বৃহস্পতিবার ২১ নভেম্বর ২০২৪
৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনে সহযোগিতায় সবাই এগিয়ে আসতে হবে
অধ্যক্ষ মহিউদ্দিন লিটন
প্রকাশ: শনিবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ১:৩৩ এএম আপডেট: ০৭.০৯.২০২৪ ২:৩২ এএম |

 বন্যা-পরবর্তী পুনর্বাসনে সহযোগিতায়  সবাই এগিয়ে আসতে হবে

আমাদের বাংলাদেশ প্রতি বছরই কোন না কোন জেলায় নানান দুর্যোগের সম্মুখীন হয়। বিশেষ করে বর্ষা মৌসুমে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মানুষ বন্যার মুখোমুখি হয়। কয়েক দিনের ভারী বর্ষণেও ভারতের পানির  স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে দেশে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৬৭ জনে দাঁড়িয়েছে। সবচেয়ে বেশি মারা গেছে ফেনীতে ২৬ জন। বন্যায় প্লাবিত উপজেলা ৬৮টি। ক্ষতিগ্রস্ত ৫০৪টি ইউনিয়ন ও পৌরসভা। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সংখ্যা ৫১ লাখ ৮ হাজার ২০২ জন। সার্বিকভাবে দেশের বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে লোকজন নিজ নিজ বাড়িঘরে ফিরছেন। বন্যা-পরবর্তী পানিবাহিত রোগের প্রাদুর্ভাব রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ও ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের পুনর্বাসন প্রক্রিয়ায় সরকারও সর্বসাধারণ এগিয়ে আসতে হবে ।
অনেক পরিবার বন্যায় বিপদগ্রস্থ এই পরিস্থিতি দেখে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় আপামর জনতা। এ সময় সাধারণ মানুষ, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা, রাজনৈতিক সংগঠন, ব্যবসায়ী সংগঠন, সামাজিক সংগঠন, স্বেচ্ছাাসেবী সংগঠনসহ বিপুল পরিমাণ মানুষ খাদ্য সামগ্রী নিয়ে বন্যার্তদের মাঝে পৌছে দেয়। এ ছাড়াও বিভিন্ন  সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীগণ তাদের সাধ্যমতো খাদসামগ্রী দিয়ে সহযোগিতা করেন। এতে বন্যায় বিপদগ্রস্থ মানুষ প্রাথমিক ধাক্কা সামাল দিতে পারে।
 বন্যার্ত এলাকায় আস্তে আস্তে বন্যার পানি কমতে শুরু করে। ফলে মানুষ আশ্রয় কেন্দ্র ছেড়ে নিজ বাসভূমিতে ফিরতে শুরু করে। বন্যা পরবর্তী এলাকায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো পুর্নবাসন প্রক্রিয়া। কারণ পানি কমে গেলে মানুষ তাদের সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দেয়। তখন বন্যার্ত মানুষের খোঁজ রাখে না। এমন কিছু এলাকা আছে ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। তারা পর্যাপ্ত ত্রাণ ও খাদ্য সামগ্রী পেয়েছে। কিন্তু তাদের এখন দরকার আবাসন। আর এই দুঃসময়ে অনেক মানুষের সামর্থ্য নেই পুনর্বাসন করা। কুমিল্লা জেলার বুড়িচং উপজেলার বুড়[বুড়িয়ার গোমতি বেড়ি বাঁধ ভেঙে যাওয়ায়। ঐ এলাকার পাকা ঘর ছাড়া অধিকাংশ মানুষের ঘরবাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। এখন তাদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করার দরকার।
বন্যা-পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া বেশ জটিল হলেও দ্রুত শুরু করতে হবে। কারণ পুনর্বাসন অনেকগুলো ধাপে-বিভক্ত থাকে। তবে মানুষের মৌলিক চাহিদা পূরণ করা জরুরি। এরপর অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রয়োজন। বন্যার পানিতে সড়ক, সেতু, এবংঅন্যান্য মৌলিক অবকাঠামো ভেঙে যায়। যোগাযোগ ব্যবস্থা মানুষের জীবনে অবিচ্ছেদ্য অংশ। তাই  রাস্তাঘাট সংস্কার করা প্রয়োজন। বন্যা- ফসল নষ্ট হয়ে গেছে তাই কৃষি জমি পুনর্গঠন করতে হবে।মনে রাখতে হবে, দিন এনে দিনে খাওয়া প্রান্তিক কৃষকরা এখন সহায়- সম্বলহীন। তাদের হাতে বীজ ও ক্ষুদ্রঋণ তুলে দিয়ে প্রাথমিক পুনর্বাসনের কাজ শুরু করা যেতে পারে। তাছাড়া বন্যাপরবর্তী সময়ে কৃষিকাজ শুরু করার প্রশ্নে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা দেখা দিতে পারে। যেমন পোকামাকড়[ বেড়ে যেতে পেতে পারে। এসব ক্ষেত্রে বন্যাদুর্গত অঞ্চলে কৃষি পরামর্শ কেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম বৃদ্ধি করতে হবে। অবস্থা বিবেচনায় সরকারকে প্রয়োজনে ভর্তুকি দিতে হবে। এই আকস্মিক বন্যায় বেশির ভাগ মানুষ কোনো রকমে জীবন নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্রে উঠেছিল। 
