শুক্রবার ২৯ নভেম্বর ২০২৪
১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১
কপ-৯ এর আশাবাদ
অধ্যাপক ডাঃ মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর, ২০২৪, ১২:৩০ এএম |

 কপ-৯ এর আশাবাদ
জলবায়ু পরিবর্তন সম্মেলন কপ-২৯ চলাকালে ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে সম্মেলনে বসেছিলেন জি-২০ এর নেতারা। আশা ছিল রিও থেকে ইতিবাচক কোন ইঙ্গিত বাকুতে আসবে, যা অর্থায়নের জট কাটাতে সহায়তা করবে। তবে ১৯ শে নভেম্বর’২৪ রোজ মঙ্গলবার আরেকটি হতাশার বানি গেল বাকুতে। পরিবেশের উন্নতিতে প্রয়োজনীয় অর্থায়ন ও পদ্ধতি নিয়ে উন্নত ও উন্নয়নশীল বিশে^র দড়িটানাটানির অবসান কিভাবে ঘটবে তার স্পষ্ট কোন ইঙ্গিত নাই। জলবায়ুর স্বার্থে ২০২০ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত প্রতিবছর উন্নত বিশ^ উন্নয়নশীল দেশগুলোকে ১০ হাজার কোটি ডলার দিচ্ছে। অথচ এ অর্থও অত্যন্ত স্বল্প। এতে তাপমাত্রা কমত হয়ইনি, বরং শূন্য দশমিক ৮ ডিগ্রী বেড়ে গেছে। তাপমাত্রার বৃদ্ধি দেড় ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যন্ত ধরে রাখতে হলে এখন তাই প্রয়োজন বছরে এক লাখ কোটি ডলার। এটিই নতুন লক্ষ্য বা এনসিকিউ রিও সম্মেলনের ঘোষণায় জি Ñ২০ এর নেতারা জলবায়ুর উন্নতিতে তার একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত হয়ত রিও থেকে আসবে, কিন্তু তা এল না।
জলবায়ু বিপন্ন বিশ^বাসীর জন্য কোন আশার বানী থাকছে না বলে মনে করছেন জলবায়ু আন্দোলনের নেতারা। সুইডেনের আলোচিত জলবায়ু অধিকার কর্মী গ্রেটা থুনবার্গ এরই মধ্যে বাকু সম্মেলনের সম্ভাব্য ঘোষণাকে বিশে^র জন্য ‘মৃত্যু পরোয়ানা’ হিসাবে ঘোষণা করেছেন। বাংলাদেশের পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য বছরে ৩০০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বরাদ্দের প্রস্তাব আশ্চর্যজনকভাবে অপ্রতুল। এ বরাদ্দকে অনুদান হিসাবে চিহ্নিত করা হয়নি এবং এটি কোন নির্দিষ্ট ব্যবস্থার আওতায়ও নেই। অন্যদিকে জাতিসংঘের জলবায়ুবিজ্ঞানী সংগঠন আইপিসিসিসি থেকে বলা হয়েছে, এ শতাব্দীর মধ্যে বিশে^র তাপমাত্রা আর যাতে ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি না বাড়ে, সে ব্যাপারে প্যারিস চুক্তিতে অঙ্গিকার করেছিল বিশে^র সব রাষ্ট্র। কিন্তু এরই মধ্যে গত ২৪ বছরে বিশে^র তাপমাত্রা ১ দশমিক তিন ডিগ্রী সেলসিয়াস বেড়ে গেছে। এ শতাব্দীর মধ্যে তাপমাত্রা ২ ডিগ্রী সেলসিয়াসের বেশি যাতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে হলে ২০৩০ সালের মধ্যে বিশ^কে কার্বন নিঃসরণ ৪৩ শতাংশ কমাতে হবে। যে অঙ্গিকার যুক্তরাষ্ট্র, চীন, জাপান, ভারতসহ বিশে^র প্রধান কার্বন নিঃসরণকারী কোন দেশই করছে না।
বাকু সম্মেলনে অংশ নেয়া বাংলাদেশের জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সমঝোতাকারী দলের সদস্য জিয়াউল হক বলেন, অনেক হতাশার মধ্যেও বাকু সম্মেলনে সামান্য কিছু অগ্রগতি হয়েছে। শেষ সময় এসে তহবিলের অর্থ তারা বাড়িয়েছে। প্যারিস চুক্তির ৯ দশমিক ১ ধারা অনুযায়ী জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় তহবিলে বাংলাদেশের মত জলবায়ু বিপন্ন উন্নয়নশীল দেশগুলো অগ্রাধিকার পাবে। ফলে বাংলাদেশকে তহবিল পাওয়ার জন্য প্রস্তুতি বাড়াতে হবে। বাকু সম্মেলনে অংশ নেয়া ব্রাক বিশ^বিদ্যালয়ের ইমিরিটাস অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, জাতিসংঘ জলবায়ু তহবিলে অর্থের পরিমাণ বড়ানো দরকার। এজন্য বাংলাদেশকে আরও সোচ্চার হতে হবে, এটা ঠিক। তবে সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে ঐ তহবিল থেকে প্রকল্প পেতে হলে বাংলাদেশকে অনেক বেশি দক্ষতা বাড়াতে হবে।
একদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলার অর্থ দিতে রাজি হচ্ছে না উন্নত বিশ্ব। আবার তারা ক্ষয়ক্ষতি কমাতে কার্বন নিঃসরণ কমাতেও রাজি হচ্ছে না। ইউরোপের শীত প্রধান দেশগুলো এবং যুক্তরাজ্যসহ কয়েকটি দেশ থেকে কার্বন নিঃসরন কমানো ও তহবিলে অর্থ বাড়ানোর ব্যাপারে অঙ্গীকার বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু তা রাষ্ট্রীয় সহায়তা হিসাবে দেয়া হবে, নাকি ঋণ হিসাবে দেয়া হবে বা বৈদেশিক সহায়তার অংশ হিসাবে দেয়া হবে, তাও নিশ্চিত করে বলা হচ্ছে না। কপ-২৯ এর পর্যবেক্ষকরা বলছেন, শিল্পোন্নত দেশগুলোতে প্যারিস চুক্তির বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক নেতারা আবারও ক্ষমতায় ফিরতে শুরু করছেন। যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প এরই মধ্যে নির্বাচনে জয়ী হয়েছেন। কানাডা, জার্মানী, ইতালী, নেদারল্যান্ডস ও ফ্রান্সের ডানপন্থীরা জনপ্রিয় হচ্ছেন। ফলে জলবায়ু বিপন্ন দেশগুলোর চাহিদা অনুযায়ী ১ দশমি ৩ ট্রিলিয়ন ডলার তহবিলের অর্থ অঙ্গীকার করতে রাজী হচ্ছে না উন্নত রাষ্ট্রগুলো।
ড. মোঃ ইউনুস ১১ ই নভেম্বর’২৪ বাকুতে পৌঁছান। সম্মেলনের ফাঁকে তাঁর সঙ্গে তুরষ্কের প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান ও আমিরাতের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ বিন জায়েদ আল নাহিয়ানসহ বেশ কয়েকজন বিশ^নেতা সাক্ষাত করেন। তবে শিল্পোন্নত ২০ দেশের মধ্যে মাত্র কয়েকটি দেশের নেতারা সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। শিল্পোন্নত দেশগুলো বিশ^ব্যাপী ক্ষতিকর গ্যাস নির্গমনের প্রায় ৮০ শতাংশের জন্য দায়ী। এ কারণে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের অনেকটা সময় জুড়ে ছিল প্রতিবাদ আর বিক্ষোভ। ২৩ শে নভেম্বর’২৪ এর সম্মেলন শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর পক্ষে ক্ষুদ্র দীপরাষ্ট্রগুলোর জোট এওসিস এবং স্বল্পোন্নত রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে সম্মেলন বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ দেশগুলোর দিকে মনযোগ দেয়া হচ্ছে না বলে ধনী দেশগুলোর উপর অভিযোগ তুলে বর্জনের ঘোষণা দেয়া হয়। জাতিসংঘের বার্ষিক এ সম্মেলন ‘কনফারেন্স অব পার্টিস’ বা কপ নামে পরিচিত এতে যোগ দেন বিশে^র ১০০ টি রাষ্ট্রের রাষ্ট্র প্রধান। এ ছাড়া বিভিন্ন দেশের ৭০ হাজার প্রতিনিধি এতে অংশ নেন।
বাকু জলবায়ু সম্মেলনের নাম দেয়া হয়েছিল ‘ফাইনান্স কপ’ বা ‘জলবায়ু আর্থিক সম্মেলন’। কিন্তু ২০০ টি দেশের প্রতিনিধিরা দুই সপ্তাহ বৈঠক করেও কোন সমাধানে পৌঁছাতে পারেনি। গত ২২ শে নভেম্বর’২৪ থেকে টানা দুই দিনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকেও আসেনি কাংখিত ফল। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলো তাদের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতি পোষাতে বছরে ১ দশমিক ৩ ট্রিলিয়ন (এক লাখ ৩০ হাজার কোটি) ডলার চেয়েছে। আর শিল্পোন্নত দেশগুলো বছরে সর্বোচ্চ ৩০০ বিলিয়ন (৩০ হাজার কোটি) ডলার দিতে রাজী হয়েছে। তাও ঐ অর্থ শুধু তারা একলা দেবে না, ভারত, চীন ও ব্রাজিলের মত দ্রুত উন্নয়নশীল দেশগুলোকেও তহবিলে অর্থ জমা দিতে হবে। এ ঘোষণা বিশে^র সব দেশের সম্মতির ভিত্তিতে হবে, নাকি নোট আকারে থাকবে, তা নিয়েও সংশয় রয়ে গেছে। কপ সম্মেলন ১১ ই নভেম্বর শুরু হয়ে ২৩ শে নভেম্বর’২৪ শনিবার শেষ হয়েছে। 
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ












সর্বশেষ সংবাদ
কুমিল্লা স্টেডিয়ামে শহীদ জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্ট শুরু আজ
হেফাজতে ইসলাম কুমিল্লা মহানগরের বিক্ষোভ
ট্রেনের ধাক্কায় নিহত ৭ জনের পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে বিতরণ
ভাষা সৈনিক অজিত গুহ মহাবিদ্যালয়ে জুলাই বিপ্লব-২০২৪ স্মরণসভা
প্রবাসীদের ভোটের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে -
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
ইশরাকের পোস্ট শেয়ার করে উপদেষ্টা নাহিদের মন্তব্য
বদলি হলেন ডিএমপির ৬ এডিসি-এসি
৪০ কেজি গাঁজাসহ ধরা পড়লেন নেটফ্লিক্স অভিনেত্রী
১১৭ বছরের মধ্যে রেকর্ড তুষারপাত সিউলে, নিহত ৪
অস্ট্রেলিয়া দলে প্রথমবার ডাক পেলেন ওয়েবস্টার
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২