কুমিল্লার নাঙ্গলকোট হাছান মেমোরিয়াল সরকারি কলেজ অধ্যক্ষ ড. মজিবল হায়দর চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারী আচরণ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ এনে অপসারণের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও কলেজ ভবনে তালা দিয়েছে কলেজ শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নাঙ্গলকোট উপজেলা নেতৃবৃন্দ। এসময় বিক্ষোভকারীরা কলেজ ক্যাম্পাসে ঘুরে-ঘুরে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে নানাহ স্লোগান দিতে দেখা যায়। পরে তারা কলেজ প্রশাসনিক ভবনের সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন ও অধ্যক্ষের বিভিন্ন দুর্নীতি অনিয়মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভা করেন। শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষের অপসারণের দাবিতে কলেজ গর্ভনিং বডি সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুরাইয়া আক্তার লাকীর নিকট স্মারকলিপি প্রদান করেন।
প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন সম্বনয়ক প্রান্ত, সৌরভ, ইউনুস, ইমতিয়াজ আলম শাওন, আকিব, জাকারিয়া ও নেজাম, কলেজ শিক্ষার্র্থী কাউছার আলম শিবলু, ইসমাইল হোসেন সাগর, রাফি, ওমর ফারুক, সায়েম প্রমুখ।
স্মারক লিপিতে উল্লেখ করা হয়, চাহিদা পত্র বিহীন কলেজের বিভিন্ন হিসাব হতে ভাউচার ছাড়া প্রায় ১১ লক্ষ টাকা উত্তোলন। উপবৃত্তি প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর বিপরীতে প্রাপ্ত টিউশন ফি উত্তোলন। কলেজে উপাধ্যক্ষ না থাকা সত্ত্বেও অধ্যক্ষ কর্তৃক উপাধ্যক্ষের ভাতা গ্রহণ। খন্ড কালিন কোন শিক্ষক-কর্মচারী না থাকলেও ভুয়া নামে ভাতা গ্রহণ। কলেজের পুরোনো ছাত্রাবাস টেন্ডার বিহীন বিক্রি করে টাকা আত্মসাৎ। ২০২৩-২০২৪ সরকরি বরাদ্ধের ৭/৮ লক্ষ টাকা ভুয়া ভাউচার দিয়ে উত্তোলন করে আত্মসাৎ। উপজেলা পরিষদ হতে মাঠ ভরাটের জন্য দুই লাখ টাকা পাওয়ার পরও কলেজ একাউন্ট থেকে বালু ভরাটের জন্য টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ। পাবলিক পরীক্ষায় সম্মানী দশ হাজার টাকা ও আন্তপরীক্ষায় পাঁচ হাজার টাকা নেওয়ার বিধান থাকলেও অধ্যক্ষ ভুয়া ভাউচারে প্রায় ২৫ থেকে ৩০ হাজার টাকা ভাতা নেয়। সার্টিফিকেট, প্রশংসাপত্র, প্রবেশপত্র, রেজিস্ট্রেশন কার্ড বিলি’র সময় শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে বিনা রশিদে নেয়া টাকা আত্মসাৎ। ছাত্র-ছাত্রীদের টাকা কলেজের হিসাব শাখায় ভুলবশত জমা হলে সেই টাকা ফেরত না দিয়ে আত্মসাৎ ।
প্রতিবাদ সভায় শিক্ষার্থী ও বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের সমন্বয়কগণ তাদের বক্তব্যে বলেন, অধ্যক্ষ ড. মজিবল হায়দর চৌধুরীর কলেজ বিজ্ঞানাগারের ২লাখ ২০হাজার, মাঠ ভরাটের নামে ১লাখ ৮০হাজার, পাঠাগারের বই ক্রয়ের নামে ১লাখ ৫০হজার, উপবৃত্তির কলেজ অংশ-সহ বিভিন্ন ক্ষাতের নামকাওয়াস্তে কমিটি দিয়ে লাখ-লাখ টাকা আত্মসাৎ ও ভুয়া ভাউচারে জোর পূর্বক শিক্ষকদের নিকট থেকে স্বাক্ষর নেয়ার অভিযোগ করেন। এছাড়াও বক্তারা মজিবল হায়দরের বিরুদ্ধে মজিব ধর্ম প্রচার, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে শিক্ষার্থীদের সাথে অশ্লীল নাচ, গান ও বেহায়াপনার অভিযোগ করেন। রমজান মাসে কলেজে নাচ-গানের আয়োজন বিষয়ে প্রতিবাদ করায় কলেজ মসজিদ খতিবকে বিতাড়িত করার চেষ্টার অভিযোগ করেন। এছাড়াও অধ্যক্ষের মামলায় কারাবন্দি কলেজ এইচ.এস.সি ২য় বর্ষের শিক্ষার্থী রানা রবি দাস প্রদীপের নিঃশর্তে মুক্তির দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
কলেজ অধ্যক্ষ ড. মজিবল হায়দর চৌধুরী বলেন, আন্দোলকারীরা অধিকাংশই বহিরাগত। আমার বিরুদ্ধে যে সকল অভিযোগ আনা হয়েছে এ গুলো সব মিথ্যা, বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। আমি কমিটি ছাড়া কোন টাকা উত্তোলন ও খরচ করিনি। যারা আমার বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে তারা অধিকাংশই আওয়ামীলীগ ও ছাত্রলীগ করে। তারা আগস্টের ৬ তারিখ থেকে হঠাৎ দল পরিবর্তন করেছে। আমার গাড়ি ভাঙ্গার মামলায় রানা রবি দাস প্রদীপকে সনাক্ত করতে পেরেছি তার নাম উল্লেখ-সহ ২০-২৫জনকে অজ্ঞাত আসামী করেছি, সেও আমার কলেজের শিক্ষার্থী এবং ছাত্রলীগের কর্মী।
এ ব্যাপারে নাঙ্গলকোট উপজেলা নির্বাহী অফিসার সুরাইয়া আক্তার লাকী বলেন, বিষয়টি আমি জেনেছি, তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।