সৃষ্টি-স্থিতি-বিনাশিনী
দেবী দুর্গার আজ মহাষ্টমী। সনাতন ধর্মের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয়
দুর্গা পূজার পাঁচ দিনের আয়োজনে মধ্যে খুব তাৎপর্য ও গুরুত্বপূর্ণ তিথি
মহাষ্টমী। মহাষ্টমী ও মহানবমীর মাঝামাঝি সময়ে অনুষ্ঠিত হয় সন্ধিপূজা।
মহাষ্টমীতে কোথাও কোথাও অনুষ্ঠিত হয় কুমারী পূজাও। তবে এ বছর কুমিল্লার
রামকৃষ্ণ মিশনে অনুষ্ঠিত হবে না কুমারী পূজা।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা বারো
মাসই বিভিন্ন ভাবেই দেব-দেবীর পূজা ও আরাধনা করে থাকেন। তবে বিশেষ
তিথি-নক্ষত্রে বা বিশেষ দিনক্ষণে পূজা করার ফলে নানা সুফল প্রাপ্তি হয় বলে
বিশ^াস করেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। যে কোনও পূজা সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ
কিছু আচার ও রীতি পালন করতে হয়। পুষ্পাঞ্জলিও তেমনই একটি রীতি। এই প্রথায়
পুষ্প অঞ্জলির মাধ্যমে দেবতার পূজো বা আরাধনা করা হয়। সপ্তমীর পূজা শেষে
প্রতিটি পূজা মন্ডপে পুষ্পাঞ্জলী দিয়ে মাকে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন ভক্তরা।
পঞ্জিকার
তিথি অনুযায়ী আজ শুক্রবার (১১ অক্টোবর) সকাল ৭টা ১৭ মিনিটের মধ্যে অষ্টমী
তিথি শেষ। ওই তিথিতেই মহাষ্টমীর কল্পারম্ভ ও মহাষ্টমীর বিহিত পূজা অনুষ্ঠিত
হবে এবং মহাষ্টমীর শেষ ২৪ মিনিট ও মহানবমী তিথির প্রথম ২৪ মিনিটের মধ্যে
সম্পন্ন হবে সন্ধিপূজা। পুরাণমতে চন্ড এবং মুন্ড নামক দুই ভয়ানক অসুরকে
দেবী দুর্গা এই সন্ধিক্ষণে বধ করেছিলেন। শাস্ত্রমতে সন্ধিপূজায় দেবী দুর্গা
পূজিত হন দেবী চামুণ্ডা রূপে। এই পূজায় দেবীকে ১০৮টি পদ্ম নিবেদন করা হয়
এবং ১০৮টি প্রদীপ জ্বালানো হয়।
কুমিল্লা মহানগরীসহ ৭৪৮টি পূজা মন্ডপে
দেবীর প্রতীমা পূজার পাশাপাশি ৩৪টি মন্ডপে ‘ঘট’ পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
মহাষ্টমী তিথিতে সব পূজা অনুষ্ঠিত হয়।
এদিকে শনিবার ভোর ৬টা ১২ মিনিটের
মধ্যে সম্পন্ন করতে হবে মহানবমী পূজা। যে কারণে অনেক পূজা মন্ডপে আজ
শুক্রবার মহাষ্টমী ও সন্ধিপূজার পরপরই মহানবমী পূজা সম্পন্ন হবে। এবার দেবী
দুর্গার দোলায় আগমন।
বৃহস্পতিবার সপ্তমীপূজার মধ্য দিয়ে কুমিল্লার
৭৪৮টি পূজা মন্ডপে অনুষ্ঠিত হয় মহাসপ্তমী। সন্ধ্যায় সন্ধ্যা আরতির পর
প্রতিটি পূজা মন্ডপে উৎসবে মেতে উঠেন ভক্ত দর্শণার্থীরা। ভীড় জমে পূজা
মন্ডপগুলোতে।
কুমিল্লা রামকৃষ্ণ মিশন এর সভাপতি অধ্যাপক শান্তি রঞ্জন
ভৌমিক জানান, ৫০ এর দশকে তিন বছর কুমিল্লায় কুমার পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছিল।
২০০৭ সালে ভারতের বেলুর মঠ কুমিল্লা রামকৃষ্ণ মিশনকে অধিগ্রহণ করায় ২০১১
সাল থেকে কুমিল্লাতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়। ২০২০ ও ২০২১ সালে করোনার
প্রভাব থাকায় ওই দুই বছর কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়নি। এ বছর বিভিন্ন
অসুবিধার কারণে এবং লোক সমাগম ঠেকাতে কুমারী পূজা বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত
হয়েছে।
কুমিল্লা মহানগরীতে ৬৬টি প্রতীমা পূজা ও ৩টি ঘট পূজা, আদর্শ সদর
উপজেলায় ২৬টি প্রতীমা পূজা ও ১টি ঘট পূজা, দেবীদ্বার উপজেলায় ৮২টি, হোমনা
উপজেলায় ৪৮টি, মুরাদনগর উপজেলায় ১৪৫টি, লাকসাম উপজেলায় ৩০টি প্রতীমা পূজা ও
৫টি ঘট পূজা, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলায় ১১টি প্রতীমা পূজা ও ১টি ঘট পূজা,
বুড়িচং উপজেলায় ৩৬টি প্রতীমা পূজা ও ১টি ঘট পূজা, দাউদকান্দি উপজেলায় ৪১টি
প্রতীমা পূজা ও ১৪টি ঘট পূজা, চান্দিনা উপজেলায় ৬৫টি, চৌদ্দগ্রাম উপজেলায়
২২টি, মনোহরগঞ্জ উপজেলায় ১১টি প্রতীমা পূজা ও ১টি ঘট পূজা, লাইমাই উপজেলায়
১৬টি প্রতীমা পূজা ও ১টি ঘট পূজা, বরুড়া উপজেলায় ৮৭টি প্রতীমা পূজা ও ৫টি
ঘট পূজা, নাঙ্গলকোট উপজেলায় ১১টি, তিতাস উপজেলায় ১৪টি, মেঘনা উপজেলায় ৯টি,
সদর দক্ষিণ উপজেলায় ২৮টি প্রতীমা ও ২টি মন্ডপে ঘট পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।