পঞ্জিকার
তিথি অনুযায়ী শারদীয় দুর্গোৎসবের আজ ষষ্ঠী। নিয়মানুযায়ী আজ সন্ধ্যায়
প্রতিটি পূজা মন্ডপে শারদীয় দেবী দুর্গার বোধন হওয়ার কথা। কিন্তু পঞ্জিকায়
আজ ষষ্ঠী তিথি কম থাকায় পঞ্চমী শেষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় মায়ের বোধন শেষ করেন
পূজারীরা।
আজ বুধবার (৯ অক্টোবর) সন্ধ্যায় মায়ের অধিবাস ও শাস্ত্রীয় বিধান মতে মাতৃ বন্ধনার কাজ শুরু করবে কুমিল্লার ৭৫১টি পূজা মন্ডপে।
শারদীয়
আবহে আজ থেকে শুরু হচ্ছে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব
শারদীয় দুর্গাপূজা। আজ দিক সিদ্ধান্ত অনুসারী সনাতন ধর্মীবলম্বীরা
ষষ্ঠীপূজার মধ্য দিয়ে শুরু করবে পাঁচ দিনের আনুষ্ঠানিকতা। ঢাকের বোল, কাঁসর
ঘণ্টা, শাঁখের ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠবে পূজা মণ্ডপগুলো।
দুর্গোৎসবের
প্রাক্কালে এই বোধনের মাধ্যমে দক্ষিণায়নের নিদ্রিত দেবীর নিদ্রা ভাঙার জন্য
বন্দনা পূজা করা হয়ে আসছে সেই আবহমান কাল থেকে। মণ্ডপে, মন্দিরে গতকাল
পঞ্চমীতে সায়ংকালে তথা সন্ধ্যায় এ বন্দনা পূজা অনুষ্ঠিত হয়। বোধন
দুর্গাপূজার প্রধান একটি আচার। ‘বোধন’ শব্দের অর্থ জাগরণ বা
চৈতন্যপ্রাপ্তি। পূজা শুরুর আগে সন্ধ্যায় বেলশাখায় দেবীর বোধন দুর্গাপূজার
একটি অত্যাবশ্যকীয় অঙ্গ। সাধারণত শুক্লা ষষ্ঠীর সন্ধ্যায় বোধন হলেও এবার
তিথি অনুযায়ী পঞ্চমীতেই বোধন পড়েছে।
পুরাণ অনুসারে, রামচন্দ্র শরৎকালে
রাক্ষসরাজ রাবণকে বধ করার উদ্দেশ্যে শক্তিরূপীনি দেবী দুর্গার পূজা করেন।
তিনি অকালে এই বোধন করেন বলেই এটি অকালবোধন নামে খ্যাত। পঞ্জিকা মতে,
মহালয়া, বোধন ও সন্ধিপূজা-এই তিন পর্ব মিলে দুর্গোৎসব। দেবীপক্ষের শুরু হয়
যে অমাবস্যায়, সেদিন হয় মহালয়া। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস, সেদিন
‘কন্যারূপে’ মর্তে আসেন দেবী দুর্গা।
চান্দিনা রাজ কালী বাড়ির সেবায়িত
অমিও ভট্টাচার্য্য জানান, নিয়মানুযায়ী ষষ্ঠী তিথির সন্ধ্যায় মায়ের বোধন
অনুষ্ঠিত হয়। বোধন শব্দের অর্থ হচ্ছে মাকে জাগ্রত করা। এবার প্রতিটি তিথিই
সকালে শেষ হবে। আর বোধন অনুষ্ঠিত হয় সন্ধ্যা। বুধবার সকাল সাড়ে ৭টায় ষষ্ঠী
তিথি শেষে হওয়ায় মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ষষ্ঠী তিথি থাকা কালেই প্রতিটি পূজা
মন্ডপে বোধন অনুষ্ঠিত হয়।
কুমিল্লা রামকৃষ্ণ মিশন এর সভাপতি অধ্যাপক
শান্তি রঞ্জন ভৌমিক জানান, দুর্গোৎসব মূলত বসন্তকালে অনুষ্ঠিত হয়। শরতের
এই সময়ে শক্তিরূপে দেবী দুর্গা নিদ্রায় থাকেন। রামচন্দ্র সীতাকে উদ্ধারে
রাবনকে বধ করতে শরতের এই তিথিতে দেবী দুর্গার পূজা করেন। আর পূজার আগে মাকে
জাগ্রত করতে বোধন পূজা করেছিলেন। সেই থেকে ষষ্ঠী তিথিকে মায়ের বোধন
অনুষ্ঠিত হয়।
তিনি জানান, শারদীয় দুর্গোৎসব সনাতন ধর্মাবলম্বীদের
সবচেয়ে বড় রাজসিক পূজা। তবে এই পূজার সাথে উৎসবও থাকে। তাই পূজার উৎসবে
মহামিলনে পরিণত হয়। এতে সকলের মনের গ্লানি ও সংকীর্ণতা দূর করার একটি
অন্যতম উপায়ও। সকল ভেদাভেদ ভুলে এই মহা মিলনে সকলের উপস্থিতি কামনা করি।
এদিকে,
শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে কুমিল্লায় ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে
আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিটি পূজা মন্ডপে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা
নিশ্চিত করেছে জেলা প্রশাসন। প্রতিটি পূজা মন্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন,
আনসার ও পুলিশের পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি ও সেনা বাহিনীর কঠোর নজারদারী
নিশ্চিত করা হয়েছে।
কুমিল্লা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার
(ডিএসবি) মো. আবু বকর ছিদ্দিক জানান, জেলার সবগুলো পূজা মন্ডপে শান্তিপূর্ণ
ভাবে শারদীয় উৎসব উদযাপনের জন্য সহস্রাধিক পুলিশ, ৬ সহস্রাধিক আনসার
ইতিমধ্যে মোতায়েন করা হয়েছে। এছাড়া পূজা মন্ডপের নিরাপত্তায় সাদা পোশাকে
অবস্থান নিয়েছে পুলিশ বাহিনী। থাকবে টহল টিমও। পাঁচদিন ব্যাপী শারদীয় উৎসব
শান্তিপূর্ণ ভাবে উদযাপনে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন তিনি।