শনিবার ২১ ডিসেম্বর ২০২৪
৭ পৌষ ১৪৩১
মুজিবুল হক-বাহার-সূচনাসহ ৪ জনের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক
প্রকাশ: বুধবার, ৯ অক্টোবর, ২০২৪, ১:১৭ এএম |

মুজিবুল হক-বাহার-সূচনাসহ ৪  জনের দুর্নীতি অনুসন্ধানে দুদক

বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে সাবেক রেলমন্ত্রী ও কুমিল্লা-১১ আসনের এমপি মুজিবুল হক এবং কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক এমপি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারসহ চারজনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নেমেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।এছাড়া বাহারের মেয়ে ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র তাহসিন বাহার সূচনা এবং সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর সাবেক পিএস মো. কামাল হোসেনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুদক।
মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) দুদকের প্রধান কার্যালয়ে কমিশন থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা আকতারুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এই চারজনের বিরুদ্ধে অর্থপাচার, ক্ষমতার অপব্যবহার ও প্রকল্পে অনিয়ম করে অর্থ আত্মসাৎসহ দেশে-বিদেশে বিপুল অবৈধ সম্পদ গড়ার অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুদকের গোয়েন্দা ইউনিটের তথ্য আমলে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হকের বিরুদ্ধে টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে রেলওয়ের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎপূর্বক নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে।
মো. জিয়া উদ্দিন নামে আইনজীবীর আবেদন ও টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্যসহ বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ওই অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
অন্যদিকে, বাহাউদ্দিন বাহার ও তার মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনা এবং কামাল হোসেনসহ অন্যদের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, নিয়োগ বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া বিদেশে অর্থপাচারসহ নিজের ও পরিবারের সদস্যদের নামে শত শত কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগও রয়েছে তাদের বিরুদ্ধে।

ফাঁসছেন বাহারের ১৮ সহযোগী:
এদিকে কুমিল্লার বহুল আলোচিত সাবেক সংসদ সদস্য বাহাউদ্দিন বাহার ও তার ১৮ সহযোগীর অবৈধ সম্পদের নথি এখন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে। এ তালিকায় আছেন বাহারের মেয়ে ও কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র তাহসিন বাহার সূচনার নামও। বাহার কত সম্পদের মালিক, তার বিস্তারিত ফিরিস্তি এখনো পায়নি দুদক। তবে প্রাথমিক একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তাকে শতকোটি টাকার মালিক বলা হয়েছে। দুদকে বাহার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা হওয়ার পর সেটা আমলে নিয়ে অনুসন্ধানের অনুমতি দিয়েছে কমিশন। দু-এক দিনের মধ্যেই এ বিষয়ে অনুসন্ধান টিম গঠন করা হবে। দুদকের পরিচালক উত্তম কুমার মণ্ডল স্বাক্ষরিত চিঠি থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।
দুদকের গোয়েন্দা প্রতিবেদন ও জমা হওয়া অভিযোগের তথ্যমতে, কুমিল্লা-৬ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহার কুমিল্লার ‘গডফাদার’ হিসেবে পরিচিত। কুমিল্লার রাজনীতিতে তার কথাই ছিল শেষ কথা। তিন কন্যার জনক বাহার অবৈধভাবে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে মেয়ে ডা. তাহাসিনা বাহার সূচনাকে বানিয়েছেন কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র।

