রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪
৮ পৌষ ১৪৩১
গাইনি ডাক্তার না হয়েও প্রসূতির অপারেশন
কুমিল্লার চান্দিনায় সিজারিয়ান ডেলিভারির সময় প্রসূতির মৃত্যু; ৫ লাখ টাকায় রফাদফা
রণবীর ঘোষ কিংকর।
প্রকাশ: বুধবার, ২ অক্টোবর, ২০২৪, ৭:৩০ পিএম |

গাইনি ডাক্তার না হয়েও প্রসূতির অপারেশনকুমিল্লার চান্দিনায় গাইনি ডাক্তার না হয়েও একটি প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়মিত সিজারিয়ন পদ্ধতিতে বাচ্চা ডেলিভারীর কাজ করে যাচ্ছেন মো. সারোয়ার জাহান নামে এক চিকিৎসক। তিনি চান্দিনা উপজেলার দোল্লাই নবাবপুর বাজারে ‘টাওয়ার হসপিটাল এন্ড ডিজিটাল ডায়াগনস্টিক সেন্টার (প্রা.) লি:’  এর আবাসিক ডাক্তার হিসেবে কর্মরত। ওই হাসপাতালে দীর্ঘদিন যাবৎ প্রসূতি মায়েদের স্বাস্থ্য সেবাসহ নরমাল ও সিজারিয়ান ডেলিভারী করে আসছেন ওই চিকিৎসক।
একই ভাবে মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাবেয়া আক্তার নামে এক প্রসূতি নারীর সিজারিয়ান ডেলিভারীর করার ৩০ মিনিট ওই প্রসূতির মৃত্যু ঘটে। নিহত রোগীকে অপারেশন থিয়েটারে রেখেই আত্মগোপান করেন ওই চিকিৎসক। ঘটনাটি জানাজানি হলে মুহুর্তের মধ্যেই পুরো হাসপাতাল এলাকা জুড়ে বিক্ষুব্ধ জনতার ভীড় জমে। পরে স্থানীয় একটি মহলের সহযোগিতা নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাত্র পাঁচ লাখ টাকায় বিষয়টি ধামাচাপা দেয়। প্রত্যন্ত গ্রামের অসচেতন ওই প্রসূতির স্বজনরাও কুচক্রি মহলের প্ররোচনায় এক পর্যায়ে চুপ হয়ে যায়।
নিহত প্রসূতি রাবেয়া আক্তার (৩৪) চান্দিনা উপজেলার গল্লাই ইউনিয়নের পাঁচধারা গ্রামের আশিকুর রহমান আশুর স্ত্রী। এটা তার তৃতীয় সন্তান প্রসব।  ১৫ বছর বয়সী বড় কন্যা সন্তান মাকে হারিয়ে বারবার মুর্ছা যাচ্ছে। নিহতের স্বামী পাঁচ লাখ টাকায় স্ত্রী হত্যার বিচার না চাইলেও সন্তান সহ স্বজনরা বলছেন, ‘টানা নয়, কসাই ডাক্তারের বিচার চাই’।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দোল্লাই নবাবপুর দক্ষিণ বাজারের চার তলা ভবনের ওই হাসপাতালটির কোন বৈধ কাগজপত্র না থাকলেও রয়েছে ৪০টি শয্যা। এর মধ্যে ১২টি কেবিন। পাশ^বর্তী জেলা চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার ৫জন ও স্থানীয় একজন সহ মোট ৬জন পরিচালকের সমন্বয়ে পরিচালিত হয়ে আসছে হাসপাতালটি। চিকিৎসার মান ও পরিবেশ নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।
স্থানীদের অভিযোগ, চান্দিনা উপজেলা সদর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরের একটি বাজারের ‘টাওয়ার হাসপাতাল’ নামের ওই প্রাইভেট হাসপাতালটিতে অহরহ সিজারিয়ান পদ্ধতিতে সন্তান ডেলিভারীসহ নানা জটিল অপারেশন করা হয়। কিন্তু ওই হাসপাতালে কোন অভিজ্ঞ ডাক্তার আসে না। এমনকি সিজারিয়ান করার সময়ও কল করে কোন বিশেষজ্ঞ গাইনি ও এ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তারকে আনা হয়না। ওই হাসপাতালের এক আবাসিক ডাক্তার মো. সারোয়ার জাহান সে নিজেই মেডিসিনের ডাক্তার, সার্জারী ডাক্তার আবার সেই মা ও শিশু রোগের ডাক্তার! এমনকি গাইনি ও  এ্যানেস্থেশিয়া ডাক্তারের কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের এমন কান্ডাজ্ঞানহীন অর্থলোভে প্রায়ই ঘটছে নানা দুর্ঘটনা। গ্রামের সহজ সরল মানুষকে বেশির ভাগ ঘটনাই দুর্ঘটনা বলে চালিয়ে দেয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। বড় কোন দুর্ঘটনা ঘটলে স্থানীয় রাজনৈতিক লোকদের ছত্রছায়াতে ধামাচাপা দিয়ে আসছে। একই ভাবে প্রসূতি রাবেয়া আক্তার এর মৃত্যুর ঘটনা ধামাচাপা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকেও ওই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও ভুয়া চিকিৎসকের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তির দাবী করেন অনেকে।
