থামছে না পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রবণতা।
কোনোভাবেই পণ্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে জীবনযাত্রার
ব্যয় বেড়েছে। দেশের অর্থনীতি এখন উচ্চ মুদ্রাস্ফীতির চাপে আছে।
প্রায় সব
পণ্যের দাম বেড়েছে। সরকারের সামনেও বড় চ্যালেঞ্জ মূল্যস্ফীতি, যা দেশের
মানুষের জীবনযাত্রায় বড় প্রভাব ফেলছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরো কঠিন
করে তুলছে। কোনো কোনো পণ্যের দাম বাড়ে কারণ ছাড়াই।
বাজার স্থিতিশীল
হচ্ছে না। ভোক্তার অস্বস্তি কাটছে না। বাজার সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে
থাকছে না। মূল্যস্ফীতির কারণে নিম্ন আয়ের মানুষ প্রচণ্ড চাপের মধ্যে রয়েছে।
দেশে
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের, বিশেষ করে কৃষিপণ্যের পর্যাপ্ত উৎপাদন, মজুদ এবং
নিরাপদ ও অবাধ পরিবহন নিশ্চিত করা দরকার। এবারের বন্যায় সেটা বিঘ্নিত
হয়েছে। বন্যার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
আমদানি-রপ্তানি পণ্য পরিবহনে অচলাবস্থা কাটছে না। বিপুলসংখ্যক কনটেইনার
মহাসড়কে আটকে থাকছে।
ফলে পুরো সরবরাহব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। বন্যার
পানি কমতে থাকায় সীমিত পরিসরে গাড়ি চলতে থাকলেও এখনো মহাসড়কে পণ্যবাহী কয়েক
হাজার কনটেইনার আটকে রয়েছে। এর প্রভাবে সময়মতো রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার
বন্দরে পৌঁছাতে পারছে না। আবার আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার গন্তব্যে
পৌঁছাতেও বিলম্ব হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের লিড
টাইম বাড়ছে, অন্যদিকে আমদানি করা নিত্যপণ্যের সরবরাহ কমে বাড়ছে এর দামও।
পণ্য পরিবহন খরচ বেড়েছে চার গুণ। এ অচলাবস্থার কারণে খাতুনগঞ্জে লেনদেন
কমেছে অন্তত ৭০ শতাংশ। বন্দরে তৈরি হওয়া কনটেইনারজটও খুলছে না। এই বিষয়টিও
সরকার গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। গত মঙ্গলবার রাজধানী ঢাকার আগারগাঁওয়ে এনবিআর
ভবনে কর্মকর্তাদেরর সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা প্রসঙ্গে অর্থ
উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, বেসরকারি খাতে পণ্য খালাস নিয়ে অনেক
জটিলতা আছে। বন্দরে দ্রুত পণ্য খালাসের ব্যবস্থা করতে হবে। বিল অব
ল্যান্ডিং, বিল অব এক্সপোর্ট সময়মতো হতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বাধা
থাকবে না। এ সময় নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের শুল্কহার কমিয়ে আনলে তাতে
রাজস্ব আদায়ে কতটুকু প্রভাব পড়বে সে বিষয়ে জানতে চেয়েছেন উপদেষ্টা।
উৎপাদন
ও সরবরাহ পরিস্থিতির উন্নয়নের ব্যবস্থা গ্রহণের কোনো বিকল্প আছে বলে মনে
হয় না। আমদানি বৃদ্ধি এবং শুল্ক হ্রাস মূল্য হ্রাসে সহায়ক ভূমিকা রাখতে
পারে। তবে যেকোনো পণ্য ভোক্তার ক্রয়ক্ষমতার বাইরে চলে গেলে ভোক্তা সে পণ্য
ক্রয় থেকে বিরত থাকে বা ক্রয়ের পরিমাণ হ্রাস করে। আবার কেউ কেউ বিকল্প পণ্য
ক্রয় করে প্রয়োজন মেটায়। এর পাশাপাশি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কম খরচে
স্বল্প জমিতে অধিক পণ্য উৎপাদনে গুরুত্ব দিতে হবে। উৎপাদনশীলতা বাড়ানোর
কোনো বিকল্প নেই।
নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখতে পারলে কেউ কারসাজি করতে
পারবে না। কাজেই বাজারে সরবরাহ বাড়াতে হবে। সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারলে
বাজারে পণ্যমূল্যের ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না।