রোববার ৫ জানুয়ারি ২০২৫
২২ পৌষ ১৪৩১
আবারও ট্রাম্প, বিশ্ব রাজনীতির গতি এখন কোন দিকে?
ড. ফরিদুল আলম
প্রকাশ: শুক্রবার, ৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:৪৭ এএম |


সব জল্পনা কল্পনার অবসান ঘটিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দ্বিতীয়বারের মতো শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী কমলা হ্যারিসকে পরাস্ত করে ৪৭তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে ৪ বছর পর আবারও হোয়াইট হাউসে ফিরতে যাচ্ছেন তিনি। নানা দিক দিয়ে এই নির্বাচনটি বিশেষ গুরুত্বের দাবি রাখে।
এই নির্বাচনে মার্কিন ভোটাররা এমন একজনকে নির্বাচিত করলেন, যিনি ইতিমধ্যে একটি মামলায় দোষী সাব্যস্ত এবং তার শাস্তির বিষয়টি অপেক্ষমাণ। ধারণা করা যায়, রায়ে তার জেল হলেও এই নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে তিনি হয়তো জরিমানা দিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে পারবেন।
নির্বাচনটি মার্কিন ভোটারদের দৃষ্টিভঙ্গিকে নতুন করে বিশ্লেষণের দাবি রাখে। এর আগেরবার, অর্থাৎ ২০১৬ সালে মার্কিন ভোটাররা অনেকটা নীরবে ট্রাম্পকে বিজয়ী করেছিলেন। যার কারণে প্রতিটি জনমত জরিপে সেই সময়ের ডেমোক্র্যাটিক প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনকে এগিয়ে রাখা হয়।
নির্বাচনের দিন সব হিসাব পাল্টে বিজয়ী হয়েছিলেন ট্রাম্প। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ভোটাররা অনেকটা সরবেই ট্রাম্পকে সমর্থন দিয়েছেন। এক্ষেত্রে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক নীতির সীমাহীন ব্যর্থতা ভোটারদের রায়ের মধ্যে উঠে এসেছে। সেই সাথে ব্যক্তি ট্রাম্প নানা কারণে দেশের ভেতর আলোচিত এবং সমালোচিত হলেও তার ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন (গধশব অসবৎরপধ এৎবধঃ অমধরহ)’ স্লোগানকে সমর্থন দিয়েছেন ভোটাররা।
৪ বছর সময়ে বিভিন্ন দেশের যুদ্ধ এবং সংঘাতে বাইডেন প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়গুলোয় উত্তাল ছিল যুক্তরাষ্ট্রও। এসব সংঘাতের মাধ্যমে অনেক দেশের সাথেই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নতির পরিবর্তে আস্থার সংকট বেড়েছে। এক্ষেত্রে আমরা ভারতকে উদাহরণ হিসেবে দেখতে পারি।
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পশ্চিমা বিশ্ব নানা ধরনের বিধিনিষেধ আরোপ করলেও এক্ষেত্রে ভারতকে রাশিয়া বিমুখ করা যায়নি, বরং রাশিয়ার সাথে তাদের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বেড়েছে। আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে ইউরোপের দেশগুলোর সাথেও, বিশেষ করে গাজা ইস্যুতে। ইউরোপের অধিকাংশ দেশ বারবার যুদ্ধবিরতির দাবি জানালেও ইসরায়েলের প্রতি ন্যাক্কারজনকভাবে মার্কিন সমর্থন অব্যাহত ছিল।
এই নির্বাচনকে অনেকদিক দিয়েই বিশ্লেষণ করা যেতে পারে। এর মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হচ্ছে, বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের শেষ পর্যায়ে এসে ২০২০ সালে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেও জো বাইডেনের রাজনৈতিক অর্জনের সাথে তার দায়িত্ব পালন যেন কিছুতেই মিলছিল না। সব বিষয়েই শুরু থেকেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন তিনি।
২০০১ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ কর্তৃক শুরু করা আফগানিস্তানে তালেবানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সম্পৃক্ত থাকার দায় তার উত্তরসূরিদের হলেও এর চূড়ান্ত দায় নিতে হয় তাকে। তার মেয়াদের প্রথমদিকেই ২০২১ সালে মার্কিন সৈন্যদের সম্পূর্ণভাবে সেখান থেকে প্রত্যাহার করতে হয় এবং তালেবানরা আবার দেশটির শাসনক্ষমতা পুনরুদ্ধার করেন। এ বিষয়ে তিনি কোনো সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দিতে পারেননি।
এরপর ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করতে গিয়ে এই যুদ্ধকে প্রলম্বিত করেন, যার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরাট এক আর্থিক সংশ্লিষ্টতা তৈরি হয়। এই আর্থিক দায় আরও বৃদ্ধি পায় ২০২৩ সালে ইসরায়েলের সাথে হামাসের দ্বন্দ্ব শুরুর পর।
অন্যদিকে ক্রমবর্ধমান আর্থিক সংকট থেকে উত্তরণ এবং বেকার সমস্যা সমাধানে তিনি মানুষের জন্য কোনো সুসংবাদ দিতে পারেননি। আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অপরাপর দেশগুলোর সম্পর্ক খুব একটা ভালো যাচ্ছিল না। এক্ষেত্রে ভারতের বিষয়টি উল্লেখ করা যেতে পারে।