তাদের অনেকেই গবাদি পশু বাঁচাতে পারেনি। সুতরাং অর্থনৈতিক পুনর্বাসনে প্রথম পর্যায়ে তাদের গবাদি পশু, হাঁস-মুরগি ইত্যাদির ব্যবস্থা করা যায় কি না, তা ভাবতে হবে। 
বন্যাকবলিত অঞ্চলে ছোট-মাঝারি মৎস্য খামার ছিল। বানের পানিতে মাছ ভেসে যাওয়ায় সেই মাছ চাষিরা এখন প্রায় নিঃস্ব। অনেকেই ঋণ নিয়ে খামার গড়ে তুলেছিলেন। তারা এখন সমুদ্রের মধ্যে দিশেহারা নাবিকের মতো দিন কাটাচ্ছেন। সহজ শর্তে তাদের আবারও ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। আকস্মিক বন্যায় অন্যান্য সবকিছুর মতোই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 
বন্যার পানি উন্নত হওয়ার সাথে সাথে স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসাগুলো খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। শিশু-কিশোরদের বন্যা পরবর্তী বিভিন্নরোগ মোকাবিলায় সচেতন করতে সেমিনারের উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। সাধারণত বন্যায় পানিবাহিত বিভিন্ন রোগবালাই দেখা দেয়। এই অবস্থায় ডায়রিয়া, নানা রকম চর্মরোগসহ পতঙ্গবাহিত বিভিন্ন রোগ থেকে বাঁচার জন্য সবাইকে সচেতন করে তুলতে হবে। মোবাইল হসপিটাল বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করে প্রাথমিক চিকিৎসা ও ওষুধ সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপ কমাতে খেলাধুলার জন্য অন্তত স্কুলের মাঠগুলো শিগগিরই প্রস্তুত করতে হবে।
 বন্যা মোকাবিলায় দীর্ঘমেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণের বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে টেকসই বাঁধ নির্মাণের মতো প্রকল্প গ্রহণের বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ জরুরি। মূলত অতি বৃষ্টির কারণেই এই বন্যা।  সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া লাগবে নদীগুলো খনন ও দখলদার মুক্ত করা। ছোট,বড় সকল খাল খনন করার মতো ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে পানি তাড়াতাড়ি নেমে যায়
 সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সাহায্যে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের ঘরবাড়ি নির্মাণ করতে হবে। এছাড়া স্থানীয় বিত্তবানরা এগিয়ে আসতে পারেন। বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর - পুনর্বাসন, বিশেষ করে শিশু, বৃদ্ধ এবং নারীদের জন্য সুরক্ষা ও সহায়তা দরকার। এর পাশাপাশি পশুপাখি নিরাপদ স্থানে রাখার ব্যবস্থা করাও জরুরি। স্বাস্থ্য ক্লিনিক এবং পাঠদানের কার্যক্রম পুনরায় শুরু করার কথাও মাথায় রাখতে হবে। জীবিকার তাগিদে মানুষ বিভিন্ন পেশায় জড়িত। ক্ষতিগ্রস্থ ব্যবসা,কৃষি কার্যক্রম এবং জীবিকা পুনর্বাসনে সহায়তা প্রদান করা অত্যাবশ্যক। ভবিষ্যতে বন্যার জন্য প্রস্তুতি ও প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এর জন্য বাঁধ নির্মাণ ও প্রকল্প পরিকল্পনা গ্রহণ করা যেতে পারে। টেকসই বাঁধ নির্মাণ করলে পরবর্তী বছর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে।  সবাই এগিয়ে আসতে হবে বন্যা-পরবর্তী সময়ে পুনর্বাসনের সহযোগিতায়।
লেখক : প্রতিষ্ঠাতা অধ্যক্ষ, কুমিল্লা আইডিয়াল কলেজ,বাগিচাগাঁও, কুমিল্লা।












সর্বশেষ সংবাদ
রংপুরে ভূমিকম্প অনুভূত
ড. ইউনূসের ৬ মামলা বাতিল
ব্যারিস্টার সুমন ২ দিনের রিমান্ডে
কমলাপুর থেকে ছাড়ছে না কোনো ট্রেন, যাত্রীদের ভোগান্তি
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা টাউন হলের সকল কমিটি বাতিল
কুমিল্লায় চার জনের অবৈধ সম্পদ অনুসন্ধান করছে দুদক
২৪ সেনার দেহাবশেষ সরিয়ে নিচ্ছে জাপান
ইপিজেডের বর্জ্য শোধনাগার কার্যক্রমের বিষয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়
বাখরাবাদ গ্যাসের কর্মচারি ইউনিয়নের সভাপতি বশির আহমেদ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২