১২
দিনব্যাপী (১১ থেকে ২২ নভেম্বর ২০২৪) কনফারেন্স অব দি পার্টিজ (কপ)
সম্মেলন আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। জাতিসংঘের জলবায়ু
পরিবর্তন বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফসিসিসি (ইউনাইটেড নেশনস ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন
অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) প্রতিবছর বিশে^র বিভিন্ন প্রান্তে এ সম্মেলনের আয়োজন
করে থাকে। কপের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে গ্রীণহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস বিষয়ক
চুক্তি আলোচনা, জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা নীতিমালা ও কর্মকান্ড পরিচালনা,
ক্ষতিগ্রস্থ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থ ও প্রযুক্তি সংগ্রহ এবং বিতরণ,
অভিযোজন কৌশলগুলোতে উৎসাহদান এবং জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলা কর্মকান্ডে
অংশীজনদের (ব্যবসায়ী, সুধিসমাজ, দেশ) মধ্যে সহযোগিতা (সংলাপ, পার্টনারশীপ)
বৃদ্ধি করা। ১৯৯৫ সালে জার্মানীর বার্লিনে কপের ১ম সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয়।
কপ ১ Ñ ২৭ পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য অর্জনগুলো হচ্ছে কিয়োটো প্রটোকল (১৯৯৭),
প্যারিস চুক্তি (২০১৬) জলবায়ু পরিবর্তন নিরসন কর্মকান্ডে পৃথিবীর প্রায় সব
দেশকে একত্র করা। ক্ষতিগ্রস্থ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন
ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায় বিভিন্ন দেশের গৃহিত পদক্ষেপ মূল্যায়ন, অভিযোজন ও
ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ‘লস এন্ড ড্যামেজ’ তহবিল গঠন, জলবায়ু পরিবর্তন
মোকাবেলা সংক্রান্ত আকাক্সক্ষা বৃদ্ধি করা ইত্যাদি জলবায়ু ঝুঁকিপূর্ণ
দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুস
বাকুতে গমন করেছেন নিজেদের দাবী দাওয়া তুলে ধরার জন্য।
বাকুতে চলমান
বৈশি^ক জলবায়ু সম্মেলনে (কপÑ২৯) স্বল্পোন্নত ও অতিবিপন্ন দেশগুলোর নাগরিক
সমাজের প্রতিনিধিরা ভবিষ্যতের জন্য একটি কার্বনমুক্ত বিশ^ গড়তে জীবাশ্ম
জ¦ালানী সমাপ্তির সুনির্দিষ্ট প্রতিশ্রুতি দাবি করেছেন। ২০২৫-৩০ সময়কালের
জন্য নতুন সম্মিলিত জলবায়ু অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ধনী দেশগুলোকে
তাদের মোট জাতীয় আয়ের একটি অংশ প্রদানের দাবী জানানো হয়। ২০৪০ সালের মধ্যে
কয়লা ও জীবাশ্ম জ¦ালানীভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে হবে।
আমাদের বুঝতে হবে যে জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিঘাত ভবিষ্যতে ঘটবে এমনটি নয়
বরং বলা যায় এখনই ঘটছে। ২০২৩ এবং ২০২৪ এর অক্টোবর পর্যন্ত পৃথিবীর অনেক
অঞ্চলে রেকর্ড তাপপ্রবাহ, ঝড়, বন্যা, দাবানল, হিমবাহ, বিগলন, পানি সংকট ও
খরা, বজ্রপাত, জীববৈচিত্র ও বাস্তুতন্ত্র ধ্বংস, কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা
সংকট, জনস্বাস্থ্য সংকট এবং মানুষের স্থানচ্যুতি ও স্থানান্তরের মতো
ঘটনাগুলো আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে যে পৃথিবীর বহু অঞ্চলে
জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিঘাত শুরু হয়ে গেছে। কাজেই একে মোকাবেলায়
ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করা প্রয়োজন।
পরিবেশ ও প্রকৃতির বিরুদ্ধে ক্রমাগতভাবে
মানবসৃষ্ট নেতিবাচক কর্মকান্ড অব্যাহত রেখে শুধু সুপার প্রযুক্তির প্লাবন
ঘটিয়ে পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষা করা যাবে না। প্রযুক্তি আবিষ্কার হওয়া
পর্যন্ত বসে থাকা যে উচিত হবে না এ বিষয়ে কপ Ñ২৯ এ অংশগ্রহণকারী সব পক্ষকে
অনুধাবন করতে হবে। এখনই জীবাশ্ম জ¦ালানি ব্যবহারের পরিমাণ তাৎপর্যপূর্ণভাবে
হ্রাস করার ব্যাপারে বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। এছাড়া অভিযোজন
কৌশল উদ্ভাবন সংক্রান্ত কর্মকান্ড পরিচালনা এবং ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য
লস এন্ড ড্যামেজ তহবিল গঠনে মোটা অঙ্কের অর্থ সংগ্রহ ও সহজভাবে বিতরণের
ব্যাপারে কার্যকর ভূমিকা নেয়া দরকার। প্রকৃতি ও জীববৈচিত্র রক্ষায় সামগ্রিক
দৃষ্টিভঙ্গি নিতে হবে। শুধু বেছে বেছে টুরিষ্ট স্পট, বিখ্যাত বন ও বিভাময়
প্রাণী/বৃক্ষ রক্ষা করলে হবে না।
আজারবাইজানের বাকুতে চলমান বৈশি^ক
জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৯) স্বল্পোন্নত ও অতিবিপন্ন দেশগুলোর নাগরিক সমাজের
প্রতিনিধিরা ভবিষ্যতের দেশগুলোর নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা ভবিষ্যতের জন্য
একটি কার্বনমুক্ত বিশ^ গড়তে জীবাশ্ম জ¦ালানি সমাপ্তির সুনির্দিষ্ট
প্রতিশ্রুতি দাবি করেছেন। ২০২৫-৩০ সময়কালের জন্য নতুন সম্মিলিত জলবায়ু
অর্থায়নের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণে ধনী দেশগুলোকে তাদের মোট জাতীয় আয়ের একটি
অংশ প্রদানের দাবি জানানো হয়। ২০৪০ সনের মধ্যে কয়লা ও জীবাশ্ম
জ¦ালানিভিত্তিক বিদ্যুৎকে কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে হবে।
১১.১১.২৪ইং এর
সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে বাংলাদেশের ইকুইটিবিডির আমিনুল হক
বলেন, “কপ-২৯ আলোচনায় প্রস্তাবিত ১ বিলিয়ন ডলারের “ক্লাইমেট ফিন্যান্স
অ্যাকশন ফান্ড” বিষয়টি একটি অস্পষ্ট বিষয়। জলবায়ুর আর্থিক লক্ষ্যমাত্রা
নির্ধারণের জন্য উন্নত দেশগুলোর প্রতিশ্রুতি ট্রিলিয়ন ডলার নিশ্চিতকরণের
মূলদাবি থেকে দৃষ্টি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার কৌশল এটি। যদি উন্নত দেশগুলি
জীবাশ্ম জ¦ালানির ব্যবহার বন্ধ না করে এবং বৈশি^ক উষ্ণতা রোধ করতে ব্যর্থ
হয়, তাহলে জলবায়ু অর্থায়ন কোন কাজে আসবে না। এ প্রেক্ষাপটে আগামী ১০ বছর
২০২৫-২০৩৫ এর জন্য প্রশমন ও অর্থায়ন উভয় ক্ষেত্রেই বাস্তবসম্মত প্রতিশ্রুতি
দিতে হবে। ২০৫০ সালের মধ্যে কয়লা ও জীবাশ্মজ¦ালানি ভিত্তিক বিদ্যুৎ
কেন্দ্রগুলো বন্ধ করতে হবে। বিদ্যমান জলবায়ু অর্থায়ন ব্যবস্থা ঋণনির্ভর।
তাই জলবায়ু অর্থায়নের নতুন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণের পরিকল্পনায় অবশ্যই
উন্নত দেশগুলোর জিএনআইর একটি অংশের অন্তর্ভূক্তি নিশ্চিত করতে হবে। আমরা
আশা করছি আজারবাইজান ইউএনএফসিসির সমঝোতা আলোচনা ব্যবহার করে উপযুক্ত সমাধান
খুঁজে বের করার উদ্যোগ নেবে।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