ভারতের সাথে ৩ দশকের বেশি সময় ধরে যে কৌশলগত সম্পর্ক ধরে রেখেছিল যুক্তরাষ্ট্র, সেখানে ছেদ পড়ে, যখন পশ্চিমা দেশগুলোর পক্ষ থেকে রাশিয়ার সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক পরিত্যাগ করতে বলা হয়। এক্ষেত্রে ভারত তার আর্থিক স্বার্থে এই নিষেধাজ্ঞাকে অমান্য করে আরও ব্যাপক পরিসরে বাণিজ্যিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে রাশিয়ার সাথে।
ইউরোপের দেশগুলোও এই যুদ্ধের একটা সম্মানজনক মীমাংসা চাচ্ছিল, কারণ এর ফলে ওই অঞ্চলেও ব্যাপক রাজনৈতিক পরিবর্তন আসে। গাজা ইস্যু নিয়ে তাদের পক্ষ থেকে বারংবার যুদ্ধবিরতির বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়া হলেও বাইডেন প্রশাসনের নীরব ভূমিকা যুদ্ধকে প্রলম্বিত করেছে।
এক্ষেত্রে ট্রাম্পের বক্তব্য খুবই স্পষ্ট। তিনি তার নির্বাচনী প্রচারাভিযানগুলোয় এই যুদ্ধগুলোর জন্য জো বাইডেনকে দায়ী করে এসব বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণের প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। ধারণা করা যায়, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিনের সাথে তার ব্যক্তিগত সম্পর্ককে কাজে লাগাতে চেষ্টা করবেন তিনি।
এক্ষেত্রে ইউরোপের সমর্থন পাওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে, কারণ তারাও এই প্রলম্বিত যুদ্ধের পক্ষপাতী নয়। গাজা নিয়ে তিনি হয়তো নেতানিয়াহুকে বুঝাতে সক্ষম হবেন, কারণ নেতানিয়াহুও হিজবুল্লাহ এবং হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অভ্যন্তরীণভাবে সমালোচিত। তবে ইসরায়েল যদি নতুন করে ইরানের বিরুদ্ধে তাদের জিঘাংসা চরিতার্থ করতে চায় তাহলে ট্রাম্পকে এ বিষয়ে সমর্থন দিতে হতে পারে, কেননা মধ্যপ্রাচ্যের বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিষয়টি স্বীকৃত। এক্ষেত্রে তিনি গাজাবাসীদের প্রতি মানবিক দিকটিকে তুলে ধরে ইরানের আগ্রাসী মনোভাবের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের যুক্তিকে তুলে ধরতে পারেন।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন নিয়ে প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশেরই বিশেষ আগ্রহ থাকে। এবার বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। সবসময় গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং নির্বাচনের পক্ষে কথা বলে আসা যুক্তরাষ্ট্র বর্তমান বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন এবং সরকার ব্যবস্থাকে কীভাবে দেখবে এবং কতদিন এরকম দেখতে চাইবে, এই জায়গাটিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসতে পারে ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তে।
ট্রাম্প ইতিমধ্যে জানান দিয়েছেন ভারত এবং নরেন্দ্র মোদি তার ভালো বন্ধু। তাই ধারণা করা যেতে পারে যে বাংলাদেশের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তিনি ভারতের স্বার্থকে প্রাধান্য দেবেন। এর বাইরে বিষয়টিকে খুব একটা গুরুত্ব দেওয়ার প্রয়োজনের অবকাশ থাকার কথা নয় মার্কিন প্রশাসনের।
সবশেষে, ট্রাম্পের নির্বাচিত হওয়ার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক পরিবর্তনের হাওয়া লাগতে পারে। তিনি এমন একজনকে তার রানিংমেট হিসেবে পেয়েছেন, যিনি তারই মতো কট্টর রক্ষণশীল। আগামী দিনগুলোয় ট্রাম্প (উড়হধষফ ঞৎঁসঢ়)- জেডি ভ্যান্স (ঔউ ঠধহপব) মিলে যে কাজ করবেন তা প্রকারান্তরে জেডি ভ্যান্স মোকাবিলা করতে হবে, কারণ ২০২৮ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্ট পদের সবচেয়ে বড় দাবিদার এখন তিনিই।
লেখক: অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়


















সর্বশেষ সংবাদ
কেন ভাঙলো কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি ?
কুমিল্লায় শীতে কাবু শিশুরা
অবিলম্বে নির্বাচনী রোডম্যাপ ঘোষণা ও কুমিল্লা-৯ নির্বাচনী এলাকা পুনর্বহালের দাবীতে জনসভা আজ
এড. নাজমুস সা’দাত বাংলাদেশ জাতীয় সমবায় ইউনিয়নের সিনিয়র সহ-সভাপতি নির্বাচিত
কুমিল্লা জেলা ব্রেড, বিস্কুট প্রস্তুতকারক মালিক সমিতির ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন অনুষ্ঠিত
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
হঠাৎ আসিফ আকবরের বাসায় কুমিল্লার সাবেক মেয়র সাক্কু
কেন ভাঙলো কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির কমিটি ?
শহরে আবারো কিশোর গ্যাং গ্রুপের অস্ত্রসহ মহড়া
কুমিল্লা মহানগর ১১ নং ওয়ার্ড বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন
কুমিল্লায় মাদক পরিবহনে বাড়ছে নারীদের সম্পৃক্ততা
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২