প্রকাশ: সোমবার, ১৮ নভেম্বর, ২০২৪, ১:৩৮ এএম আপডেট: ১৮.১১.২০২৪ ৩:১৩ পিএম |
বশিরুল ইসলাম:
কুমিল্লা
মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বাহিরে রোগীর ভিড় চেম্বারে কোন চিকিৎসা নেই। এ
বিষয়ে প্রশ্ন করায় ক্ষেপে গিয়ে পরিচালক বলেন, আপনি লিখতে
থাকেন। যা ইচ্ছা তাই লিখেন। কিছুই হবে না। আমি আপনি লিখে, বলে কিছুই করতে
পারবোনা। গতকাল রবিবার (১৭ নভেম্বর) কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে
হাজারের অধিক রোগী দীর্ঘক্ষণ চিকিৎসার জন্য দাড়িয়ে থাকায় ডাক্তারের
অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো: মাসুদ
পারভেজ এসব কথা বলেন। গতকাল সকাল ৯টায় কুমেক হাসপাতালে বহি: বিভাগে গিয়ে
দেখা যায় নিচ তলা ও দ্বিতীয় তলার কোন কক্ষে ডাক্তার নেই। হাসপাতালের
পরিচালককে ঠিক পৌনে নয়টায় মোবাইল নাম্বারে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি
ঢাকা থেকে আসতেছি। প্রত্যেক ডাক্তারকে রোস্টার করে দেওয়া আছে। যদি কোন
ডাক্তার দায়িত্ব পালন না করে বা দায়িত্বে অবহেলা করে তাহলে আমার কি করার
আছে। হাসপাতালে উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালক আছে তাদের সাথে দেখা করেন।
অভিযোগ রয়েছে হাসপাতালের পরিচালক শুক্র ও শনিবার ঢাকায় থাকেন হাসপাতালে অফিস
করেন না। অথচ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নিয়ম অনুযায়ী সরকারি হাসপাতালের অফিস
সময় শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল আড়াইটা পর্যন্ত । কিন্তু
অনেক ডাক্তার তা মানছেন না।
ঠিক নয়টা বাজতে দুই মিনিট বাকী এই
সময়হাসপাতালে উপ-পরিচালক ও সহকারী পরিচালকের চেয়ারটিও খালি দেখা যায় ।
তাদের খালি চেয়ারের ছবি তুল্লাম। কয়েকজন জিজ্ঞেস করছে ভাই ছবি তুলেন কেন।
বল্লাম এমনিতে। পরিচালকের কক্ষের সামনে বসে পরিচালকের জন্য অপেক্ষা করলাম।
২মিনিট পর তিনি আসলেন। কক্ষে প্রবেশ করলেন। বল্লেন দেখেন আমি মাত্র ঢাকা
থেকে এসেছি। এখনো নাস্তা পর্যন্ত করেনি। একজন নাস্তা দিতে চাইলেন। তার সাথে
মেজাজ দেখালেন। বল্লেন কখন কি করতে হবে তাও বুজতে পারোনা। অথচ ১মিনিট আগেই
তিনি বলেছিলেন আমাকে নাস্তা দাও।
তারপর তিনি একজনকে ডাকলেন এবং
বল্লেন সাংবাদিকের রোগীটাকে দেখিয়ে দাও। আবার নিচ তলায় গেলাম সেখানে গিয়ে
একজন ইন্টার্ণী এবং একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক দেখলাম তিনি রোগী দেখছেন। যদিও
তিনি এখানের ডাক্তার নন। । তবে ১২০ নং কক্ষে ও অন্যান্য কক্ষে এখনো কোন
ডাক্তার আসেনি। চক্ষু ডাক্তার তিনি শ^াস কষ্টের রোগী তিনি নিজেই অসুস্থ্য
তাই আসতে দেরি হচ্ছে। দি¦তীয় তলায় ও কোন ডাক্তার দেখতে পাওয়া যায়নি। ২১৭ নং
কক্ষে একজন সার্জারী ডাক্তারের রোমে গিয়ে দেখা গেল একজন ওয়ার্ডবয় রোগীকে
ড্রেসিং করছেন।
নিচ তলায় ১২৪ নং কক্ষের সামনে দাড়ানো নুরপুরের বাবুল
মিয়া (৪৮) জানান, সকাল ৭টায় এসেছি। এখন ৯টা বাজে সিরিয়ালে দাড়িয়ে আছি।
ডাক্তারের কোন খবর নেই।
দেবিদ্বারের তালতলা এলাকার অহিদ উদ্দিন(৪৫)
জানান, আমি ৭টায় এসেছি। দীর্ঘ লাইনে দাড়িয়ে আছি কিন্তু ডাক্তার এখনো আসেনি।
দীর্ঘ লাইনে এত রোগী ডাক্তার কখন দেখবে জানিনা। আমাদের কষ্ট দেখার কেউ
নেই।
১২৩নং কক্ষের সামনে দাড়ানে নাজমা(৩০) । তিনি কুমিল্লা ইপিজেডে
ব্রান্ডিক্স কোম্পানীতে চাকুরী করেন। তিনি অফিস থেকে ছুটি নিয়ে সকাল সাড়ে
৭টায় এখানে সিরিয়ালে দাড়িয়েছেন। এখন ৯টা বেজে গিয়েছে কিন্তু ডাক্তার এখনো
চেম্বারে আসছেন না। আমি ডাক্তার দেখিয়ে কখন অফিসে যাব এখনো বলতে পারছিনা।
চান্দিনার
তুলাতুলি এলাকার ছালমা জানান, ভোরে ৬টায় চলে এসেছি সিরিয়ালে আগে রোগী
দেখানোর জন্য। যদি পরিক্ষা নিরিক্ষা করতে হয় তাই পরিক্ষা করিয়ে একেবারে
রিপোর্ট দেখিয়ে চলে যাব। কিন্তু সকাল সকাল এসেও কোন কাজ হচ্ছেনা। এখনো
ডাক্তার আসেননি। আজকে মনে হয় ডাক্তার দেখিয়ে আবার কাল আসতে হবে।
উল্লেখ্য
শুক্রবারসহ অন্যান্য সরকারি ছুটির দিনে বহির্বিভাগে সেবা বন্ধ থাকে। তবে
জরুরি বিভাগ এবং আন্তর্বিভাগ সার্বক্ষণিক চালু থাকে। এছাড়াও সরকারি
স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মসূচি যেমন ইপিআই, হজসেবা, যক্ষা পরীক্ষা ইত্যাদি
সেবামূলক কর্মসুচি বহির্বিভাগে সেবা প্রদানের সময় পালন করা হয়। সারা দেশের
সরকারি হাসপাতালের অফিস সময় শনিবার থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা থেকে বিকাল
আড়াইটা পর্যন্ত বহির্বিভাগে ডাক্তার উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।