মালিকের অনুপস্থিতি, ঋণখেলাপি হওয়া, বড় দুর্নীতির অভিযোগ ওঠাসহ নানা কারণে বেসরকারি মালিকানাধীন শিল্পপ্রতিষ্ঠানে রিসিভার বা প্রশাসক নিয়োগের অনেক ঘটনা অতীতেও ঘটেছে। কিন্তু সেসব প্রশাসক নিয়োগের অভিজ্ঞতা একেবারেই ভালো নয়। স্বাধীনতার পর পাকিস্তানি নাগরিকদের মালিকানাধীন পাটকলগুলোর মালিকরা দেশত্যাগের পর সেগুলো সরকারি মালিকানায় নিয়ে প্রশাসক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। এর ফলাফল আমাদের অজানা নয়।
অনেকগুলোই বন্ধ হয়ে গেছে, না হয় ব্যক্তিমালিকানায় দিয়ে দেওয়া হয়েছে। সরকারি মালিকানাধীন অন্য মিলগুলোও হয় বন্ধ হয়ে আছে, না হয় রুগ্ন প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। অনেক মিল সরকার একাধিকবার চালানোর চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। অনেক সরকারি অর্থের অপচয় হয়েছে।
সেই একই প্রক্রিয়া এখনো চলমান। শোনা যাচ্ছে, নতুন নতুন বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠানেও রিসিভার/প্রশাসক নিয়োগ প্রদানের চিন্তা-ভাবনা চলছে। এতে শিল্পোদ্যোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। অর্থনীতিবিদরাও একে ভালো চোখে দেখছেন না।
গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর ‘আওয়ামী লীগ ঘনিষ্ঠতার’ অভিযোগ ওঠে অনেক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তার বিরুদ্ধে। অনেক ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাকে দৃশ্যমান কিংবা অদৃশ্য অনেক ধরনের চাপ মোকাবেলা করতে হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। অনেকে স্বাভাবিকভাবে শিল্প বা ব্যবসা পরিচালনা করতে পারছেন না। এতে কর্মচারীদের বেতন কিংবা ব্যাংকের ঋণ পরিশোধেও সমস্যা হচ্ছে। একেকজন মালিক সারা জীবনের কঠোর পরিশ্রম দিয়ে তিল তিল করে যে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন, তা যখন ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়, তখন তাঁদের মানসিক অবস্থা কেমন হয়, তা সহজেও অনুমেয়।
সেই পরিস্থিতিতে রিসিভার বা প্রশাসক নিয়োগের বিষয়টি তাঁদের জন্য আরো বড় দুর্ভাবনার কারণ হয়ে উঠেছে। ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবুল কাসেম খান বলেছেন, ‘দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভালো নেই ব্যবসা-বাণিজ্য। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি, ব্যাংকঋণের উচ্চ সুদের হার এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতির সার্বিক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। এর মধ্যে বেসরকারি কোনো কোনো বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মালিকরা রাজনৈতিক আক্রোশে পড়েছেন। লাল তালিকাভুক্ত হয়েছেন। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানে প্রশাসক নিয়োগের আশঙ্কায় মনোবল হারাচ্ছেন তাঁরা।’ নিট ব্যবসায়ীদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেছেন, ‘রাজনৈতিক মতাদর্শ যা-ই হোক না কেন, একজন উদ্যোক্তাকে রাজনৈতিক ব্যক্তির পরিবর্তে ব্যবসায়ী হিসেবেই বিবেচনা করতে হবে। বিচার ছাড়াই যদি মিডিয়া ট্রায়ালে আমরা দেশীয় শিল্প ধ্বংস করে ফেলি, তাহলে তা অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।’
দেশের অর্থনীতি এমনিতেই নানামুখী চাপ মোকাবেলা করছে, তার ওপর সরকারের গৃহীত কিছু কর্মকাণ্ডের কারণে বেসরকারি উদ্যোগ যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তার পরিণাম হবে রীতিমতো বিপর্যয়কর। বেসরকারি খাতকে কিভাবে আরো এগিয়ে নেওয়া যায়, আমরা আশা করি, সরকার সে লক্ষ্যেই সব কর্মকাণ্ড পরিচালনা করবে।