নিহত প্রসূতি রাবেয়া আক্তার এর স্বামী আশিকুর রহমান আশু জানান, আমরা স্ত্রীর প্রসব ব্যথা হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টায় ওই হাসাপাতালে আনি। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আমার স্ত্রীর সিজারিয়ান ডেলিভারী করে ডাক্তার সারোয়ার জাহান। কিছুক্ষণ পর আমাকে জানান, আমার স্ত্রীর আরও ওষুধ লাগবে, রক্ত লাগবে। পাঁচ মিনিট পর বলেন, তারাতারি এ্যাম্বুলেন্স নিয়ে আসেন অন্য জায়গায় পাঠাতে হবে। আমার স্ত্রী কি সমস্যা হয়েছে জানতে আমরা ওটি রুমে প্রবেশ করতে গেলে তারা আমাদের কাউকে ওটি রুমে প্রবেশ করেতে দেয়নি। সন্ধ্যা ৭টার পর আমরা জোর করে ওটি রুমে প্রবেশ করে দেখি আমার স্ত্রীর মুখ ঢেকে রেখেছে তারা। এসময় ডাক্তারও ছিল না। পরে জানতে পারি ওই ডাক্তার নাকি গাইনি ডাক্তার না। আবার মানুষ ভুয়া ডাক্তার বলেও আমাকে জানায়।
সরেজমিনে বুধবার (২ অক্টোবর) দুপুরে ওই হাসপাতালে গিয়ে ৬জন পরিচালকসহ ডাক্তার সারোয়ার জাহানকেও পাওয়া যায়নি। এ ঘটনার পর ডা. মো. সারোয়ার জাহান আত্মগোপন করার পাশাপাশি মোবাইল ফোন বন্ধ রাখায় যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায় ৬জন পরিচালকেরও।
নবাবপুর টাওয়ার হাসপাতাল প্রাইভেট লি. এর সহকারি পরিচালক মো. সোহাগ জানান, প্রসূতি মারা গেলেও বাচ্চা সুস্থ্য আছে। বাচ্চাটি পাশ^বর্তী মেডিনোভা হাসপাতালে ভর্তি আছে। এটি একটি দুর্ঘটনা। এ ঘটনার পর আমরা নিহতের পরিবারের সাথে আলোচনা করে বিষয়টি সমাধান করেছি। ডাক্তার প্রসঙ্গে কথা বলতে চাইলে তিনি আর কিছু বলতে রাজি হননি।
চান্দিনা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আরিফুর রহমান জানান, ঘটনাটি শুনেছি। তবে নিহত প্রসূতির পরিবারের কেউ কোন অভিযোগ করেনি আমাদের কাছে। আর ওই হাসপাতালের বিষয়ে আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিব।
চান্দিনা থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) মো. নাজমূল হুদা জানান, এ ঘটনায় কেউ কোন অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। 












সর্বশেষ সংবাদ
মাতৃভান্ডারের রসমালাইয়ে মাছি-তেলাপোকা!
ফ্যাসিবাদ বিদায় হলে আর ক্ষমতায় ফিরে আসেনা
বাইক চালকের ‘কিল-ঘুষিতে’ অটোচালকের মৃত্যু:
‘দখলদারিত্ব বন্ধ হয়নি, শুধু দখলবাজ পরিবর্তন হয়েছে’
লালমাইয়েবাসের ধাক্কায় প্রাণ গেলো পথচারীর
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় অটোচালকের মৃত্যুর ঘটনা ভাইরাল;
মাতৃভান্ডারের রসমালাইয়ে মাছি-তেলাপোকা!
কুমিল্লায় ঝগড়া থামাতেগিয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
বাইক চালকের ‘কিল-ঘুষিতে’ অটোচালকের মৃত্যু:
বিচার বিভাগের রায়ের মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রবর্তনের সুযোগ এসেছে ... হাবিব উন নবী সোহেল
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২