বৃহস্পতিবার ৯ জানুয়ারি ২০২৫
২৬ পৌষ ১৪৩১
নতুন বছরে নতুন আবেদন
অধ্যাপক ডা: মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৭ জানুয়ারি, ২০২৫, ১:২৪ এএম আপডেট: ০৮.০১.২০২৫ ১২:১৯ এএম |

 নতুন বছরে নতুন আবেদন

সৌর সনের বছর হয় সাধারণত: ৩৬৫ দিনে। ইতিহাসবিদদের মতে বিশ^ব্যাপী পালিত উৎসবগুলোর মধ্যে সবচে প্রাচীন মনে করা হয় বর্ষবরণ উৎসবকে। খৃষ্টপূর্ব ২০০০ অব্দে মেসোপটেমীয় সভ্যতায় প্রথম বর্ষবরণ উৎসব পালনের প্রমাণ পাওয়া যায়। যে সভ্যতা গড়ে উঠেছিল সে সময়কার দজলা ও ফোরাত নদীর তীরে। ইরাকের প্রাচীন নাম ছিল মেসোপটেমিয়া। এ মেসোপটেমিয়ান সভ্যতা আবার চারটি পর্যায়ে বিভক্ত ছিল- ব্যাবিলনীয়, সুমেরীয়, অ্যাসেরীয় ও ক্যালভীয় সভ্যতা। এগুলোর মধ্যে বর্ষবরণ উৎসব পালন শুরু হয় ব্যাবিলনীয় সভ্যাতায়। সে সময় বেশ জাঁকজমকের সঙ্গে পালন করা হত বর্ষবরণ উৎসব।  তবে তা এখনকার মত জানায়ারী ১ তারিখে পালন করা হত না, বরং তা পালিত হত বসন্তের প্রথম দিনে। কারণ শীতের রুক্ষতা ঝেড়ে ফেলে প্রকৃতি আবার নতুন করে সাজতে শুরু করে বসন্তে। গাছে গাছে নতুন পাতা, বাহারি রঙ্গের ফুল আর পাখিদের কলকাকলিতে প্রাণ ফিরে পায় প্রকৃতি। প্রকৃতির  এ নতুন করে জেগে ওঠাকেই নতুন বছরের শুরু হিসাবে পালন করত ব্যবিলনীয়রা। অবশ্য তখন বছর গণনা করা হত চাঁদের উপর নির্ভর করে। যেদিন বসন্তের প্রথম চাঁদ উঠত, শুরু হত নতুন বছর আর বর্ষবরণ উৎসব, চলত টানা ১১ দিন। ব্যবিলনীয় সভ্যতার পর আড়ম্বরপূর্ণ বর্ষবরণ উৎসব পালন করত রোমানরাও। তবে তাদের ছিল নিজস্ব ক্যালেন্ডার। যদিও সে ক্যালেন্ডারও রোমানরা তৈরি করেছিল চাঁদ দেখেই। আর সে ক্যালেন্ডার অনুযায়ী তাদের নববর্ষ ছিল মার্চের প্রথম দিন। প্রথমদিকে তাদের ক্যালেন্ডার মাস ছিল ১০টি। ছিলনা জানুয়ারী আর ফেব্রুয়ারী মাস। পরবর্তী সময়ে ৭০০ খ্রষ্টপূর্বাব্দে রোমের সম্রাট নুমা পম্পিলিয়াস জানুয়ারী আর ফেব্রুয়ারীকে ক্যালেন্ডারে যোগ করেন। এরপর রোমান রাজার ইচ্ছানুযায়ী বছরের প্রথম মাস মার্চ থেকে জানুয়ারীতে পরিবর্তন করা হয়। তবে জানুয়ারীর ১ তারিখে নববর্ষ চালু করতে বেশ সময় লাগে। এটি প্রথম চালু হয় ১৫৩ খ্রষ্টপূর্বাব্দে রোমে। তখন এটি অনিয়মিতভাবে পালিত হত। কারণ তখনো মার্চের ১ তারিখকে নতুন বছরের ১ম দিন হিসাবে ব্যবহার করত। কিন্তু ৪৬ খৃষ্টপূর্বাব্দে রোম সম্রাট জুলিয়াস সিজার যখন সূর্যকেন্দ্রিক “জুলিয়ান ক্যালেন্ডার” চালু করেন, তখন জানুয়ারির ১ তারিখেই নববর্ষের প্রথম দিন হিসাবে ঘোষণা করা হয়।
আমরা মুছে ফেলি গত হয়ে যাওয়া বছরে গ্লানি, উৎসাহ খুঁেজ পাই সুখকর ঘটনাগুলো থেকে, তারপর এগিয়ে যাই অগ্রগতির দিকে। কেমন কেটেছে আমাদের বিদায়ি বছরটি? ২০২৪ সাল ছিল দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে একটি ঘটনাবহুল বছর। জাতীয় ও আর্ন্তজাতিকভাবে নানা চ্যালেঞ্জ ও উত্থান ও পতনের স্বাক্ষী হয়ে থাকবে বছরটি। গত বছর জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দেশে নতুন একটি সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, দীর্ঘ স্বৈরশাসনের অবসানে স্বস্তির নি:শ^াস ফেলেছে দেশবাসী। বিদায়ী বছরে অনেক বিশিষ্টজনকে হারিয়েছি আমরা । সম্প্রতি হারিয়েছি অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা এ.