বৈষম্যবিরোধী
ছাত্র আন্দোলনের ডাকা বিক্ষোভ মিছিল চলাকালে গন্তব্যে যাওয়ার পথে
গুলিবিদ্ধ কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থী আশরাফুল ইসলাম নাঈম
(১৮) হাসপাতালের বিছনায় কাতরাচ্ছেন। তিনি বর্তমানে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ
হাসপাতালের ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁর বাঁ পায়ের হাঁটুর
নিচে গুলি লেগেছে। গুলিটি বের করতে আরো কয়েকদিন সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন
চিকিৎসকরা।
গুলিবিদ্ধ নাঈম কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের কম্পিউটার
ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি কুমিল্লার
বরুড়া উপজেলার মহেশপুর গ্রামে। সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে কোটবাড়ী
জাদুঘর সড়ক এলাকায় পায়ে গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) বিকেলে
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের দোতলায় ক্যাজুয়ালিটি বিভাগে গিয়ে দেখা
যায়, একটি শয্যায় শুয়ে আছেন আশরাফুল। তার বাঁ পা পুরোটাই ব্যান্ডেজ করা।
এসময় নাঈমের সাথে কথা বলতে চাইলেও রাজি হননি। ছবি তুলতে চাইলে লুকিয়ে রাখেন
মুখ।
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা: আবু
জাফর রনি জানান, গুলিটি নাঈমের হাটুর নিচে গুলি লাগে এবং গুলিটিে সেখানেই
রয়েছে। গুলির অংশে দুইটি হাড়ের মাথা ভাঙ্গা। তিনি এখন আমাদের হাসপাতালের
ক্যাজুয়ালটি বিভাগে ভর্তি আছে। আমরা চিকিৎসা দিচ্ছি।
মঙ্গলবার বিকেলে এ
বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সেখ ফজলে
রাব্বী কুমিল্লার কাগজকে জানান, নাঈমের গুলি বের করতে সময় লাগবে।
গুলিবিদ্ধ স্থানে স্যুয়েলিং (ফুলা) চলে গেলে এবং গুলি স্থির হয়ে গেলে বা
বসে গেলে তারপর অর্থোপেডিকস ডাক্তার এক্সরে করে নিশ্চিত হবেন। তারপর গুলি
বের করা হবে না সেখানে রেখে দিতে হবে তা সিদ্ধান্ত দিবেন। এছাড়াও তার হাটুর
নিচে দুটি হাড়ের কিছু অংশ ফেটে গিয়েছে। ফেটে যাওয়া অংশ সম্পূর্ণ সাড়তে সময়
লাগবে।
গুলিবিদ্ধ হয়ে হাসপাতালের আসার পর নাঈম একটি গণমাধ্যমকে
বলেছিলেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আন্দোলনে যোগ দিতে সোমবার বিকাল
তিনটার দিকে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট থেকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে
যাচ্ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়মুখী সড়ক দিয়ে যাওয়ার সময় হঠাৎ গুলির শব্দ শুনে
দৌড় দেন। কিছুদূর গিয়ে সড়কের পাশে পড়ে যান। গুলির শব্দে প্রথমে তিনি কিছুই
বুঝতে পারেননি। পরে বাঁ পা অবশ হয়ে গেলে তিনি সড়কের পাশে পড়ে গিয়ে জ্ঞান
হারান। পরে একটু জ্ঞান ফিরলে তিনি এক পায়ে ভর দিয়ে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায়
করে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। তারপর তাঁকে
চিকিৎসা দেওয়া শুরু হয়।
কিন্তু এরপর থেকে আর কোনো গণমাধ্যম কর্মীদের
সাথে কথা বলছেন না তিনি। পরে হাসপাতালের বারান্দায় নাঈমের মামা মনির হোসেন
রুবেল এই প্রতিবেদককে জানান, পলিটেকনিকের পাশেই তার বাসা। সে টিউশনি থেকে
বাসায় যাওয়ার সময় পলিটেকনিকের পাশে আন্দোলন চলছিল। আন্দোলনের পাশ দিয়ে
বাড়িতে যাচ্ছিলেন এমন সময় হঠাৎ সিএনজি থেকে কয়েকজন এসে এলোপাতারি গুলি করলে
তার পায়ে গুলি লাগে।
জানতে চাইলে কুমিল্লা সদর দক্ষিণ মডেল থানার ওসি
আলমগীর ভূইয়া বলেন, শিক্ষার্থী গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনাটি আমরা বিভিন্ন
মাধ্যমে জেনেছি। তবে এ বিষয়ে থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। অভিযোগ
পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।