কামাল হোসেন: 
দুদকে জমা হওয়া অভিযোগ মতে, বাহারের এক সহযোগীর নাম কামাল হোসেন। তিনি সাবেক এলজিআরডিমন্ত্রী তাজুল ইসলামের পিএস ছিলেন। ১১ বছর আগেও কামাল পরিবারের ভরণপোষণ দিতে পারতেন না। কামাল ছিলেন পাসপোর্ট অফিসের দালালের সহকারী। পরে কুমিল্লা-৯ আসনের সাবেক এমপি তাজুল ইসলামের সঙ্গে পরিচয়ে ঘুরে যায় কামালের ভাগ্যের চাকা। আস্তে আস্তে তাজুল ইসলামের বিশ্বস্ত হয়ে ওঠেন কামাল। ২০১৮ সালে তাজুল ইসলাম এলজিআরডিমন্ত্রী হলে কামালকে উন্নয়ন সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব দেন। এই কামাল এক সময় বাহারের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন। তার মাধ্যমে সব দপ্তর নিয়ন্ত্রণ করতেন বাহার। অনিয়ম ও দুর্নীতি করে এখন শতকোটি টাকার মালিক কামাল।
তার নামে ফ্ল্যাট, ৬ তলা ভবন, বিভিন্ন জায়গায় ৫০ শতক জমি, একটি টয়োটা গাড়ি ও ব্যাংকে গচ্ছিত ৮ কোটি টাকার বেশি সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে। শিলংয়ে আছে একটি চা বাগান। সিঙ্গাপুরের বাড়িটি এবং পাচার করা অর্থের সব দেখাশুনা করেন সিঙ্গাপুর প্রবাসী আনিস।
মনিরুল হক সাজু: পিএস কামালের সঙ্গে থেকে তিনিও হয়েছে বিপুল টাকার মালিক। ঢাকায় ৭৮টি ফ্ল্যাটসহ কয়েকটি প্লট ও কানাডায় রয়েছে বাড়ি। ২০টি ব্যাংক হিসাবে তার আছে নগদ ৫০ কোটি টাকা।
আমিনুল ইসলাম টুটুল: সদর উপজেলার চেয়ারম্যান আমিনুল ইসলাম টুটুল। তিনি উপজেলার সব টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন। এ ছাড়া উপজেলায় যে কোনো কাজের জন্য আগে আমিনুলকে ম্যানেজ করতে হতো। কুমিল্লা শহরে যাবতীয় চাঁদাবাজি আয়ের বড় অংশের ভাগ পান এই আমিনুল। তিনিও নামে-বেনামে অঢেল সম্পদ গড়েছেন। কুমিল্লায় বাড়ি, কয়েকটি মার্কেট, ঢাকায় ফ্ল্যাটসহ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে রয়েছে তার কোটি কোটি টাকা।

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ সহিদ: 
কুমিল্লা মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক তিনি। বাহারের হয়ে কামাল অন্যের জমি লোকবল নিয়ে দখল করে দিতেন। টেন্ডারবাজির কাজে লোকবল দিয়ে সহযোগিতা করতেন এই সহিদ। এই প্রক্রিয়ায় তিনি বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন।

আতিকুল্লাহ খোকন: 
কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ও দোকান মালিক সমিতির সভাপতি আতিকুল্লাহ খোকন। ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে মাসিক চাঁদা আদায় করে দিতেন তিনি। এ ছাড়াও অবৈধ জমি দখলে পারদর্শী তিনি। অবৈধভাবে করেছেন সম্পদের পাহাড়। নামে-বেনামে ৪২টি দোকান, সদরের অদূরে বাড়ি, ফ্ল্যাট, ঢাকায় ফ্লাটসহ ব্যাংকে কোটি কোটি টাকা রয়েছে তার।

রিন্টু ও পিয়াস: 
টেন্ডারবাজি করে কোটি কোটি টাকা বানিয়েছেন মহানগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি জহিরুল ইসলাম রিন্টু। আরও আছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাদেকুর রহমান পিয়াস। তারা বাহারের নাম ব্যবহার করে করেছেন অবৈধ দখল বাণিজ্য, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজি। ছোট ব্যবসায়ীদের কাছে নিয়মিত চাঁদা আদায় করতেন। অবৈধ কাজে জড়িত থেকে স্ত্রীদের নামেও করেছেন বাড়ি ও ফ্ল্যাট। তাদের নামেও কুমিল্লায় বিপুল জমিসহ কোটি কোটি টাকার তথ্য পেয়েছে দুদক।

হাবিবুর আলম আমিন সাদী: 
বাহারের আরেক সহযোগী সাবেক প্যানেল মেয়র হাবিবুর আল সাদী। তিনি পিএস কামালের সঙ্গে হাত মিলিয়ে টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও অবৈধ দখল চালু রাখেন। কুমিল্লায় একাধিক বাড়ি, ঢাকায় ফ্ল্যাট ও বেনামে ব্যবসা রয়েছে তার।

