আনোয়ারা বেগমের বয়স ৭০ পার হয়েছে। বন্যার পানিতে ডুবে গেছে বাড়িঘর। রান্নাঘর ও টিউবওয়েলও ডুবে গেছে। চুলায় রান্না হয়না ৮দিন। মানুষের দেয়া শুকনা মুড়ি-চিড়া গুড় খেয়ে কোন রকম দিন পার করছেন তিনি। তাঁর মত অবস্থা একই বাড়ির ওয়াহেদা বেগম ও শিরিনা বেগমেরও। গত ৭ দিন ধরে পানিবন্দি তাঁরা। তাঁরা সবাই ফতেহাবাদ ইউনিয়নের দক্ষিণ সাইচাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
গত বুধবার দুপুরে ওই গ্রামে গিয়ে দেখা গেছে, ত্রানের জন্য ঘরের দরজায় বসে অপেক্ষা করছে বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম। ঘরের ভিতরের কিছু মালামাল চৌকির ওপর বস্তায় রাখা। উঠানে হাটু সমান পানি। পানি স্রোতে টিনের ঘরের এক অংশ হেলে পড়েছে পুকুরের দিকে। যে কোন সময় ধসে পড়তে পারে। রান্না ঘরের চুলায় পানি ভর্তি। টিউবওয়েলের বেশ অর্ধেক ডুবে আছে বন্যার পানিতে।
আনোয়ারা বেগম বলেন, বাইত ৮দিন ধরে পানি। ঘরে রান্না হয় না, দরজায় বইস্যা রইছি, কেউ যদি বিরানি দেয় হেল লাইগ্যা। হ¹লে মুড়ি-চিড়া বিস্কিট দেয়, এগুলো কতক্ষণ চাবান যায়, দাঁতেও আর ধরে না। আমরা বুঁড়া মানুষ ভাত খাইতে পারলে জীবনডা বাঁচে। তিনি আরও বলেন, আমার দুইডা ছেলে আছে, একজন সিএনজি চালায় আর একজন সিএনজি’র ম্যাইকার (ম্যাকানিক)। তাঁরাও এহন কাজ কামে যাইত পারে না। এহন দু:চিন্তা পানি কমলে ঘরের তো পইরা যাইব ‘‘অ বাজান আমারে এক বান টিনের ব্যবস্থা কইরা দেন না’’ এক বান টিন অইলে আমার ঘরটা ঠিক করন যাইব। এই প্রতিবেদকের কাছে অনেকটা আকুতি স্বরেই কথাগুলো বলছিলেন বৃদ্ধা আনোয়ারা বেগম।
ওয়াহেদা বেগম বলেন, ঘরের ধান-চাল-ডাইল সব ভিজ্জা গেছে। কোন কিছু বাহির করতে পারি নাই, এহন অসহায় অবস্থা ঘরে পইড়া আছি, যারা আশ্রয় কেন্দ্রে উঠছে মানুষ তারারে অনেক কিছু দেয়। বাড়ি ঘরের ভিতরে কেউ আসে না। আমি কয়েক বার রাস্তার গিয়ে দাঁড়াই ছিলাম, রাস্তা ডুবে যাওয়ায় এদিকে কোন ত্রানের গাড়ি আসতে পারে না। সকালে কিছু লোক চিড়ি-মুড়ি বিস্কিট দিয়া গেছে। এগুলো কোন রকম চাবাইয়া খাই।
পথে দেখা হয় বৃদ্ধ ওসমান গনির সাথে। তাঁর বাড়ি ঘরের অবস্থা জানতে চাওয়ায় তিনি কথা বলতে গিয়ে কেঁদেই ফেলেছেন। ‘ঘরে হাটু সমান পানি’ বাহিরে ঘুরাঘুরি করতাছি’ কেউ কোন ত্রান দিচ্ছে না’ দূর থেকে দেখছি একটা ত্রানের গাড়ি থামানো। কোমর সমান পানি দিয়ে গাড়ির কাছে আসছি ভাবছি খুঁজলে হয়তো এক প্যাকেট দিবে। আপনি একটু সুপারিশ করে বলেন না আমাকে এক প্যাকেট ত্রান দিতে। ওসমান গনিও অনেকটা আকুতি করে কথাগুলো বলছিলেন। পরে তিনি লুঙ্গির গোছ থেকে ১০০ টাকা বের করে বলছেন ‘আমার কাছে ১০০ টেহা আছে আরও ১০০ টেকা হলে আমি কিছু কিনে বাড়ি যাইতে পারমু, ঘরের সবাই না খাইয়্যা আছে।
এ বিষয়ে ফতেহাবাদ ইউপি (ভারপ্রাপ্ত) চেয়ারম্যান সালাউদ্দিন রহুল বলেন, ফতেহাবাদ ইউনিয়ন দেবিদ্বার উপজেলার একটি বড় ইউনিয়ন। এখানের ১৮টি গ্রামই বন্যার পানিতে প্লাবিত। সবগুলো গ্রামে শুকনো খাবারের পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে চাল দেয়া হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক সংঠনের পক্ষ থেকে প্রচুর খাবার দেয়া হচ্ছে। পানিবন্দি যতগুলো ঘর আছে প্রত্যেকটি ঘরেই ত্রান পৌছানো হবে। রাস্তাঘাট ভাঙা পানি থাকায় যানবাহন সমস্যার কারণে সঠিক সময়ে অনেকটা সমস্যা হচ্ছে।