কেউ
দুনিয়া থেকে বিদায় নিলে স্বাভাবিকভাবেই তার পরিবার, আত্মীয়-স্বজনরা
স্বাভাবিকভাবেই শোকাকুল হয়ে পড়েন। তখন অন্যদের কর্তব্য তাদের দেখতে যাওয়া,
সান্ত্বনা দেওয়া, তাদেরকে শোক কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করা।
নবিজির
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) জীবন থেকে আমরা এই কর্তব্য পালনের শিক্ষা
পাই। কোনো বাড়িতে কেউ মারা গেলে নবিজি (সা.) তার বাড়িতে যেতেন, মৃতের পাশে
বসে তার জন্য দোয়া করতেন। মৃতের পরিবারকেও তার জন্য দোয়া করতে বলতেন,
ধৈর্য ধারণ করা ও আল্লাহর ওপর ভরসা করার উপদেশ দিতেন এবং আল্লাহর কাছে
উত্তম প্রতিদানের জন্য দোয়া করতে বলতেন। শোকগ্রস্ত অবস্থায় বিলাপ করতে বা
খারাপ কিছু চাইতে নিষেধ করতেন।
সাহাবি আবু সালামার (আ.) ওফাতের পর নবিজি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তাকে দেখতে তার বাড়িতে যান এবং তার জন্য
দোয়া করেন। ঘটনাটি বর্ণনা করে তার স্ত্রী উম্মে সালামা (রা.) বলেন, আবু
সালামর ওফাতের পর আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাদের
বাড়িতে এলেন। আবু সালামার কাছে এসে তিনি দেখলেন যে, তার দুই চোখ খুলে আছে।
তিনি তার চোখ বন্ধ করে দিলেন। তারপর বললেন, যখন রুহ কবজ করে নেয়া হয় তখন
চোখ রুহের অনুগামী হয়।
ওই সময় তার পরিবারের কয়েকজন চিৎকার করে কেঁদে
উঠলে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বললেন, তোমরা নিজের জন্য যা
কল্যাণকর, শুধু সেটাই চাও। কারণ তোমরা যা বল তার জন্য ফেরেশতারা এ সময়
আমিন, আমিন বলতে থাকেন।
তারপর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দোয়া
করলেন, হে আল্লাহ আবু সালামাকে ক্ষমা করুন এবং হেদায়াতপ্রাপ্তদের মধ্যে তার
মর্যাদা উঁচু করে দিন। আপনি তার বংশধরদের অভিভাবক হয়ে যান। হে রাব্বুল
আলামিন তাকে ও আমাদেরকে ক্ষমা করে দিন। তার কবরকে প্রশস্ত করুন এবং তা
আলোকজ্জ্বল করে দিন। (সহিহ মুসলিম: ৯২০)
আরেকটি বর্ণনায় উম্মে সালামা
(রা.) বলেন, আমি আল্লাহর রাসুলকে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলতে
শুনেছি যে, কোনো মুসলমান যখন কোনো বিপদে পড়ে, তখন সে যদি আল্লাহর নির্দেশ
অনুযায়ী ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাহি রাজিউন’ বলে দোয়া করে, হে আল্লাহ!
আমাকে বিপদে ধৈর্য ধারণের সাওয়াব দান করুন এবং এর উত্তম বদলা দান করুন।’
তাহলে আল্লাহ তাকে উত্তম বদলা দান করেন। (সহিহ মুসলিম: ১৯৯৮)
এ ছাড়া
মৃতের শোকাকুল পরিবার-পরিজনের জন্য খাবার পাঠানোও নবিজির সুন্নত। মুতা
যুদ্ধের ময়দান থেকে হজরত জাফরের (রা.) শাহাদাতের খবর এলে নবিজি
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার পরিবারের জন্য খাবার পাঠিয়েছিলেন।
আবদুল্লাহ ইবনে জাফর (রা.) থেকে বর্ণিত, যখন জাফরের (রা.) মৃত্যুর খবর এলো,
নবিজি (সা.) বললেন, জাফরের পরিবারের জন্য খাবার তৈরি করো। তাদের কাছে এমন
দুঃসংবাদ এসেছে, যা তাদের ব্যস্ত করে রাখবে। (সুনানে আবি দাউদ: ৩১৩২)
মৃত
ব্যক্তিকে গোসল করানো ও কাফন পরিধান করানোও সওয়াবের কাজ। সম্ভব হলে এ সব
কাজেও মৃতের পরিবারকে সাহায্য করা উচিত। মৃতের জানাজা ও দাফনে অংশগ্রহণ করা
মুসলমান হিসেবে মৃত ব্যক্তির হক। মৃতের আত্মীয়-স্বজনের জন্যও তা
সান্ত্বনার মাধ্যম হয়। রাসুল (সা.) বলেন, এক মুসলিমের ওপর অপর মুসলিমের হক
পাঁচটি: সালামের জবাব দেওয়া, অসুস্থ হলে দেখতে যাওয়া, তার জানাজার সঙ্গে
যাওয়া, দাওয়াত কবুল করা এবং তার হাঁচির জবাব দেওয়া। (সহিহ বুখারি: ১২৪০,
সহিহ মুসলিম: ২১৬২)