অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে
অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করার মাসপূর্তিতে পাওয়া গেল সুখবর।
মূল্যস্ফীতির সাধারণ সূচক আগস্ট মাসে কমে ১০.৪৯ শতাংশ হয়েছে। বিবিএসের
হিসাবে, গত জুলাই মাসে সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়ায় ১১.৬৬ শতাংশ। এটি
ছিল দেশে গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতি।
জুলাই মাসে খাদ্য
মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১৪ শতাংশ ছাড়ায়। এটিও ছিল গত ১৩ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
আগস্ট মাসে তা কমে ১১.৩৬ শতাংশ হয়েছে। তবে খাদ্যবহির্ভূত খাতে আগস্ট মাসে
মূল্যস্ফীতি বেড়ে ৯.৭৪ শতাংশ হয়, আগের মাসে যা ছিল ৯.৬৮ শতাংশ।
গত জুন
মাসে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৭২ শতাংশ। খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১০.৪২ শতাংশ
আর খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.১৫ শতাংশ। শহর এলাকায় সার্বিক
মূল্যস্ফীতি ৯.৫৮ শতাংশ এবং গ্রামীণ অঞ্চলে ৯.৮১ শতাংশ ছিল। বিশেষজ্ঞরা বেশ
কিছুদিন থেকেই বলছেন, বছরের বেশি সময় ধরেই মূল্যস্ফীতি নাগালের বাইরে
রয়েছে।
আয়ের চেয়ে সাধারণ মানুষকে বেশি খরচ করতে হচ্ছে। গত জুলাই মাসে
মূল্যস্ফীতির বড় কারণ ছিল পণ্যের সরবরাহ ব্যাহত হওয়া। বাজারে বিভিন্ন
পণ্যের ঘাটতি তৈরি হয়। ঘাটতির প্রভাবে বেড়ে যায় পণ্যের দাম। অস্বাভাবিক
বাড়তি দামের কারণে ভোক্তারা অস্বস্তিতে পড়ে।
মূল্যস্ফীতি সব সময় সব
সরকারের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস)
হিসাবে, গত মার্চ মাসে দেশের সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে হয় ৯.৮১ শতাংশ।
ফেব্রুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি ছিল ৯.৬৭ শতাংশ। গত মে মাসে বিবিএস জানায়, খাদ্যে
মূল্যস্ফীতি ১০.২২ শতাংশ। একই সময়ে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান
(বিআইডিএস) একটি জরিপের ফল প্রকাশ করে। ওই জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশে
খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৫ শতাংশ। অর্থনীতিবিদ ও বিশ্লেষকরা বলছেন, মূল্যস্ফীতির
সঙ্গে বাজার তদারকিসহ আরো অনেক বিষয় জড়িত। বাংলাদেশের বাজার ব্যবস্থাপনা
মোটেই সংগঠিত নয়। এর সুযোগ নিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ীকে বাজারে নিত্যপণ্যের
দাম বাড়াতে দেখা যায়। কোনো কোনো সময় বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেও
পণ্যের দাম বাড়ানো হয়।
কয়েক বছর ধরে যে হারে মূল্যস্ফীতি ঘটেছে, তার
তুলনায় সাধারণ মানুষের আয় বাড়েনি। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের
জীবনযাত্রাকে আরো কঠিন করে তোলে। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট আউটলুক (এডিও) জুলাই
২০২৪ প্রতিবেদনে পূর্বাভাসে এডিবি জানিয়েছে, মূল্যস্ফীতি কমাতে নানামুখী
পদক্ষেপ নেওয়ার পরও গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ১১ মাসে বাংলাদেশের মূল্যস্ফীতি
দুই অঙ্কের (ডাবল ডিজিট) কাছাকাছি ছিল। খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার কারণে আগামী
দিনগুলোতেও এই উচ্চ মূল্যস্ফীতি অব্যাহত থাকতে পারে।
আমাদের
বাজারব্যবস্থায় কারো কোনো নিয়ন্ত্রণ ছিল না। বাজারে প্রতিযোগিতা নেই।
ভোক্তার অধিকার উপেক্ষিত। আইন আছে, আইনের প্রয়োগ নেই। মূল্যস্ফীতি দেশের
স্থির আয়ের জনগোষ্ঠীকে নতুন এক বাস্তবতার মুখোমুখি করেছে। মূল্যস্ফীতির
কারণে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনে প্রভাব পড়ে। আমরা কয়েক বছর ধরেই লক্ষ
করছি, বাজার সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে থাকছে না। দেশের অর্থনীতিবিদরা
মূল্যস্ফীতির বিষয়টি নিয়ে অনেক দিন থেকেই সতর্ক করে আসছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে
করেন, মূল্যস্ফীতি কমাতে উৎপাদন বাড়াতে হবে। বাজারে পর্যাপ্ত পণ্য সরবরাহ
নিশ্চিত করতে আরো জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে
দেশের মানুষের প্রত্যাশা অনেক। সাধারণ মানুষের জীবনযাপনের চ্যালেঞ্জগুলো
নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। মানুষ কিভাবে জীবন যাপন করছে, সেটি গুরুত্ব দিয়ে
বিবেচনা করতে হবে। স্থির আয়ের মানুষের পাশে কিভাবে দাঁড়ানো যায়, সেই
পরিকল্পনা করতে হবে। মূল্যস্ফীতি হ্রাসে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।