কেউ
আনছেন রান্না করা খাবার, কেউবা শুকনো খাবার মুড়ি, চিড়া, গুড়, খেজুর
নিয়ে আসছেন। কারো হাতে জীবন রক্ষাকারী ঔষধ, পানিস বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট,
সেনেটারী ন্যাপকিনসহ জরুরী শিশু খাদ্য- বিশুদ্ধ পানি । কারো কারো ট্রাকে
নৌকা স্পিডবোট। সবাই ছুটছে বন্যা দুর্গত এলাকায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে। কেউ
আবার আশ্রয় কেন্দ্রের পাশেই রান্না করছেন খাবার। বন্যা কবলিত মানুষের মুখে
আহার যোগানোর চেষ্টা। সুস্থভাবে মানুষজনকে যেন উদ্ধার করা যায় তার
প্রচেষ্টা।
তবে এবার কুমিল্লায় বন্যার করাল গ্রাস এত বিস্তৃত যে
প্রতিদিনই নতুন নতুন এলাকা থেকে শোনা যাচ্ছে ত্রানের জন্য হাহাকার। তবে
যতটুকু পারা যাচ্ছে সবটুকু দিয়েই জীবন বাজি রেখে বন্যার্তদের পাশে
দাঁড়িয়েছে দলমত নির্বিশেষে হাজার হাজার তরুণ স্বেচ্ছাসেবী। বন্যা কবলিত
অপরিচিত এলাকায় ঝুঁকির মধ্যে এক মুহূর্তের জন্য থেমে নেই তরুণদের
স্বেচ্ছাশ্রম।
কুমিল্লার বুড়িচং, ব্রাহ্মণ পাড়া, চৌদ্দগ্রাম ও
নাঙ্গলকোট সহ চৌদ্দ উপজেলায় বন্যা আক্রান্তদের পাশে দাঁড়িয়েছে স্থানীয় ও
জেলার বাইরে থেকে আসা অন্তত হাজার স্বেচ্ছাসেবী দল।
কুমিল্লার বুড়িচং
উপজেলার হরিপুর গ্রামের শাহজাহানের মিয়ার ৯০ বছর বয়সীকে অসুস্থ মাকে উদ্ধার
করতে রওনা দেয় ডলফিন সুপার কিংস টীম। ঢাকা থেকে আসা এই টীমটির কাছে
বুড়িচং এলাকায় সম্পূর্ণ অপরিচিত হলেও শাহজান মিয়ার ডাকে সাড়া দিয়ে রওনা
দেন তারা। যাবার পথেই স্পিড বোটের পাখা পানিতে তলিয়ে থাকা রাস্তার সাথে
ধাক্কা খেয়ে বোটটি সম্পূর্ণ উল্টে যায়। পানিতে ছিটকে পড়েন টিমের সদস্যরা।
তারপরও মনোবল না হারিয়ে স্পিডবোট আবার ঠিক করে রওনা হন তারা। একে একে ওই
এলাকা থেকে শিশু বৃদ্ধ নারী পুরুষ মিলিয়ে মোট ১৩ জনকে উদ্ধার করে নিয়ে আসেন
তারা।
ডলফিন সুপার কিংসের সদস্য আশরাফুল আলম শিহাব জানান, স্পিড বোর্ড
থেকে পড়ে আমরা চার জন আহত হই। তারপর বোটের পাখা ঠিক করে উদ্ধারকৃতদের
বুড়িচং উপজেলার ভরাসারে। তখন আমাদেরকে আহত হয়েছে বিষয়টি মাথায় ছিল না -
সবার আগে কাজ করেছে মানুষকে উদ্ধার করতে হবে।
বাকশিমুল ইউনিয়নের
ইউনিয়নের উত্তর পাড়ায় চেয়ারম্যান বাড়ি আশ্রয় কেন্দ্রে অসুস্থ হয়ে পড়েন
৮০ বছর বয়সেই মাজেদা বেগম। বারবার সহযোগিতা চেয়েও পাওয়া যায়নি নৌকা ট্রলার।
দুর্গত এলাকায় ত্রান দিতে গিয়ে আশ্রয়কেন্দ্র থেকে মাজেদার পরিবারের ডাকে
ডলফিন সুপার কিংস টীম। রবিবার সকালে মাজেদা বেগম থেকে উদ্ধার করে উঁচু
জায়গায় এ্যাম্বুলেন্সে তুলে দেয়া হয়। মাঝপথে স্পিডবোটের জ্বালানি শেষ হয়ে
গেল থামেননি তারা।
গত ২৩ তারিখ রাত থেকে ঢাকার যাত্রাবাড়ীর এই
স্বেচ্ছাসেবী টীমটি নিজস্ব অর্থায়নে কাজ করছে বুড়িচং উপজেলার বন্যা দুর্গত
এলাকায়। প্রায় দুই হাজার প্যাকেট শুকনো খাবার দেয়ার পাশাপাশি ঢাকার এই
টিমটি অন্তত সাড়ে তিনশো মানুষকে উদ্ধার করেছেন বন্যা কবলিত এলাকা থেকে।
এমনই
ভাবে বন্যা কবলিতদের উদ্ধার এবং ত্রাণ তৎপরতা চালাতে জীবনবাজি রাখছেন
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা স্বেচ্ছাসেবীরা। দিন রাত এক করে নৌকা
স্পিডবোট নিয়ে কুমিল্লার বিভিন্ন এলাকা থেকে পানিবন্দীদের উদ্ধার করছেন এই
তরুনরা। স্বেচ্ছাসেবীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, কুমিল্লা ও বাইরের জেলা
থেকে আসা অন্তত ৩শ টি জান বিতরণ ও উদ্ধারকারী দল কাজ করছে বুড়িচং
উপজেলায়।
জানা গেছে, সব মিলিয়ে কুমিল্লায় অন্তত ১ হাজার স্বেচ্ছাসেবীদ
দল কাজ করছে ত্রাণ বিতরণ এবং উদ্ধার তৎপরতায়। যদিও অনেকের কাছে নৌকা
স্পিডবোট না থাকায় বেগ পেতে হয়েছে কার্যক্রম চালাতে। তবে বিভিন্ন এলাকায়
সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী এবং বিআইডব্লিউটিএ নৌকা ও স্পিডবোট সাহায্য করছে
স্বেচ্ছাসেবীদের।
স্বেচ্ছাসেবী টীম কুমিল্লার ফিউরিয়াস মটো ক্লাবের
সদস্য মালেক খসরু উষা জানান, আমরা ত্রাণ বিতরণের পাশাপাশি চিকিৎসা সেবা ও
উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এই বন্যায় বিভিন্ন এলাকা থেকে তরুণ
স্বেচ্ছাসেবকরা যেভাবে এগিয়ে এসেছে তা আসলেই গৌরবের। আমরা কুমিল্লার বাইরের
মানুষের সহযোগিতা পেয়ে সন্তুষ্ট।
এদিকে কুমিল্লায় বন্যা পরিস্থিতি
পরিদর্শনে এসে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জেনারেল অব. জাহাঙ্গীর আলম জানান,
স্বেচ্ছাসেবীদের ত্রাণ বিতরণ ও উদ্ধার তৎপরতায় সহযোগিতা করছে সেনাবাহিনী
পুলিশ বিজিবি সহ স্থানীয় প্রশাসন।