নিকট
অতীতে এমন অনেক প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, যেগুলোর বাস্তব উপযোগিতা খুবই কম।
এমন অনেক সেতু তৈরি করা হয়েছে, যেগুলোর কোনো সংযোগ সড়ক নেই। এসব নিয়ে
গণমাধ্যমে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে, কিন্তু অপ্রয়োজনীয় বা কম প্রয়োজনীয়
প্রকল্প গ্রহণ বন্ধ থাকেনি। কারণ এসবের সঙ্গে মন্ত্রী, এমপি, আমলা বা আরো
কারো কারো স্বার্থ জড়িত থাকে।
অন্তর্র্বতী সরকার এরই মধ্যে এমন বেশ কিছু
অবাস্তবায়িত প্রকল্প বাতিল করেছে কিংবা বাস্তবায়ন স্থগিত রেখেছে। গতকাল
কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের
নির্বাহী কমিটি (একনেক) এমন আরো কিছু প্রকল্পের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে
পারে।
জানা গেছে, গত ১৯ আগস্ট পরিকল্পনা কমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে
বৈঠকে রাজনৈতিক বিবেচনায় নেওয়া এবং কম গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পের তালিকা করার
নির্দেশ দিয়েছিলেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। ওই নির্দেশের
পর বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের পক্ষ থেকে এ ধরনের প্রকল্পের তালিকা তৈরির
কাজ শুরু হয়।
জানা যায়, এর মধ্যে ৪০টির মতো প্রকল্প বাতিল অথবা স্থগিত
রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, এই তালিকা আরো
দীর্ঘ হবে। তারা জানান, বিগত সরকারের সময় নেওয়া প্রকল্প তিনটি দিক বিবেচনা
করে বাতিল করা হচ্ছে। এসব হচ্ছে প্রকল্পটি কতটা মানুষের প্রয়োজনে নেওয়া
হয়েছে, প্রকল্প থেকে রিটার্ন কেমন আসবে এবং প্রকল্পটি পরিবেশের জন্য
ক্ষতিকর কি না।
বাতিলের তালিকায় যেসব প্রকল্প রয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম
হচ্ছে সুনামগঞ্জের সঙ্গে নেত্রকোনার সড়ক যোগাযোগ স্থাপনে হাওরে উড়ালসড়ক
নির্মাণ। সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের আগ্রহে নেওয়া এই প্রকল্পটির
ব্যয় ধরা হয় তিন হাজার ৪৯০ কোটি টাকা। সম্প্রতি পরিকল্পনা কমিশনের এক সভায়
প্রকল্পটি বাতিলের সিদ্ধান্ত হয়। কারণ হিসেবে বলা হয়, হাওরে উড়ালসড়ক
নির্মিত হলে পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে। সাবেক
পরিবেশমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিনের আগ্রহে মৌলভীবাজারের লাঠিটিলা বনে
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্ক শীর্ষক একটি প্রকল্প নেওয়া হয়।
পরিবেশবাদীদের
মতে, বনের মধ্যে এ ধরনের সাফারি পার্ক নির্মিত হলে তা প্রকৃতি ও পরিবেশের
জন্য আত্মঘাতী হবে। কিন্তু পরিবেশবাদীদের আপত্তি অগ্রাহ্য করেই প্রকল্পটি
গ্রহণ করা হয়েছিল। জানা যায়, এই প্রকল্পটিও বাতিলের সিদ্ধান্ত নিয়েছে
পরিকল্পনা কমিশন। এ ছাড়া আরো কিছু প্রকল্পের ব্যাপারে অনুরূপ সিদ্ধান্ত
নেওয়া হতে পারে।
আমরা আশা করি, নিকট ভবিষ্যতে জরুরি জনকল্যাণ বিবেচনায়ই কেবল প্রকল্প নেওয়া হবে এবং দ্রুততম সময়ে সেগুলো বাস্তবায়ন করা হবে।