পৃথিবী ক্রমেই উত্তপ্ত হচ্ছে। আর এই বৈশ্বিক উষ্ণায়নের
কারণে বদলে যাচ্ছে জলবায়ুর ধরন। মেরু অঞ্চলে জমে থাকা বরফ গলে সমুদ্রের
পানির উচ্চতা বাড়াচ্ছে। উপকূলবর্তী নিম্নাঞ্চল তলিয়ে যাচ্ছে।
অনেক
দ্বীপদেশেরই অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। বাংলাদেশেরও উপকূলবর্তী
নিম্নাঞ্চল ক্রমেই তলিয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আবহাওয়া
ক্রমেই চরম ভাবাপন্ন হচ্ছে। কোথাও অস্বাভাবিক বন্যা, কোথাও চরম খরা আঘাত
হানছে।
ফলে সমগ্র মানবজাতির অস্তিত্বই আজ হুমকির মুখে। সেই হুমকি
মোকাবেলার লক্ষ্যে নানা ধরনের বৈশ্বিক উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে। তেমন একটি
প্রধান উদ্যোগ হচ্ছে কনফারেন্স অব পার্টিস (কপ)। গত ১১ নভেম্বর
আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে শুরু হয়েছে কপের ২৯তম সম্মেলন বা কপ২৯।
কিন্তু
কপের আগের সম্মেলনগুলোতে গৃহীত অনেক সিদ্ধান্তই বাস্তবায়িত না হওয়ায়
বর্তমান সম্মেলনের অর্জন কী হবে তা নিয়ে অংশ নেওয়া প্রতিনিধিদের মধ্যেই
অনেক সংশয় রয়েছে। তদুপরি যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারত, ফ্রান্স বা বড় অর্থনীতির
অনেক দেশের শীর্ষনেতাদের অনুপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো।
জাতিসংঘের
জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সংস্থা ইউএনএফসিসিসি (ইউনাইটেড নেশন্স ফ্রেমওয়ার্ক
কনভেনশন অন ক্লাইমেট চেঞ্জ) আয়োজিত এই সম্মেলন প্রথম শুরু হয় ১৯৯৫ সালে
জার্মানির বার্লিনে। সেই ধারাবাহিকতায় এই সম্মেলনের অনেক অর্জন রয়েছে। এর
মধ্যে রয়েছে কিয়োটো প্রটোকল, প্যারিস চুক্তি, জলবায়ু পরিবর্তন নিরসন
কর্মকাণ্ডে পৃথিবীর প্রায় সব দেশকে একত্র করা, ক্ষতিগ্রস্ত উন্নয়নশীল
দেশগুলোর জন্য বার্ষিক ১০০ বিলিয়ন ডলারের প্রতিশ্রুতি আদায়, ক্ষতিগ্রস্ত ও
ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোর জন্য ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল গঠন ইত্যাদি।
তা
সত্ত্বেও গৃহীত সিদ্ধান্তগুলোর বাস্তবায়ন সঠিকভাবে না হওয়ায় উন্নয়নশীল ও
ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে সম্মেলনের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ তৈরি হচ্ছে।
জলবায়ু
পরিবর্তনের কারণে সর্বাধিক ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশ অন্যতম।
আমাদের উপকূলের বিস্তীর্ণ এলাকা ডুবে যাওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। নোনা পানির
অনুপ্রবেশ ক্রমেই বাড়তে থাকায় চাষাবাদ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। উপকূলীয় জনজীবন
ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ক্রমেই বেশি করে মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হচ্ছে।
বড় শহরগুলোতে এসে আশ্রয় নিচ্ছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৬০ লাখের
বেশি মানুষ জলবায়ু উদ্বাস্তু হিসেবে অনিশ্চিত জীবন যাপন করছে। আশঙ্কা করা
হচ্ছে, ২০৫০ সাল নাগাদ এই সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি হতে পারে। ইউনিসেফের এক
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে প্রায় দুই কোটি শিশু প্রবল
ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া এগিয়ে চলেছে। কিন্তু
বাংলাদেশ বৈশ্বিক প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী যে ধরনের সহযোগিতা পাওয়ার কথা ছিল তা
থেকে বঞ্চিত হয়েই চলেছে।
আমরা আশা করি, মানবজাতির অস্তিত্ব রক্ষায় কপ২৯
কার্যকর ভূমিকা রাখবে। লস অ্যান্ড ড্যামেজ তহবিলসহ অন্যান্য তহবিল থেকে
বাংলাদেশসহ ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোকে পর্যাপ্ত সহযোগিতা করা হোক। কার্বন
নিঃসরণ কমাতে এবং পরিবেশসম্মত শক্তির ব্যবহার বাড়াতে বিশ্বকে কার্যকর
উদ্যোগ নিতে হবে।