বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪
৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
কুমিল্লায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত
কয়েক হাজার কোটি টাকার ক্ষতির শঙ্কা
জহির শান্ত, কুমিল্লা
প্রকাশ: সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:৫৫ এএম আপডেট: ০৩.০৯.২০২৪ ২:১৬ এএম |

কুমিল্লায় ভেসে উঠছে বন্যার ক্ষত
স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত হয়েছে কুমিল্লার ১৪ উপজেলা। দীর্ঘ ১৩ দিনেরও বেশি সময় পর ধীরে ধীরে কমতে শুরু করেছে পানি। দৃশ্যমান হতে শুরু করেছে রাস্তাঘাট। বাড়ির আঙ্গিনা থেকে পানি সরে যাওয়ার পর অনেকেই ফিরতে শুরু করেছেন বাড়ি-ঘরে। আর এরই মাঝে ভেসে উঠতে শুরু করেছে বন্যার ক্ষত। চারিদিকে ছড়িয়ে পড়েছে পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব। এবারের বন্যায় প্লাবিত কৃষিখাত, মাছের ঘের, প্রাণী সম্পদ, রাস্তাঘাট ও ক্ষতিগ্রস্ত ঘরবাড়ি মিলিয়ে কুমিল্লাজুড়ে অন্তত ৩ হাজার কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। 
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে।
জানা গেছে, গত ২০ আগস্ট থেকেই কুমিল্লার বিভিন্ন উপজেলা বন্যায় প্লাবিত হতে থাকে। এরপর সময় যতো গড়িয়েছে বন্যার ভয়াবহতাও ততোই বেড়েছে। এরই মধ্যে ২২ আগস্ট রাত সাড়ে ১১টায় কুমিল্লার কোল ঘেঁষে বয়ে চলা গোমতী নদীর বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এরপর একে একে জেলার ১৭ উপজেলার মধ্যে ১৪ উপজেলায়ই প্লাবিত হয়ে যায়। তলিয়ে যায় মানুষের ঘরবাড়ি, বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা। দিশেহারা মানুষজন সহায় সম্বল হারিয়ে ঘর ছেড়ে আশ্রয় নেয় আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি কিংবা আশ্রয় কেন্দ্রে। অনেককে নদীর পাড়ে খোলা আকাশের নিচেও বসবাস করতে েেদখা যায়।
জানা গেছে, এবারের বন্যায় শুরুতেই ধাক্কা আসে মৎস্য খাতে। জেলা মৎস্য কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে। চলমান বন্যায় জেলার মোট ২৩ হাজার ৪২টি খামার বা পুকুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আয়তনে যা ৫ হাজার ৮৩৫ দশমিক ৬১ হেক্টর।ক্ষতিগ্রস্ত এসব খামার থেকে ২৫ হাজার ৫৩৮ দশমিক ৫০ টন ফিন ফিশ, ১০ দশমিক ২৮ টন চিংড়ি, ১০ কোটি ১৭ লাখ সংখ্যক পোনামাছের ক্ষতি হয়েছে। বাজার মূল্যে হিসেবে, মাছে ৩৫৮ কোটি ১২ লাখ টাকা, চিংড়িতে ৫ কোটি টাকা, ১৭ কোটি ৮ লাখ ৯২ হাজার টাকার পোনা জাতীয় মাছের ক্ষতি হয়েছে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. বেলাল হোসেন জানন, এবারের বন্যায় জেলাজুড়ে মৎস্য খাতে অন্তত ৫ শ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতির একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। বানের পানি নেমে গেলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে নিরূপণ করা যাবে।
অপরদিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে জেলাজুড়ে কৃষিতে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে। রোপা আমনের বীজতলা, রোপা আমন, শাক-সবজি, রোপা আউশ, রোপা আমন ও আখের উল্লেখযোগ্য ক্ষতি হয়েছে। কুমিল্লা জেলায় আবাদ করা জমির পরিমাণ এক লাখ ৩৫ হাজার ২৩৮ হেক্টর। যার মধ্যে ৬৩ হাজার ৯৭৪ হেক্টর জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যা টাকার অঙ্কে সাড়ে ৮ শ’ কোটি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর কুমিল্লার উপ-পরিচালক আইউব মাহমুদ বলেন, এবারের বন্যায়জেলার কৃষক প্রচুর ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। আমরা এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে কৃষি প্রণোদনা, বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ,ক্ষুদ্র ঋণ নেওয়ায় সহায়তা, বিনামূল্যে কৃষিসেবা ও সার্বিক সহযোগিতা করবো। 
এদিকে এবারের বন্যায় ১৪ উপজেলায় কৃষি ও মৎস্য খাতের পাশাপাশি প্রাণিসম্পদেরও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্র বলছে, প্রাথমিক তথ্যে এই খাতে মোট ক্ষতি ৩০০ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যা আরও বাড়তে পারে। 
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা চন্দন কুমার পোদ্দার বলেন,এবারের ভয়াবহ বন্যা অতীতের যেকোনো ক্ষতিকে ছাড়িয়ে গেছে। জেলাজুড়ে ৪ হাজারেরও বেশি  গবাদিপশুর খামার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২ লাখ ৯ হাজার বিভিন্ন শ্রেণির গবাদিপশু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তার মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত গরুর সংখ্যা ১ লাখ ২০ হাজার, ১৬টি মহিষ, ৩০ হাজার ছাগল, প্রায় ৭০০ ভেড়া। মারা গেছে ৩৫টি গরু, তিনটি মহিষ, ১৭১টি ছাগল এবং সাতটি ভেড়া।  এছাড়া ২ হাজার ২১৮টি খামারে ১৩ লাখ ৬৬ হাজার হাঁস-মুরগি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মারা গেছে ১০ লাখ ২২ হাজার মুরগী এবং ২ সহস্রাধিক হাঁস। নষ্ট হয়েছে বিপুল পরিমাণ পশু ও হাঁস-মুরগীর খাবার। এখন আমরা একটি প্রাথমিক তালিকা তৈরি করেছি। বন্যার পানি নেমে গেলে সম্পূর্ণ ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে পরবর্তীতে জানানো হবে।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, বন্যায় অসংখ্য মানুষের ঘরবাড়ি তলিয়ে গেছে, ভেঙ্গে গেছে। অনেকের গোয়ালের গরু মারা গেছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে নষ্ট হয়েছে। সরকারি অনেক অবকাঠামো বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মাছের ঘের ভেসে গেছে, খামার ডুবে গেছে, কৃষিজমি শেষ হয়ে গেছে। এসব মিলিয়ে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকার মতো ক্ষতি হতে পারে।
ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবেদ আলী বলেন, এবারের বন্যায় ক্ষতি আমাদের ধারনার থেকে বেশিও হতে পারে। এখনই নিশ্চিতভাবে আমরা কোনও পরিসংখ্যান করিনি। দুর্যোগ শেষ হলে আমরা পরিদর্শন ও সংশ্লিষ্ট কার্যালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে তা নিরূপণ করবো।














সর্বশেষ সংবাদ
ড. ইউনূসের ৬ মামলা বাতিল
ব্যারিস্টার সুমন ২ দিনের রিমান্ডে
কমলাপুর থেকে ছাড়ছে না কোনো ট্রেন, যাত্রীদের ভোগান্তি
থানায় মামলা দিতে গিয়ে শাহজাহান ওমর গ্রেফতার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা টাউন হলের সকল কমিটি বাতিল
কুমিল্লায় চার জনের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুদক
এক ঘন্টা পরে ডিউটিতে এসে দুই ঘন্টা আগে চলে যান চিকিৎসকরা
২৪ সেনার দেহাবশেষ সরিয়ে নিচ্ছে জাপান
ইপিজেডের বর্জ্য শোধনাগার কার্যক্রমের বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২