এফ হাসান আরিফকে। ২০২৪ এ মারা গেছে সাবেক রাষ্ট্রপতি ডা: একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী। সম্প্রতি হারিয়েছি কবি হেলাল হাফিজকে। ২০২৪ এ আরও হারিয়েছি অধ্যক্ষ আমির আলী চৌধুরী, রবীন্দ্রসংগীত শিল্পী সাদ মোহাম্মদ, পাপিয়া সরোয়ার, ব্যান্ড তারকা শাকিন আহমেদ, অভিনয় শিল্পী জামাল উদ্দিন হুসেন, অভিনেতা মাসুদ আলী খান, গীতিকার সরকার আবু জাফর, প্রকৌশলী শেখ মোহাম্মদ শহীদ উল্লাহ, প্রফেসর ড. গোলাম মুরশিদ, সাংবাদিক রুহুল আমিন গাজী, ভাষা বিজ্ঞানি ড. মনিরুজ্জামান, স্বাধীন বাংলা ফুটবল দল ও জাতীয় ফুটবলের প্রথম অধিনায়ক জাকারিয়া পিন্টু ও শিশু সাহিত্যিক আশরাফুল আলম পিন্টুকে। এছাড়া আমরা হারিয়েছি আরও অনেক বিশিষ্টজনকে, তাদের সবার প্রতি রইলো আমাদের অশেষ শ্রদ্ধা। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে যেসব বিশিষ্টজন মারা গেছেন তাদের অন্যতম যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট জিমি কাটার এবং ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং মারা গেছেন,  উপমহাদেশের বিশিষ্ট তবলার জাদুকর ওস্তাদ জাকির হুসেন।
পুরোনো বছরের স্মৃতি কখনো কাতরতা তৈরি করে, হারানোর বেদনা মনকে ভারাক্রান্ত করে। আবার অনেক সময় বিদায়ী বছরের স্মৃতিগুলো শান্ত মনে আনন্দের দোলা দিয়ে যায়। কিছু স্মৃতি আমাদের জীবনের পাথেয় হয়ে উঠে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার প্রেরনা যোগায়। ফেলে আসা বছরের প্রাপ্তি আমাদের আগামীর প্রত্যাশার ভিত গড়ে তুলে জীবনের প্রতিটি প্রাপ্তি ও ব্যর্থতা একে অপরের পরিপূরক। এ দুয়ের মিশ্রনে আমরা ভবিষ্যতের জন্য একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করতে পারি। নতুন বছরের আগাম মুহূর্তে মানুষের বেঁচে থাকার মূল উপজীব্য তথা স্বপ্ন তৈরি হয়ে থাকে। সবাই নতুন স্বপ্ন দেখে, সবার মনে নতুন করে বাঁচার ইচ্ছা জাগে। নতুন বছরটি কিভাবে কাটবে এর ছক তৈরি করে। প্রতিটি নতুন বছর যেন জীবনের একেকটি নতুন অধ্যায়। পুরোনো ভুলগোলো শুধরে নিয়ে ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার এক অমূল্য সুযোগ এটি,  প্রত্যাশার ডানায় ভর করে আমরা ভবিষতের দিকে তাকাই একটি সুখী সমৃদ্ধ ও সফল জীবনের আশায়। নতুন বছর মানে কেবল একটি সময়ের পরিবর্তন নয়, এটি নতুন করে নিজেকে আবিস্কার করার, নতুন করে দেখার এবং জীবনে প্রতিটি মুহূর্তকে আরও অর্থবহ করে তোলার প্রতিশ্রুতি। প্রত্যাশা হল জীবনের সেই দীপশিখা, যা আমাদের অন্ধকার থেকে আলোর দিকে নিয়ে আসে। এটি আমাদের সাহস যোগায়। সংকল্প দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর করে এবং বিভিন্ন প্রতিকুলতাকে উৎড়ানুর শক্তি যোগায়।
