কুমিল্লার লাকসামে চাঞ্চল্যকর শাহজাহান সাইমুন (অটোরিক্সা চালক) হত্যার রহস্য উদঘাটনসহ মূল হত্যাকারীদের পুলিশ গ্রেপ্তার করেছেন। গ্রেপ্তারকৃতরা হলো- মনোহরগঞ্জ উপজেলার নাথেরপেটুয়া ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের গণিপুর গ্রামের চেয়ারম্যান বাড়ির মো. আমিনুল ইসলাম দুলালের ছেলে মো. আবদুল ওয়াদুদ মানিক (২৪) এবং লাকসাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমগাঁও পুরান বাজার এলাকার মৃত নুরু মিয়ার ছেলে মো. সানাউল্লাহ (২৪)।
লাকসাম থানা পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গোপন সংবাদ ও তথ্যপ্রযুক্তির ভিত্তিতে লাকসাম থানা পুলিশের একটি চৌকস দল অভিযান চালিয়ে গত রবিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল সাড়ে ৯ টার দিকে ঢাকার কামরাঙ্গীরচর থানাধীন লোহারব্রীজ এলাকা থেকে প্রথমে হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা মো. আবদুল ওয়াদুদ মানিককে গ্রেপ্তার করেন। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তার অপর সহযোগী মো. সানাউল্লাহকে লাকসাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের পশ্চিমগাঁও পুরান বাজার এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় নিহত শাহজাহান সাইমুনের ব্যবহৃত একটি
মোবাইল এবং ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সাটি উদ্ধার করেন পুলিশ।
পুলিশ সূত্রে আরো জানা যায়, নিহত শাহজাহান সাইমুুনের সঙ্গে ঘটনার কয়েকদিন আগে ওই এলাকার আবদুল ওয়াদুদ মানিকের মাদক সেবনকে কেন্দ্র করে ঝগড়া বিবাদ হয়। সে সময় সাইমুুন মানিকের একটি মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে বলে শোনা যায়। ওই ঘটনার জের ধরে মানিক তার পূর্ব পরিচিত লাকসাম পৌরসভার পশ্চিমগাঁও পুরান বাজার এলাকার মো. সানাউল্লাহ'র সাথে দেখা করে এবং প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ঘটনার দুইদিন আগে শনিবার (৩১আগষ্ট) সকালে মানিক সানাউল্লাহকে নিয়ে বিপুলাসার বাজারে যায় এবং দূর থেকে ভিকটিম সাইমুনকে দেখিয়ে ও চিনিয়ে দেয়।
পুলিশ সূত্র জানান, ঘটনার দিন সকাল অনুমান ১১টার দিকে পরিকল্পনা অনুযায়ী মানিক বিপুলাসার বাজার থেকে ৫০০ টাকা ভাড়া দর করে ভিকটিম সাইমুনের ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সায় দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে লাকসাম সরকারী হাসপাতালে আসে। হাসপাতালের ভিতরে পূর্ব থেকেই সানাউল্লাহ অপেক্ষা করছিলো। একপর্যায়ে মানিক কৌশলে সাইমুনকে হাসপাতালের ভিতর নিয়ে যায়। সেখানে পূর্ব থেকেই অপেক্ষায় থাকা সানাউল্লাহর সাথে ভিকটিম সাইমুনের পরিচয় করিয়ে দেয়
এবং মাদক সেবনের কথা বলে কৌশলে হাসপাতালে ভিতরে একটি পরিত্যক্ত বাসায় নিয়ে যায়। সেখানে গেলে মানিকের সঙ্গে পূর্বের ঝগড়া বিবাদের জের ধরে সানাউল্লাহ ভিকটিম সাইমুনকে প্রচন্ড গালমন্দ ও মারধর করে। এ সময় দুইজনের মধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হয়। সে ভিকটিমের কাছ থেকে মোবাইল এবং অটোরিক্সার চাবি ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে।
ওই সময় মানিক ভিকটিমের কাছ থেকে জোর করে মোবাইল এবং অটোরিক্সার চাবি ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একপর্যাযে একটি লাঠি দিয়ে সাইমুনের মাথায় আঘাত করলে সে মেঝেতে পড়ে যায়। এমতবস্থায় ভিকটিম সাইমুন বেরিয়ে আসতে চাইলে সানাউল্লাহ তার কাছে থাকা একটি ব্লেড দিয়ে সাইমুনের গলা কেটে হত্যা করে। পরে ওই পরিত্যক্ত বাসার লাশ ফেলে রেখে সানাউল্লাহ এবং মানিক দু'জনে বেরিয়ে পড়ে।
মো. আবদুল ওয়াদুদ মানিক সেখান থেকে বেরিয়ে ভিকটিম সাইমুনের ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সাটি নিয়ে লাকসাম-উত্তরকূল রোডে একটি মিশুক গ্যারেজে ৩৪ হাজার টাকা বিক্রি করে দেয় এবং সানাউল্লাহসহ টাকা ভাগভাগি করে নেয়।
প্রসঙ্গত; গত ৩ সেপ্টেম্বর সন্ধায় লাকসাম উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একটি পরিত্যক্ত বাসা থেকে পুলিশ
মনোহরগঞ্জ উপজেলার বিপুলাসার ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাশিপুর গ্রামের বাসিন্দা দিন মজুর মো. আব্দুল হান্নানের ছেলে (ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সা চালক) শাহজাহান সাইমুনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেন।
ওই ঘটনায় ভিকটিম শাহজাহান সাইমুনের বাবা মো. আব্দুল হান্নান লাকসাম থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই ব্যাপারে লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. শাহাবুদ্দিন খান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেে।
তিনি বলেন, গ্রেপ্তারকৃতদের কুমিল্লার আদালতে পাঠানো হলে তারা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত মর্মে ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় বিজ্ঞ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্ধী দিয়েছে।