বাংলাদেশের পোশাকশিল্প অনেকটাই এগিয়েছে।
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজস্ব একটি বাজার সৃষ্টি করতে পেরেছে বাংলাদেশের তৈরি
পোশাক। বাংলাদেশের পোশাকের চাহিদার কারণে প্রতিবছর বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ
বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব হচ্ছে। পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরে সৃষ্টি
হচ্ছে কর্মসংস্থান।
কিন্তু তৈরি পোশাক শিল্পে মাঝেমধ্যেই দেখা দেয়
উত্তেজনা ও অস্থিরতা। কয়েক দিন ধরেই দেশের পোশাক খাতে এক ধরনের অস্থির
পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গত মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান
উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিভিন্ন
শিল্পাঞ্চলে দাবিদাওয়া নিয়ে শ্রমিকদের আন্দোলনের মধ্যে শিল্প-কারখানায়
নিরাপত্তা নিশ্চিতের দাবি নিয়ে গিয়েছিলেন ব্যবসায়ী নেতারা।
শিল্পাঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়ে তাঁরা বলেছেন, কারখানায় নিরাপত্তা নিশ্চিত না হলে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হবে।
কয়েক
দিন ধরে পোশাক খাতের শিল্প-কারখানায় শ্রমিকদের বিক্ষোভের মুখে শতাধিক
কারখানা বন্ধ রাখতে হয়েছে। তৈরি পোশাক খাতের শ্রমিকরা হঠাৎ কিছু অপ্রচলিত
ইস্যু সামনে নিয়ে আসায় পোশাক শিল্পাঞ্চলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। শিল্প
মালিকরা মনে করছেন, শিল্পকে অস্থিতিশীল করাসহ অন্তর্বর্তী সরকারকে
বিভ্রান্ত করতে পরিকল্পিতভাবে ষড়যন্ত্র করছে নেপথ্যে থাকা একটি গোষ্ঠী।
এতে
আন্তর্জাতিক এবং স্থানীয় রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র আছে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।
পোশাক কারখানায় শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ, হাজিরা বোনাস প্রদান, শ্রমিক নিয়োগে
নারী-পুরুষের সমানুপাতিক হারে নিয়োগ এবং আন্দোলনকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে
শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়াসহ ১১ দফা দাবিতে আন্দোলন চলছে।
শ্রমিক
নেতারা বলছেন, ক্ষমতার পালাবদলে একটি সুবিধাভোগী গোষ্ঠী বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ,
ঝুট ব্যবসা এবং চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করতে শিল্পাঞ্চলে অস্থিতিশীলতা তৈরির
চেষ্টা করছে। কারখানাগুলোতে নেতৃত্বের পালাবদল ও শ্রমিক সংগঠনের
কমিটিগুলোতে নিজেদের কর্তৃত্ব নিতে পেছন থেকে ইন্ধন দিয়ে শিল্পকে অস্থির
করার পাঁয়তারা চলছে। গত বুধবার সচিবালয়ে তৈরি পোশাক শিল্প খাত ও
শিল্পাঞ্চলে শ্রমিক অসন্তোষ নিয়ে এক জরুরি বৈঠক শেষে শ্রম ও কর্মসংস্থান
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সাংবাদিকদের বলেছেন, বিভিন্ন স্থানে
শ্রমিক অসন্তোষের পেছনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও বহিরাগতদের ইন্ধন রয়েছে।
পরিস্থিতি
স্বাভাবিক করতে অ্যাকশন শুরু হবে। স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়
উপদেষ্টা এ এফ হাসান আরিফ বলেছেন, চারদিকে যে শ্রমিক অসন্তোষ হচ্ছে,
বিশৃঙ্খলা হচ্ছে-এসব বিশৃঙ্খলা শ্রমিকরা করছেন না। যারা করছে, তাদের বেশির
ভাগই বহিরাগত। তিনি মনে করেন, এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, কারখানা, শ্রমিক ও
দেশের অর্থনীতি বাঁচাতে গেলে কিছুসংখ্যকের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে
হবে।
অস্থিরতার কারণে গত বুধবার পর্যন্ত ১৬৭টি পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল।
ব্যবসায়ী নেতারা মনে করছেন, পোশাক শিল্পাঞ্চলে অস্থিরতা চলছে তৃতীয় পক্ষের
ইন্ধনে। বিজিএমইএ সভাপতি বলেছেন, বহিরাগতদের হামলায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি
হয়েছে। উদ্ভট সব দাবির আড়ালে শ্রমিকদের উসকে দিয়ে একটি বিশেষ শ্রেণি পোশাক
খাতকে অস্থিতিশীল করে তুলছে। সত্যি কি বাংলাদেশের এই খাতকে ধ্বংস করার জন্য
কোনো অদৃশ্য শক্তি পেছনে লুকিয়ে আছে? তাহলে উভয় পক্ষেরই সতর্ক হওয়া
প্রয়োজন। বাস্তবতার নিরিখে চিন্তা করতে হবে যে শ্রমিক ও মালিক উভয়েরই
প্রতিষ্ঠান একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি। দুই পক্ষেরই রুজি-রোজগারের স্থান
এটি। শিল্প যাতে ধ্বংস না হয় সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার। বাংলাদেশের এই খাত
ধ্বংস হয়ে গেলে মালিক-শ্রমিকসহ সারা দেশের অর্থনীতি ভয়ানক ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
সেই সঙ্গে উসকানিদাতাদের ব্যাপারে কঠোর নজর রাখতে হবে সরকারকে। তৈরি পোশাক
শিল্প বাংলাদেশের জন্য একটি বড় আশীর্বাদ।