বাড়ি-ঘর
ও অফিসের মালামাল বিক্রি করে পালিয়ে যাওয়ার খবর পেয়ে ‘সার্বিক কল্যাণ সংঘ’
নামে একটি বেসরকারি সমিতির পরিচালকের বাড়ি ঘেরাও ও তাকে অবরুদ্ধ করে
রাখেন পাঁচ শতাধিক ভুক্তভোগী গ্রাহক।
মঙ্গলবার (১২নভেম্বর) রাত ১১টার
দিকে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার জাফরগঞ্জ এলাকায় ‘সার্বিক কল্যাণ সংঘ’
নামের সমিতির পরিচালক অলিদুর রহমানকে তার নিজ বাড়ি ঘেরাও করে তাকে অবরুদ্ধ
করে রাখেন ক্ষুব্ধ গ্রাহকরা। অভিযুক্ত অলিদুর রহমান এই এলাকার মৃত শারাফত
আলী ছেলে।
জানা গেছে, দ্বিগুণ মুনাফা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে জাফরগঞ্জ ও
আশপাশ এলাকায় মধ্যবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত তিন হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে
প্রায় ৬ কোটি টাকা আমানত নেন ‘সার্বিক কল্যাণ সংঘের পরিচালক অলিদুর রহমান।
এসব আমানতের অধিকাংশ গ্রাহকের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার গত ৮ মাস ধরে গ্রাহকরা
আসল ও লভ্যাংশ টাকা ফেরত পাচ্ছেন না। এরই মধ্যে গত কয়েকদিন আগে অলিদুর
রহমান তার পরিবারের কাউকে না জানিয়ে ৬৬ লক্ষ টাকায় বাড়ি-ঘর বিক্রি করে দেন।
বাড়ি বিক্রি করায় অলিদুর রহমানের ছেলে ক্ষুব্ধ হয়ে সমিতির গ্রাহকদের জানায়
‘তার বাবা বাড়িঘর বিক্রি করে গ্রাহকদের সঞ্চয়ী টাকা নিয়ে পালিয়ে যাচ্ছেন’।
এই খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সাথে সাথে প্রায় ৫ শতাধিক গ্রাহক অলিদুর রহমানের
বাড়ি ঘেরাও করে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখেন।
সমিতির গ্রাহক জাফরগঞ্জ
ইউনিয়নের হাতিমারা গ্রামের নারগিছ আক্তার , সেলিনা বেগম, আবুল হোসেন বলেন,
আমরা প্রায় ৩৫ বছর ধরে সমিতিতে টাকা জমা ও উত্তোলন করি। এতদিন আমরা বিশ^াস
করে টাকা রাখছি। বাড়ি ঘর ও অফিস বিক্রি করে পালিয়ে যাচ্ছে শুনে টাকা ফেরত
নিতে এসেছি। আমরা আমাদের কষ্টাজির্ত জমানো টাকা ফেরত চাই।
একই
গ্রামের রাসেল রানা নামে এক বাসিন্দা বলেন, এই সমিতির কোন সরকারি নিবন্ধন
নেই, এটি একটি ভুয়া প্রতিষ্ঠান। গ্রামের সহজ সরল মানুষদের দ্বিগুণ লভ্যাংশ
দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেন অলিদুর রহমান। এদের
বেশির ভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ। এর মধ্যে আমার দুই ভাবির চার লাখ টাকা রয়েছে।
জাফরগঞ্জ
এলাকার ৬০ বছরের বৃদ্ধা বকুল বেগম বলেন, বাড়ি-বাড়ি ভিক্ষা করে সমিতিতে
টাকা জমাইছি। নাতিন একটা বিয়ের উপযুক্ত হইছে, তার বাপ নাই। এই টাকা দিয়ে
নাতিনরে বিয়ে দেমু কিন্তু গত তিন মাস ধরে সমিতির অফিসে আই আর যাই, আজ দেমু
কাল দেমু কইয়া ঘুরায়। এহন হুনতাছি আমাগো টাকা নিয়ে অলিদ মিয়া ভাইগা
যাইতাছে, আমার নাতিনের কি অইব বলে কান্নায় ভেঙে পড়ের বৃদ্ধা বকুল বেগম।
এ
বিষয়ে অভিযুক্ত সমিতির পরিচালক অলিদুর রহমান বলেন, মানুষের টাকা নিয়ে
পালাব না, সবাই কমবেশ টাকা ফেরত পাবেন, তবে আমাকে সময় দিতে হবে। বাড়ি
বিক্রি করছি এটা সত্য, কিন্তু আমার বাড়িতে আরও জায়গা আছে। আমার ছেলেই আমি
পালিয়ে যাচ্ছি এমন খবর ছড়িয়েছে। ব্যবসায় অনেক লোকশান হয়েছে। তাই বাড়ি
বিক্রি করে কিছু দেনা পরিশোধ করেছি।
দেবিদ্বার থানার অফিসার
ইনচার্জ (ওসি) মো. খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ
গিয়েছে। ভুক্তভোগী কোন গ্রাহক থানায় লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে তদন্ত
করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।