প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১২ নভেম্বর, ২০২৪, ২:৫৬ পিএম |
ছেলে-পুত্রবধূর হাতে নির্যাতিত সেই স্কুলশিক্ষক মারা গেছেন ছেলে ও পুত্রবধূর হাতে নির্যাতনের শিকার সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অরবিন্দু মণ্ডল মারা গেছেন। রোববার (১০ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে অসুস্থ অবস্থায় সাতক্ষীরা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তিনি। এদিকে অরবিন্দু মণ্ডলের মৃত্যুর খবর এলাকায় পৌঁছালে দুই সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে যান ছেলে বিশ্বজিৎ মণ্ডল ও তার স্ত্রী কবিতা মণ্ডল। তবে বাবার মৃত্যুর জন্য ভাই-ভাবি ছাড়াও স্থানীয় ইউপি সদস্য সন্তোষ কুমার মণ্ডল ও একই গ্রামের কলেজশিক্ষক গণেশ চন্দ্র গাইনের শাস্তি দাবি করেছেন অরবিন্দুর মেয়ে অঞ্জনা মণ্ডল।
অঞ্জনা মণ্ডল বলেন, বাবা বাঁশতলা রেজিস্ট্রার্ড প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে ২০১০ সালে অবসরে যান। পরে শ্রবণশক্তি হারান। অবসরের পর ভাই বিশ্বনাথ ও ভাবি কবিতা বাবাকে ভালো চোখে দেখতো না। তাকে কারণে অকারণে নির্যাতন করতো। গত বছর মা চপলা মণ্ডল মারা যাওয়ার পর থেকে নিজেই রান্না করে খেতেন বাবা। প্রতিবেশীরা বাবাকে খেতে দিতে চাইলেও ভাই-ভাবি গালাগালি করতো। ২ নভেম্বর সকালে বাবাকে বাড়ির উঠানে ফেলে হাত-পা বেঁধে নির্যাতন করে ভাই-ভাবি। তিনি বলেন, এ নিয়ে গত এক বছরে আটবার বাবাকে মারধর করে তারা। এরপরও বাবাকে পুলিশ গত ৫ নভেম্বর থানায় নিয়ে অভিযোগ দিতে বললে তিনি রাজি হননি। ৫ নভেম্বর ভাবি চলে যাওয়ার পরদিন বিকেলে ইউপি সদস্য সন্তোষ মণ্ডল, কলেজশিক্ষক গণেশ চন্দ্র গাইন, তাপস সরকার, সুফল সরকারসহ একটি মহল সালিশি বৈঠকের মাধ্যমে ভাবিকে বাড়িতে তুলে দেন। অঞ্জনা মণ্ডল আরও বলেন, বাবার গচ্ছিত দেড় লাখ টাকা দুই দফায় হারিয়ে যায়। ভাবি কবিতা ওই টাকা চুরি করেছে বলে বাবা ধারণা করেন। ওই টাকা স্থানীয় ইউপি সদস্য সন্তাষ মণ্ডলকে সুদে দিয়েছেন ভাবি। যে কারণে সন্তোষ মণ্ডল ও তার পরিবারের সদস্যরা আমার বাবাকে নির্যাতনে কোনো বাধা দেননি। যে দড়ি দিয়ে বেঁধে নির্যাতন করা হতো সেই দড়ি বাবা অন্য জায়গায় লুকিয়ে রেখেছিলেন। ২ নভেম্বর শনিবার সকালে মশারির নেট দিয়ে বেঁধে বাবাকে নির্যাতন করা হয়। বাঁশতলা উত্তর পাড়ার কয়েকজন নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, কবিতা মণ্ডলের সঙ্গে ইউপি সদস্য সন্তোষ মণ্ডলের প্রেমের সম্পর্কও রয়েছে। গত সোমবার বাড়িতে পুলিশ আসলে ইউপি সদস্যের ছেলের মোটরসাইকেলে পালিয়ে যান কবিতা। দুই ছেলে রাজ ও দ্বীপকে তারা সঙ্গে নিয়ে যান। গ্রামে আত্মগোপন করে থাকেন শিক্ষকের ছেলে বিশ্বনাথ। মঙ্গলবার ভোরে বাড়িতে এসে দুই বোন ও বাবার কাছে নিজের ও স্ত্রীর কৃতকর্মের জন্য ক্ষমা চান বিশ্বনাথ। তবে এতকিছুর পরও ছেলে ও পুত্রবধূর বিরুদ্ধে মামলা করতে চাননি অরবিন্দু মন্ডল। সাতক্ষীরার পুলিশ সুপার মনিরুল ইসলাম বলেন, অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অরবিন্দু মণ্ডল শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলেন আগে থেকেই। মৃত্যুর বিষয়টি শুনেছি। ওনাকে মারধরের ঘটনায় আইনি ব্যবস্থা নিতে চেয়েছিলাম, কিন্তু পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেনি।