স্টাফ রিপোর্টার।। কুমিল্লা সেনানিবাসের জিওসি ও ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের কমাণ্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেছেন, উৎসবমুখর দূর্গাপূজা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন নই, কিন্তু আমরা সতর্ক রয়েছি। আমি এই বার্তা দিতে এসেছি যে-আমি আপনাদের সাথে আছি। আপনাদের সাথে সেনাবাহিনীর প্রতিটি সৈনিক আছে, প্রতিটি অফিসার আছে। আপনারা শুধু আমাদের তথ্য দিবেন- আমরা সঠিক ব্যবস্থা গ্রহন করবো। আমরা প্রতিটি জিনিস ঠিক করার চেষ্টা করবো। 
গতকাল রবিবার দুপুরে কুমিল্লা জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে শারদীয় দূর্গাপূজার প্রস্তুতিমূলক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের কমাণ্ডার মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম এসব কথা বলেন। 
কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মোঃ আমিরুল কায়ছারের সভাপতিত্বে কুমিল্লা জেলা, মহানগর ও সকল উপজেলার পূজা উদযাপন কমিটির নেতৃবৃন্দ, শিক্ষার্থী সমন্বয়ক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, আইন শৃঙ্খল বাহিনী ও প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা, সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। 
জিওসি মেজর জেনারেল মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, পূজামণ্ডপ কমিটি তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করবেন আর কোথায় কোথায় আরো প্রয়োজন তা জানাবেন। জেনে- প্রশাসনকে জানাবেন। এখানে অনেকগুলো স্তর আছে, পূজামণ্ডপ কমিটি, এরপর স্বেচ্ছাসেবক, আনসার, তারপর পুলিশ, এরপর বিজিবি এবং তারপর সেনাবাহিনী আছে। জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে সবগুলো পূজামণ্ডপের নাম্বার আমি চাইবো। আমাদের সবগুলো ক্যাম্পের নাম্বার আপনাদের কাছেও দিবো। আপনাদের সকল পূজামণ্ডপের আশেপাশে সেনাবাহিনীর লোকজন ঘুরবে। আমরা শতভাগ চেষ্টা করবো আপনাদের সার্ভিস দিতে যেন পূজা উদযাপন করতে যেন কষ্ট না হয়। এই ক্ষেত্রে আমাদের কারা নিয়ে যাবে, অবশ্যই ছাত্ররা নিয়ে যাবে। স্বেচ্ছাসেবীরা নিয়ে যাবে আমাদের। 
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) পঙ্কজ বড়ুয়া সঞ্চালনায় অন্যানের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সেনাবাহিনীর ৪৪ ব্রিগেড কমাণ্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ফারুক হাওলাদার। সভায় বক্তব্য রাখেন কুমিল্লা মহানগর জামায়াতের আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ, কুমিল্লা মহানগর বিএনপির আহবায়ক উদবাতুল বারী আবু, সদস্য সচিব ইউসুফ মোল্লা টিপু, জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নির্মল পাল, কুমিল্লা রামকৃষ্ণ আশ্রম এর সভাপতি অধ্যাপক শান্তিরঞ্জন ভৌমিক, দৈনিক কুমিল্লার কাগজ সম্পাদক আবুল কাশেম হৃদয়, কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি নিজাম উদ্দিন কায়সার, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সাকিব হোসেন, রুবেল হোসাইন, আবু রায়হান, বিএনপি নেতা শ্যামল কৃষ্ণ, পূজা উদযাপন পরিষদের অচিন্ত দাস টিটু, হিন্দু বৌদ্ধ খৃস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারন সম্পাদক তাপস বকসীসহ অন্যান্যরা। 
সভায় জামায়াতের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ জানান, প্রয়োজনে প্রতিটি মণ্ডপে নির্দিষ্ট সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবী নিয়োজিত রাখার জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পূজার নিরাপত্তায় স্বেচ্ছাসেবীরা পূজার পুরো সময়জুড়ে নিয়োজিত থাকবেন। 
সভায় জেলা পুলিশের প্রতিনিধি অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবু বকর সিদ্দিক জানান, পূজার নিরাপত্তায় ৫৮টি পেট্রল টীম ও ৬৯টি মোটরসাইকেল পেট্রলটীম সার্বক্ষণিক নিয়োজিত থাকবেন। এছাড়া সাদাপোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ নিজেদের কাজে সচেষ্ট ভূমিকা পালন করবেন। 
আনসার ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট মোঃ রাশেদুজ্জামান জানান, পূজার সময় নিরাপত্তার কাজে নিজস্ব ইউনিফর্মে ৫ হাজার ২৯২ জন আনসার মোতায়েন থাকবে। প্রয়োজনে এই সংখ্যা আরো বাড়বে। 
এদিকে সীমান্ত এলাকায় পূজা মণ্ডপগুলোতে বিজিবি সদস্যরা নিরাপত্তায় কাজ করবে বলে জানান কুমিল্লা ১০ বিজিবি’র অধিনায়ক লে. কর্ণেল ইফতেখারুজ্জামান। 
সভায় বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসা পূজা উদযাপন পরিষদের নেতৃবৃন্দ উৎসবমুখর পরিবেশে প্রতিমা বিসর্জন, বন্যাকবলিত পূজামণ্ডপগুলোতে সহায়তা এবং আগামী পূজায় একটি নির্দিষ্ট বিসর্জন ঘাট স্থাপনের পরামর্শ নিয়ে আলোচনা করেন। 
শারদীয় দূর্গাপূজার প্রস্তুতিমূলক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়, আসন্ন শারদীয় দূর্গা পূজায় নিরাপত্তা নিশ্চিতে কুমিল্লার সকল পূজা মণ্ডপকে রিচার্জেবল আইপি ও সিসি ক্যামেরার আওতায় রাখার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এসব ক্যামেরার নিরবিচ্ছিন্ন ফুটেজ সংরক্ষণ এবং প্রত্যেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে সংযোগেরও সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রয়োজন অনুসারে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, আনসার এবং শিক্ষার্থীদের সমন্বয়ে নিরাপত্তা বলয় গড়ে তোলা হবে। জেলা পুলিশের তথ্য মতে, সর্বশেষ পাওয়া তথ্য মতে ৭৯৭টি মণ্ডপের মধ্যে ৮৭টিকে অতিগুরুত্বপূর্ণ নির্ধারণ করে সাড়ে ৬শ’রও বেশি পুলিশ সদস্য মোতায়েন থাকবে। অতিগুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপে ৮ জন এবং সাধারণ মণ্ডপে ৬ জন করে ৫ হাজার ২৯২ জন আনসার সদস্য বাহিনীর ইউনিফর্মে মণ্ডপ নিরাপত্তায় নিয়োজিত থাকবে। এছাড়া স্বেচ্ছাসেবক যারাই থাকবেন তাদের নিজস্ব নির্ধারিত পোশাক এবং পরিচয়পত্রসহ থাকতে হবে।