বলতা রয়েছে।
অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, শুধু নীতি সুদহার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এর সঙ্গে বাজার তদারকিসহ আরো অনেক বিষয় জড়িত। বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের দাম বাড়াতে দেখা যায়।
কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও পণ্যের দাম বাড়ানো হয়। চাহিদা সামনে রেখে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কৃত্রিম সংকট তৈরি করেন কিংবা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে বেশি দামে কিনেছেন-এমন মিথ্যা তথ্য দিয়ে কয়েক গুণ বেশি দামে পণ্য বিক্রি করেন। তাঁদের মতে, মূল্যস্ফীতি তখনই কমবে যখন অর্থনীতির অন্যান্য সূচক নিয়মের মধ্যে রাখা সম্ভব হবে।
কয়েক বছর ধরেই যে হারে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে, তার তুলনায় সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে আরো কঠিন করে তুলছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, গত মার্চ মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয়েছে ৯.৮১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৭ শতাংশ। গত মে মাসে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জানায়, খাদ্যে মূল্যস্ফীতি ১০.২২ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান (বিআইডিএস) একটি জরিপের ফল প্রকাশ করে। ওই জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ।
এটা ঠিক যে সরকারের সামনেও বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি। কোনো কোনো পণ্যের দাম বাড়ে কারণ ছাড়াই। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) জুলাই ২০২৪ প্রতিবেদনে পূর্বাভাসে এডিবি জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি কমাতে নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার পরও গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) কাছাকাছি ছিল। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে আগামী দিনগুলোতেও এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকতে পারে।
মূল্যস্ফীতির বিষয়টি নিয়ে যখনই আলোচনা হয়, তখনই নীতিনির্ধারক মহল থেকে বলা হয়ে থাকে, আমদানিনির্ভর দেশ হওয়ায় বৈশ্বিক বাজারে মূল্যস্ফীতির প্রভাবে দেশের বাজারেও মূল্যস্ফীতি ঘটেছে। কিন্তু বিভিন্ন দেশে মূল্যস্ফীতি বেশ দ্রুতগতিতে কমলেও বাংলাদেশে কমার তেমন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশ ব্যাংক সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি অনুসরণ করছে দুই বছর ধরে। কিন্তু তার পরও মূল্যস্ফীতি কমেনি। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।