হাসান খসরু: পিএস কামালের সঙ্গে মিলে বাহারের ব্যাংকিং বিষয়ে লজিস্টিক সাপোর্ট দিতেন সোনালী ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক হাসান খসরু। জাল কাগজপত্র দিয়ে ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তা আত্মসাৎ, বিদেশে টাকা পাচারসহ নানা অনিয়মের মূলহোতা এই হাসান খসরু। ঠিকাদারি কাজে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে গড়ে তোলেন নিজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান অনন্ত এন্টারপ্রাইজ। কালো টাকার পাশাপাশি ঢাকা ও কুমিল্লায় একাধিক বাড়ি ও ফ্ল্যাট আছে তার।

ফারুক হোসেন:
রিভারভিউ সিএনজি স্টেশনের মালিক ফারুক হোসেন। খাসজমি, হিন্দু সম্পত্তি দখল বাণিজ্যের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। এ চক্রটি জমি অবৈধ দখল করে বিক্রি করে দেন। এভাবে ফারুক এখন একাধিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মালিক। দেশের বিভিন্ন এলাকায় ফারুকের নামে জমি আছে।

হাসান মাহমুদ:
সিবিএ নেতা ও সোনালী ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হাসান মাহমুদ সুমন। তিনি পিএস কামালের সঙ্গে মিলে ব্যাংকিং খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিভিন্ন ঋণ পাস করিয়ে দেন বাহারকে। তার তদবির বাহার ও কামাল কোটি কোটি ঢাকার মালিক হয়েছেন। এ ছাড়া টেন্ডারবাজি ও বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ বাণিজ্যের মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন হাসান মাহমুদ। এসব অর্থে গড়ে তুলেছেন একাধিক ভবন ও প্লট। দেশের বাইরে ঢাকা পাচার করার বিষয়ে বাহার ও কামালকে সহযোগিতা করতে মাহমুদ।

মহব্বত আলী: 
সাবেক মন্ত্রী তাজুলের শ্যালক মহব্বত আলী। তিনি লাকসাম উপজেলার ভাইস চেয়ারম্যান। বাহার ও তাজুলের ছত্রছায়ায় থেকে ভয়ংকর হয়ে উঠেছিলেন মহব্বত আলী। টেন্ডার বাণিজ্য, চাঁদাবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য, দখলদারিত্ব সবই চলত তার তত্ত্বাবধানে।

মঞ্জুর কাদের মনি:
তিনি কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের সাবেক প্যানেল মেয়র। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজির নিয়ন্ত্রক মনি। মনির ঢাকায় ফ্ল্যাট, প্লট, কুমিল্লায় বাড়ি, গাড়ি ও বিভিন্ন জায়গায় জমিসহ দেশের বাইরেও রয়েছে বাড়ি।

তছলিম: 
তিনি হজ এজেন্সি বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি। বাহারের সঙ্গে মিলে টেন্ডার বাণিজ্য, নিয়োগ বাণিজ্য, দখল বাণিজ্য করে শত শত কোটি টাকা বানিয়েছেন। ঢাকায় একাধিক বাড়ি, প্লট, ফ্ল্যাট, কুমিল্লায় বাড়ি, লন্ডনে বাড়ি রয়েছে তার। মালয়েশিয়ায় তার একটি বাড়ি রয়েছে।
হাবিবুর রহমান: 
বাহারের ভাতিজা হাবিবুর রহমান আল সাদি। তিনিও তাজুলের পিএস কামালের সঙ্গে সিন্ডিকেট করে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিজেদের মতো করে ব্যবহার করেছেন।















সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লায় অটোচালকের মৃত্যুর ঘটনা ভাইরাল;
কুমিল্লায় রোপা আমন ধান কাটার উৎসব
কুবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন নিয়ে উদ্যোগ নেই
নগরীর চাঙ্গিনীতে দখলকৃত সরকারি রাস্তাটি আজও দখলমুক্ত হয়নি
যাত্রীদের চরম দুর্ভোগ লাকসামে ইঞ্জিন লাইনচ্যুত, আড়াই ঘন্টা পর ছেড়ে গেলো ট্রেন
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
লটারীতে যাদের নাম আসেনি, তারা যাবেন কোথায় ?
কুমিল্লায় অটোচালকের মৃত্যুর ঘটনা ভাইরাল;
কুমিল্লায় ঝগড়া থামাতেগিয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
মনোহরগঞ্জে আইডিয়াল ফাউন্ডেশন স্কলারশিপ অ্যাসোসিয়েশনের বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত
কুমিল্লায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২