মায়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত ১১
লাখের বেশি রোহিঙ্গা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এই রোহিঙ্গাদের
নিজ দেশ মায়ানমারে ফেরত পাঠানোর জন্য বাংলাদেশ নানাভাবে জাতিসংঘসহ
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চেয়ে আসছে। কিন্তু প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে
বাস্তব কোনো অগ্রগতি এখন পর্যন্ত হয়নি বললেই চলে। অন্যদিকে উদ্বাস্তু
রোহিঙ্গাদের জন্য জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সংস্থার খাদ্য সহায়তাসহ অন্যান্য
সহায়তা ক্রমেই কমছে।
এই অবস্থায় গত কয়েক দিনে নতুন করে আরো প্রায় আট
হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র
উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি জানান, নতুন করে আর কোনো রোহিঙ্গাকে
অনুপ্রবেশ করতে দেওয়া হবে না-এটি নীতিগত সিদ্ধান্ত। বিষয়টি নিয়ে দু-তিন
দিনের মধ্যেই উপদেষ্টা পরিষদে আলোচনা করা হবে।
রোহিঙ্গা সমস্যা ক্রমেই জটিল হচ্ছে।
ক্যাম্পের
ঘিঞ্জি পরিবেশে তারা অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। নিজেদের মধ্যে খুনাখুনির ঘটনা
বাড়ছে। বহু রোহিঙ্গা ক্যাম্প ছেড়ে দেশের অন্যান্য জায়গায় ছড়িয়ে গেছে। জানা
যায়, নিবন্ধিত ১১ লাখ ১৮ হাজার রোহিঙ্গার মধ্যে বর্তমানে হদিস আছে ৯ লাখেরও
কম রোহিঙ্গার।
রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধচক্রের সঙ্গেও জড়িয়ে পড়ছে। মাদক
ও অস্ত্র চোরাচালানের মতো ভয়ংকর অপরাধেও তাদের সম্পৃক্ত থাকার তথ্য পাওয়া
যায়। বিপুল পরিমাণ রোহিঙ্গা উপস্থিতির কারণে কক্সবাজারের স্থানীয়
অধিবাসীদের জীবনেও নেমে এসেছে এক দুর্বিষহ অবস্থা। স্থানীয় অপরাধীদের সঙ্গে
মিশে অনেক রোহিঙ্গা চুরি, ডাকাতি, খুন, অপহরণসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে গেছে।
অনেক রোহিঙ্গা বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশি সেজে বিদেশে গিয়ে
বাংলাদেশের শ্রমবাজারের ক্ষতি করছে।
জঙ্গিবাদের সঙ্গেও তাদের একটি অংশের
সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে। ফলে রোহিঙ্গারা আজ বাংলাদেশের জাতীয়
নিরাপত্তার জন্যও হুমকি হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে আরো রোহিঙ্গার
অনুপ্রবেশ অনেক বেশি উদ্বেগের কারণ।
মায়ানমারের আগের প্রশাসনের সঙ্গে
রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে গেলেও সেখানে সামরিক
বাহিনী ক্ষমতায় আসার পর সে আলোচনা থমকে যায়। নতুন করে শুরু হয় আলাপ-আলোচনা।
বর্তমানে মায়ানমারজুড়ে জাতিগত সংঘাত, সহিংসতা এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে
সেখানকার সামরিক সরকারের ভবিষ্যৎ ক্রমে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। বিদ্রোহী গোষ্ঠী
আরাকান আর্মি আরাকান রাজ্যের একটি বড় অংশ নিজেদের দখলে নিয়েছে। রোহিঙ্গারা
মূলত এই আরাকানেরই বাসিন্দা। তাই আরাকানে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তনের
বিষয়টি এখন সামরিক সরকারের নিয়ন্ত্রণে নেই বলেই ধরে নেওয়া যায়। ফলে
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের কিভাবে দ্রুত মায়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়, সে
ব্যাপারে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে হবে।
বাংলাদেশ
পৃথিবীর সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ দেশগুলোর একটি। বেকারত্ব আকাশচুম্বী।
অর্থনৈতিকভাবেও যথেষ্ট সমৃদ্ধ নয়। বাংলাদেশে ১১ লাখ রোহিঙ্গাকে স্থায়ীভাবে
রেখে দেওয়া কি আদৌ সম্ভব? তদুপরি রোহিঙ্গা সমস্যা এরই মধ্যে বাংলাদেশের
জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও হুমকি হয়ে উঠেছে। তাই দ্রুত এর সমাধান প্রয়োজন।
আমরা আশা করি, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে
আন্তরিক হবে এবং তাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করবে।