কুমিল্লার
লাকসামে ফসলী জমির পর মাটিখেকোদের থাবা এবার খালপাড়ে। উপজেলার বাকই
(দক্ষিণ) ইউনিয়নের অশ্বদিয়া সরকারি খালের মাটি নিয়ে চলছে হরিলুট। প্রতিদিন
প্রায় ৪-৫টি খননযন্ত্র (ভেকু মেশিন) দিয়ে মাটি কেটে অবৈধ ট্রাক্টরের
মাধ্যমে ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে মাটিখেকোরা। সংবাদ পেয়ে
উপজেলা প্রশাসন ঘটনাস্থলে যান এবং মাটি বহনকারী ৪টি অবৈধ ট্রাক্টর জব্দ
করেন।
রবিবার (২২ ডিসেম্বর) সন্ধায় লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাউছার হামিদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সরেজমিনে
গিয়ে দেখা গেছে, উপজেলার বাকই (দক্ষিণ) ইউনিয়নের অশ্বদিয়া গ্রামে মাঠের
পাশ দিয়ে বয়ে গেছে, বিজরা-নোয়াপাড়া খাল। ওই খালপাড়ের মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে
স্থানীয় প্রভাবশালী একটি মাটিখেকো সিন্ডিকেট।
একাধিক সূত্রে জানা গেছে,
গত দু'বছর আগে সরকারি অর্থায়নে খাল খনন করে মাটিগুলো খালের পাড়ে রাখা
হয়েছিল। গত ৪-৫দিন ধরে মাটিখেকো একটি প্রভাবশালী চক্র অবৈধভাবে এসব মাটি
বিক্রয় করে দিয়েছে। তারা অবৈধ ট্রাক্টরের মাধ্যমে এসব মাটি ইটভাটাসহ
বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রতি ট্রাক্টর মাটি ২হাজার থেকে ২ হাজার
৫০০ টাকায় ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন।
নাম প্রকাশ না করার
শর্তে এলাকার একাধিক ব্যক্তি জানান, বাকই গ্রামের লালু মিয়ার নেতৃত্বে ও
ফলুয়া গ্রামের জাফর এবং তারাপুর গ্রামের আক্তারের সহযোগিতায় খালপাড়ের মাটি
ইটভাটাসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করছেন। এ যেনো হরিলুট চলছে। এসব মাটি নিয়ে
একটিচক্র ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের পুকুর,ডোবা এবং জলাশয় ভরাট করছে।
এ
বিষয়ে জানতে চাইলে লালু মিয়া বলেন, আমি একা নই। আরও অনেকেই খালপাড়ের এসব
মাটি খননযন্ত্রের (ভেকু মেশিন) মাধ্যমে কেটে নিয়ে যাচ্ছে। আমি তো খালপাড়ের
জমির মালিকদের মাটি কাটছি এবং তাদের বাড়িতে পাঠাচ্ছি। এতে দোষের কি?
আক্তার
মিয়া তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি মাটি কাটার জন্য
কোনো সহযোগিতা করেনি। খালপাড়ের মাটি কেটে যারা অবৈধ ট্রাক্টরের মাধ্যমে
নিয়ে যাচ্ছে বরং আমি তাদের বাধা প্রদান করেছি।
তিনি জানান, মাটি
বহনকারী ট্রাক্টর চলাচল করায় কৃষি জমির ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। এ ছাড়া,
গ্রামীণ সড়ক ভেঙে যাচ্ছে। এতে আমি বাধা দিলে তারা উল্টো আমাকে নানাহ ভাবে
অপদস্থ করে।
এদিকে মাটি কাটাকে কেন্দ্র করে সড়কগুলোয় দাপিয়ে বেড়াচ্ছে
ফিটনেসবিহীন
অবৈধ ট্রাক্টর। এসব ট্রাক্টরের অবাধ চলাচলের কারণে নষ্ট হচ্ছে গ্রামীণ
সড়ক। ট্রাক্টেের ট্রলিতে বহন করা মাটি সড়কের ওপরে পড়ে থাকছে। যে কারণে
বৃষ্টি হলেই সড়ক ভিজে পিচ্ছিল হয়ে তৈরি হচ্ছে মরণফাঁদ। আবার অনেক সড়কের
পিচঢালাও উঠে যাচ্ছে। ফলে ভয়াবহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন অনেকে।
রবিবার
সন্ধা সাড়ে ৭টায় লাকসাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) কাউছার হামিদ
মুঠোফোনে জানান, অবৈধভাবে খননযন্ত্রের (ভেকু মেশিন) মাধ্যমে খালপাড়ের মাটি
কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এমন সংবাদ পেয়ে তিনি পুলিশ, গ্রাম পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে
যান। তাঁদের উপস্থিতি টের পেয়ে খননযন্ত্রের (ভেকু মেশিন) এবং ট্রাক্টরের
চালক পালিয়ে যায়।
ইউএনও আরো জানান, মাটি বহনকারী অবৈধ ৪টি ট্রাক্টর জব্দ
করা হয়েছে। এ ছাড়া, ঘটনার সঙ্গে জড়িত মাটি খেকোদের বিরুদ্ধে আজই
(রবিবার,২২ ডিসেম্বর) নিয়মিত মামলা রুজু করা হচ্ছে। মামলা রুজু
প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।