নতুন বছর ২০২৫ এসে গেছে। নতুন সরকারেরও চারমাস প্রায় শেষ। এ সরকারের মেয়াদ সুনির্দিষ্ট নয়, কিন্তু দায়িত্ব সুনির্দিষ্ট। সেটি হল-
১। কোর্স কারিকুলাম শিক্ষাখাতে ঠিক করে “ছাত্রনং অধ্যনং তপঃ” প্রতিষ্ঠা করা।
২। নদী, বন, ভূমি দখলদার উচ্ছেদ করে দেশ সবুজায়ন।
৩। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ ও সকল সরকারী খালিপদে নিয়োগ।
৪। পাচারকৃত অর্থ উদ্ধার ও সম্পদ লুন্ঠনকারীদের বিচার।
৫। নির্বাচন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে নির্বাচিতদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর।
৬। সকল দাবী দাওয়া নির্বাচিতদের কাছে চাওয়া, সকল ক্ষেত্রে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।
দেশ পূনগঠনে প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সন্নিবেশিত করে কাঙ্খিত বাংলাদেশের দিকে কেন যেতে পারব না আমরা। হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছর গণতন্ত্রহীনতা কিন্তু বিরামহীনভাবে করা হয়েছিল। যা ছিল জাতির সঙ্গে মশকরা। উন্নয়নের নামেই আবার করা হয়েছিল সবকিছু, যা ছিল তামাশা। ২০৪১ সাল অবধি এটা চালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল। ছাত্র-শ্রমিক-জনতা অকাতরে বুকের রক্ত ঢেলে তা বানচাল করে দিয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসহ বাহারি শ্লোগানের আড়ালে লুট হচ্ছিল দেশটি। দেশের স্বার্থে দেশের মানুষের স্বার্থে, ধর্ম-বর্ণ, দলমত নির্বিশেষে কাধে কাধ মিলিয়ে একসঙ্গে কাজ করতে হবে সবাইকে। স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা যে বীরত্ব দেখিয়েছে তা অনন্তকাল বাংলাদেশের জনগণের হৃদয়ে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। নতুন বছরে আমাদের প্রত্যাশা হিংসা বিদ্বেষের পথ পরিহার করে গণতান্ত্রিক সহিষ্ণুতার পথে বীরদর্পে এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ। নতুন বছর সবার জীবনে বয়ে আনুক সুখ, সমৃদ্ধি, সুস্বাস্থ্য ও অর্থনৈতিক অগ্রগতি।
লেখক: সাবেক অধ্যক্ষ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ














সর্বশেষ সংবাদ
সংসদের পাশাপাশি স্থানীয় নির্বাচনেরও প্রস্তুতি চলছে
লন্ডনে মা-ছেলের আবেগঘন মিলন
১৫ জানুয়ারির মধ্যে গণঅভ্যুত্থানের স্বীকৃতির ঘোষণাপত্র দিতে হবে
চৌদ্দগ্রামে সেনাবাহিনীর অভিযানে সন্ত্রাসী আটক
সুলতানপুর ব্যাটালিয়নবিজিবির উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লা ক্লাবের নির্বাচন প্রথম দিনে ১১টি মনোনয়ন ফরম বিক্রি
কুমিল্লা মহানগর ২৭ নং ওয়ার্ড বিএনপি'র আহবায়ক কমিটি গঠিত
কুমিল্লায়গ্যাস সংকটে চুলায় জ্বলছে না আগুন
নেতাকর্মীদের বিদায়ী শুভেচ্ছায় ঢাকা ছাড়লেন খালেদা জিয়া
দুই শতাধিক মানুষের মাঝে কুমিল্লায় বিজিবির শীতবস্ত্র বিতরণ
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২