গত একটি মাস অনেকটাই অনিশ্চিত অবস্থার মধ্য দিয়ে গেছে। প্রায় স্থবির ছিল সারা দেশ। ব্যবসা-বাণিজ্যে দেখা দেয় মন্দা। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক ক্যালেন্ডার ল-ভ-।
আগামী দিনের অর্থনীতির উদীয়মান বাঘ বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে দেশজুড়ে সৃষ্টি হওয়া অস্থিরতায় ক্ষুদ্র ব্যবসার উদ্যোক্তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। কারফিউয়ের কারণে চলাচল সীমিত হয়ে যাওয়ায় ব্যবসায়ীরা ক্রেতাদের কাছে পণ্য পৌঁছাতে পারেননি। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে নিত্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থা প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছিল।
অনলাইনভিত্তিক ব্যবসায়ীরা দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন। খুবই স্বল্প পরিসরে নিত্যপণ্য সরবরাহ করা হয়। উৎপাদন ও সরবরাহ প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় বাজারে খাদ্যপণ্য ও শাক-সবজির সংকট দেখা দেয়। যারা খাদ্য প্রক্রিয়াজাত করেন তাঁদের ব্যবসায় ক্ষতি হয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসার উদ্যোক্তারা বলছেন, গত সাত দিনে তাঁদের পাঁচ-সাত লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।
ইন্টারনেট ও ফেসবুক বন্ধ থাকায় দেশের অনলাইনভিত্তিক ব্যবসা খাতে গত ১৩ দিনে প্রায় এক হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)। সবচেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়েছেন ফেসবুকভিত্তিক এফ-কমার্স খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা। গত বুধবার রাজধানীর বনানীতে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব) কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়েছে, প্রথম ১০ দিনে এফ-কমার্স খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। ই-কমার্স খাতে ৪০০ কোটি, অনলাইনভিত্তিক পর্যটন (ই-ট্যুরিজম) খাতে ৩০০ কোটি ও অনলাইনভিত্তিক সরবরাহ (ই-লজিস্টিক) খাতে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
এফ-কমার্স খাতের ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অনেকেই ব্যবসা বন্ধ করে দেওয়া কিংবা কর্মীদের বেতন বন্ধের মতো বিভিন্ন সংকটে পড়েছেন। ইন্টারনেট সংযোগ ব্যাহত হওয়ায় বড় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি ফেসবুকনির্ভর ছোট উদ্যোক্তারাও ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সব মিলিয়ে এ খাতে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছে ই-ক্যাব। বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার অ্যান্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেস (বেসিস) এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছে, ইন্টারনেট সংযোগ বন্ধ থাকার কারণে পাঁচ দিনে সফটওয়্যার খাতের ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫০০ কোটি টাকার ওপরে।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন ফ্রিল্যান্সাররা। বর্তমানে বিজনেস প্রসেস আউটসোর্সিং, সফটওয়্যার তৈরি, ডিজাইনসহ নানামুখী কাজে যুক্ত প্রায় ছয় লাখ মানুষ। এ খাত থেকে বছরে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয় কমবেশি ২০০ কোটি ডলার। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই খাতে ২০০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুতে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়েছে। পরে সময়ে সময়ে তার নাম পরিবর্তন হয়েছে। ছাত্রদের নিরীহ নির্দোষ কর্মসূচিতে রাজনৈতিক অপশক্তির অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এরপর শুরু হয় সন্ত্রাস-নাশকতা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে ঢুকে দুর্বৃত্তরা সহিংস হয়ে ওঠে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। বহু স্থাপনা ও যানবাহনে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বাংলাদেশ টেলিভিশন, সেতু ভবন, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) প্রধান কার্যালয়, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, মিরপুরের পদচারী সেতু এবং বিভিন্ন জায়গায় পুলিশ বক্সে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে।
শান্তিপূর্ণ আন্দোলন শুরু করেছিলেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। কিন্তু সেই শান্তিপূর্ণ আন্দোলন হঠাৎ করে সহিংসতা ও সংঘাতে রূপ নেয়। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে ব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোতে ভাঙচুর করার পাশাপাশি আগুন লাগানো হয়। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আমরা আশা করব, উভয় পক্ষের শুভবুদ্ধির উদয় হবে। সন্ত্রাস-নাশকতা বন্ধ হবে।