কোনো ধরনের ভেজাল, দুর্নীতি, অন্যের হক নষ্ট করা, নিজের দায়িত্বে অবহেলা করা, বিশ্বাস ভঙ্গ করা ইসলামে আমানতের খেয়ানতের মধ্যে পড়ে।
ইসলামে আমানত রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ ফরজ কর্তব্য।
অমানতের
খেয়ানত করা মহাপাপ। একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো সব ধরনের আমানতের ব্যাপারে
যত্নবান থাকা। কোরআনে সুরা মুমিনুনের শুরুতে মুমিনদের গুণ বর্ণনা করতে
গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
যারা নিজদের আমানতসমূহ ও অঙ্গীকারের ব্যাপারে যত্নবান। (সুরা মুমিনুন: ৮)
হকদারদের কাছে তাদের হক বা আমানত পৌঁছে দেওয়া ও ন্যায়বিচারের নির্দেশ দিয়ে আরেকটি আয়াতে আল্লাহ সুবাহানাহু ওয়াতাআলা বলেন,
নিশ্চয়
আল্লাহ তোমাদেরকে আদেশ দিচ্ছেন আমানতসমূহ তার হকদারদের কাছে পৌঁছে দিতে।
আর যখন মানুষের মধ্যে ফয়সালা করবে তখন ন্যায়ভিত্তিক ফয়সালা করবে। (সুরা
নিসা: ৫৮)
আমানতদারিতারকে কোরআনে আল্লাহর নবি-রাসুল এবং আল্লাহর
নৈকট্যশীল ফেরেশতা হজরত জিবরাইলের (আ.) এর বিশেষ গুণ হিসেবে উল্লেখ করা
হয়েছে। সুরা শুআরায় কয়েকজন রাসুলের আলোচনা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে যে, তারা
তাদের উম্মতদের বলেছেন,
আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত আমনদার
রাসুল। সুতরাং আপনারা আল্লাহকে ভয় করো এবং আমার আনা নির্দেশাবলির আনুগত্য
করুন। (সুরা শুআরা: ১৭৮ - ১৭৯)
সুরা তাকভীরে জিবরাইলকেও ‘আমিন’ অর্থাৎ আমানতদার বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন,
নিশ্চয়
এ কোরআন সম্মানিত রাসুলের (জিবরাইলের) আনিত বাণী। যে শক্তিশালী, আরশের
মালিকের নিকট মর্যাদাসম্পন্ন। সেখানে সে মান্যবর, আমানতদার। (সুরা তাকভীর:
১৯-২১)
আল্লাহর রাসুলের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বিভিন্ন
হাদিসেও আমানত রক্ষার গুরুত্ব ও ফজিলত বর্ণিত হয়েছে। আনাস ইবনে মালেক (রা.)
বলেন, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) তার প্রায় প্রতিটি
খুতবায় বলতেন, যার মধ্যে আমানতদারিতা নেই, তার ঈমান নেই, যার কাছে নিজের
ওয়াদা বা কথার মূল্য নেই, তার দীন বলতে কিছু নেই। (মুসনাদে আহমদ)
আমানতের
খেয়ানতকে মুনাফিকদের একটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করে আল্লাহর রাসুল
(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, চারটি স্বভাব যার মধ্যে পাওয়া
যাবে, সে খালিস মুনাফিক বলে গণ্য হবে। যে ব্যক্তি কথা বলার সময় মিথ্যা বলে,
অঙ্গীকার করলে ভঙ্গ করে, প্রতিশ্রুতি দিলে বিশ্বাসঘাতকতা করে, ঝগড়ার সময়
গালাগালি করে। যার মধ্যে এগুলোর কোন একটি স্বভাব পাওয়া যাবে, তার মধ্যে
নিফাকের একটি স্বভাব পাওয়া গেল, যতক্ষণ না সে তা পরিত্যাগ করে। (সহিহ
বুখারি: ৩১৭৮)