বিদেশ
থেকে ফেরার পর ঢাকা বিমানবন্দরে বাংলাদেশের ক্রীড়াবিদদের সুখকর স্মৃতি
কমই। আজ (বৃহস্পতিবার) সকালটি ছিল একটু ব্যতিক্রম। ওমান থেকে ফেরা
অনূর্ধ্ব-২১ হকি দল বেশ ফুরফুরে মেজাজে ছিল। সঙ্গে কোনো ট্রফি না থাকলেও
দলটি যুব বিশ্বকাপ নিশ্চিত করায় বিমানবন্দরে ছিল উৎসবমুখর পরিবেশ।
সাবেক
জাতীয় খেলোয়াড় মওদুদুর রহমান শুভ ছিলেন অ-২১ দলের কোচ। খেলোয়াড় হিসেবে যুব
বিশ্বকাপ খেলতে ব্যর্থ হলেও কোচ হিসেবে তিনিও এই সাফল্যের অংশ। প্রায় সব
খেলোয়াড় বিকেএসপির হওয়ায় তাদের শক্তি-সামর্থ্য ভালোই জানা তার। তাই দেশে পা
রেখেই শুভ বললেন, ‘এবার বাংলাদেশের খেলা দেখে ভারত, চীন, মালয়েশিয়া অনেক
প্রশংসা করেছে। আমরা ছয় ম্যাচের মধ্যে মাত্র ১টি হেরেছি। এই খেলোয়াড়দের
নিয়মিত অনুশীলন ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হলে তাদের পক্ষে সিনিয়র বিশ্বকাপ
খেলাও সম্ভব।’
বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর বাস অপেক্ষা করছিল যুব
খেলোয়াড়দের জন্য। সেই বাসে করে রাজধানীর ফ্যালকন হলে যান খেলোয়াড় ও কোচিং
স্টাফরা। সেখানে বাংলাদেশ হকি ফেডারেশনের পক্ষ থেকে খেলোয়াড়দের সংবর্ধনা
দেওয়া হয়।
হকি ফেডারেশনের সভাপতি বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ
মার্শাল হাসান মাহমুদ খান। তিনি খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে প্রাথমিক বক্তব্যে
বলেন, ‘তোমাদের এই সাফল্যে দেশবাসী গর্বিত। আমাদের মূল লক্ষ্য সিনিয়র
বিশ্বকাপে খেলা।’ বাংলাদেশের অনেক খেলায় খেলোয়াড়দের মধ্যে দ্বন্দ্ব ও নানা
সমস্যা প্রকাশ্যে আসে। যুব হকি খেলোয়াড়দের সেসব থেকে দূরে থাকার পরামর্শ
সভাপতির, ‘সব সময় টিম হয়ে থাকবে। কোনো বদ অভ্যাসের সঙ্গে জড়াবে না, সর্বদা
শৃঙ্খলা বজায় চলবে।’
বিশ্বকাপ নিশ্চিত করা খেলোয়াড়দের সঙ্গে ফেডারেশন
কর্তারা ফটোসেশন করেছেন। প্রত্যেকের গলায় ফুলের মালাও পরিয়ে দেওয়া হয়।
ফেডারেশনের পক্ষ থেকে প্রদান করা হয় ৫ লাখ টাকা আর্থিক পুরস্কারও।
খেলোয়াড়দের
সংবর্ধনা প্রদান শেষে গণমাধ্যমের মুখোমুখি হন ফেডারেশন সভাপতি। আগামী বছর
ডিসেম্বরে ভারতে যুব বিশ্বকাপের আগে আরও বেশি সময় অনুশীলনে রাখতে চান তিনি,
‘প্রথমবার আমরা যুব বিশ্বকাপে খেলব। প্রথমেই বিশ্বকাপ জয়ের প্রত্যাশা
বাস্তবিক হবে না। আমরা আমাদের যথাসাধ্য ভালো পারফরম্যান্সের প্রত্যাশা করব।
এবার তিন মাসের মতো অনুশীলন হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে এক বছর সময় রয়েছে যা
যথেষ্ট। আমরা অন্তত মাস ছয়েকের অনুশীলনের ব্যবস্থা করব।’
হকি ফেডারেশনের
সভাপতি নিজে ক্রিকেট ও বাস্কেটবল খেলেছেন। এরপরও বাংলাদেশ হকি দলের
দুর্বলতা চোখে পড়েছে তার, ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন দলেরও উন্নতির জায়গা থাকে।
আমাদের তো অবশ্যই রয়েছে। বিশেষ করে পেনাল্টি কর্নার ও পেনাল্টিতে (পেনাল্টি
স্ট্রোক) আমাদের আরও ভালো করতে হবে।’
বিশ্বকাপে ইউরোপ, ল্যাটিন
আমেরিকার দলও অংশ নেবে। নানা সূচকে তারা বাংলাদেশের চেয়ে এগিয়ে। বিশ্বকাপের
প্রস্তুতির জন্য বিদেশি কোচ, বিদেশে অনুশীলনও প্রয়োজন। সেলক্ষ্যে সামিনদের
উন্নত প্রশিক্ষণ ও প্রয়োজনে বিদেশি কোচ আনার আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন সভাপতি।
যুব হকি দল ক্যাম্প চলাকালে মাত্র ৪০০ টাকা ভাতা পায়। বর্তমান সময়ের
প্রেক্ষিতে যা খুবই কম। ভাতা ছাড়াও খেলার সরঞ্জাম এবং আরও অনেক
প্রতিবন্ধকতা রয়েছে খেলোয়াড়দের। সভাপতি খেলোয়াড়দের সামগ্রিক সহায়তা দেওয়ার
আশ্বাস দিয়েছেন, ‘আমরা অবশ্যই আমাদের যথাসাধ্য চেষ্টা করব খেলোয়াড়দের
সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার জন্য।’
হকি ফেডারেশনে এখন অ্যাডহক কমিটি। এই কমিটির
ওপর আস্থা রেখে সভাপতি বলেন, ‘বর্তমান কমিটির শুধু একটি লক্ষ্য হকিকে
এগিয়ে নেওয়া। আশা করি হকি সামনে আরও এগিয়ে যাবে।’ হকি প্রিমিয়ার লিগ বেশ
অনিয়মিত। অ্যাডহক কমিটি সেই সংস্কৃতি দূর করতে চায়। এজন্য আগামী বছরের
মার্চে লিগ আয়োজনের পরিকল্পনা করছে।