চোখের
সামনে ঘরবাড়ি- স্কুল- বই খাতা বানের জলে ভেসে যাচ্ছে দেখে আসা আশ্রয়
কেন্দ্রে থাকা শিশুরা ভুগছে বিষন্নতায়। দীর্ঘ সময় খেলাধুলা ও হাঁটা
চলাফেরার পর্যাপ্ত জায়গা না পাওয়ায় মন খারাপ হয়ে আছে তাদের। কেউ কেউ
বাড়িঘরে ফেরা নিয়ে মন ভার করে রেখেছে। একটানা শুকনো খাবার আর প্যাকেট
খিচুরি খেতে খেতে তারা যেন ক্লান্ত।
বুড়িচং উপজেলার ভরাসারে সোনার
বাংলা কলেজ আশ্রয় কেন্দ্রে গত ৮ দিন ধরে আছে ৭ বছর বয়সী আবু বকর। স্থানীয়
এক মাদ্রাসায় কে জি তে পড়ে সে। গত শুক্রবার উপজেলার বাকশীমুল ইউনিয়নের
ইছাপুরা গ্রামে তাদের বাড়ি তলিয়ে যায় গোমতীর বানের ঢলে। বাবা- মা ছোট বোনকে
নিয়ে এখন আশ্রকেন্দ্রে আছে তারা।
আবু বকর জানায়, তার বাড়ির জন্য মন
খারাপ। বই খাতা, খেলার ক্রিকেট ব্যাট- বল সব পানির নিচে। আশ্রয়কেন্দ্রতে এক
জায়গায় থেকে থেকে বিরক্ত লাগছে।
আবু বকরের মা মরিয়ম আক্তার জানান,
ছেলেটা শুধু জিজ্ঞেস করে কবে বাড়ি যাবো। কবে পানি নামবে - আমি তো ছেলেটারে
কিছু বলতে পারি না। বাড়ির নাকি চালা সমান পানি।
একই আশ্রয়কেন্দ্রে
পরিবারের সাথে উঠেছে বাকশীমুল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির
শিক্ষার্থী সুমাইয়ার। আশ্রয়কেন্দ্রের বারান্দা থেকে তার গ্রামের দিকে
তাকিয়ে থাকে সুমাইয়া। আশ্রয়কেন্দ্রের রুম থেকে বারান্দা এর বাইরে যাওয়ার
তেমন সুযোগও নেই।
সুমাইয়া জানায়, বাড়িতে আমাদের সব আছে। এখন সব পানির
নিচে।রাতে পানি উঠেছে বাড়িতে, তেমন কিছুই নিয়ে আসতে পারি নি। আমার হাঁস
মুরগী গুলোও মনে হয় ভেসে গেছে। এখানে টুল টেবিলের উপর থাকতে আর ভালো লাগছে
না।
আশ্রয়কেন্দ্রটি সম্পূর্ণ তত্ত্বাবধান করছেন সোনার বাংলা কলেজের
অধ্যক্ষ সেলিম রেজা সৌরভ। তিনি জানান, বন্যার ভয়ংকর রূপ দেখে এসেছে শিশুরা।
তাদের চোখের সামনেই তলিয়ে গেছে ঘরবাড়ি স্কুল মাদ্রাসা। এর একটা প্রভাব
তাদের উপর পড়ছে। এখন অবিভাবকদের সচেতন থাকতে হবে - সকল কষ্টের মাঝেও যেন
শিশুরা একটু হলেও হাসে।
কুমিল্লায় সাম্প্রতিক বন্যায় ১৪ জনের মৃত্যু
হয়েছে। জেলা ত্রান ও ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মোঃ আবেদ আলী বিষয়টি নিশ্চিত
করেন। যদিও বেসরকারি হিসেবে এই সংখ্যা ১৯। এর মধ্যে শিশুর সংখ্যা অন্তত ছয়
জন।
বন্যার পানিতে ডুবে, পানিবন্দি বাড়িঘর ও আশ্রয় কেন্দ্রের চিকিৎসার
অভাবে, ভাসমান মরদেহ উদ্ধার এবং বিদ্যুৎস্পৃষ্ট ও সাপে কাটার কারণে
মৃত্যুর সংখ্যা ধরা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা
মোহাম্মদ আবেদ আলী জানান, গোমতির ভাঙ্গা বাঁধ মেরামতে সমন্বিতভাবে কাজ করবে
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সেনাবাহিনী। এখনো পর্যন্ত কুমিল্লা জেলাজুড়ে ১২৫ টি
ইউনিয়ন বন্যায় প্লাবিত হয়েছে। অন্তত ১২ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়েছে ।
জেলাজুড়ে ৭২৪ টি আশ্রয় কেন্দ্রে প্রায় ৮০ হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছে। এই
ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা ও বন্যায় পানিবন্দিদের পানি বাহিত রোগে আক্রান্ত
বয়স্ক ও শিশুদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করার জন্য ২০৭টি মেডিকেল টিম গঠন করা
হয়েছে।