তীব্র
প্রতিবাদের মুখে বিশ্ব ক্রিকেটের তিন মোড়ল দ্বিস্তর টেস্ট পরিকল্পনা থেকে
পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল ২০১৭ সালে। কিন্তু তিন মোড়ল আবারও টেস্ট ক্রিকেটকে
দুই স্তরে ভাগ করার পরিকল্পনা করছে! এমনটাই খবর প্রকাশ করেছে সিডনি মর্নিং
হেরাল্ড।
ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড-ক্রিকেটের তিন মোড়ল নিজেদের
মধ্যে আরও বেশি বেশি টেস্ট খেলতে চায়। সেজন্য টেস্ট ক্রিকেটকে দুই স্তরে
ভাগ করার পরিকল্পনা করছে তারা। র্যাংকিংয়ের ১-৭ পর্যন্ত দল প্রথম স্তরে।
৮-১২ পর্যন্ত দল দ্বিতীয় স্তরে। এমনটাই পরিকল্পনা সাজানো হচ্ছে। এ বিষয়ে
চলতি মাসের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডের প্রধান
আইসিসি চেয়ারম্যানের সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
সম্প্রতি বোর্ডার-গাভাস্কার
ট্রফির মধ্যে দ্বিস্তর টেস্ট নিয়ে আলোচনা সামনে আনেন সাবেক ভারতীয়
ক্রিকেটার রবি শাস্ত্রী। তার দাবি, ‘‘টেস্ট ক্রিকেটকে বাঁচাতে হলে,
প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে হলে দ্বিস্তর টেস্ট প্রয়োজন।’’ তার কথায় সুর
মিলিয়েছেন সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক মাইকেল ভনও। তবে কিংবদন্তি ক্লাইভ লয়েড
টেস্ট ক্রিকেটের স্তর ভাঙার বিপক্ষে,“আমার মনে হয়, যে সব দেশ টেস্ট
স্ট্যাটাস পাওয়ার জন্য এত কঠোর পরিশ্রম করেছে, তাদের জন্য ভয়ঙ্কর হবে
বিষয়টি (দ্বি-স্তর টেস্ট)। এতে তারা নিচের স্তরে নিজেদের মধ্যে খেলবে।
কীভাবে তারা উন্নতি করবে? (উন্নতি করবে) যখন তারা শীর্ষ দলগুলোর বিপক্ষে
খেলবে।”
বাংলাদেশের সাবেক অধিনায়ক ও টেস্ট স্পেশালিস্ট খেতাব পাওয়া
মুমিনুল হকও একই কথা বললেন, ‘‘এটা আমার জন্য অস্বস্তিকর হবে। সত্যি বলতে
আমি কোনো দলকে ছোট করে দেখতে চাই না। আমার জানা নেই, লোয়ার টায়ারে কোন
প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হবে। এটাও নিশ্চিত নই আমরা যদি দ্বিতীয় স্তরে থাকি,
ভালো করলে দ্বিতীয় স্তর থেকে প্রথম স্তরে যাওয়ার সুযোগ থাকবে কি না?
দ্বিস্তর
টেস্ট পরিকল্পনা শেষ পর্যন্ত বাস্তবায়িত হলে বড় দলগুলোর বিপক্ষে খেলার
সুযোগ বাংলাদেশ সহ অনান্য দেশ হারাবে তা বলতে দ্বিধা করলেন না মুমিনুল,
‘‘আমি
মনে করি টেস্ট ম্যাচের সংখ্যা কমে আসবে। যারা কেবল টেস্ট ক্রিকেট খেলছে
তাদের জন্য এটা বিরক্তিকর। আমি মনে করি না, এটা আমাদের জন্য ভালো হবে।
সত্যি বলতে, আমরা যদি ভালো দলগুলোর বিপক্ষে খেলতে না পারি আমাদের খেলারও
উন্নতি হবে না। আমরা তাহলে একই অবস্থানে থাকবো। কারণ আমরা নিজেদের মধ্যেই
কেবল খেলছি। কোনো বড় দল বা কঠিন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে সুযোগ পাচ্ছি না।’’
‘‘আপনি
যখন কোনো বড় দলের বিপক্ষে খেলেন তখন শুধু ভালোই করতে চান না, আপনি নিজেকে
কোন অবস্থানে দেখতে চান, টেস্ট ক্রিকেটকে কোথায় নিয়ে যেতে চান সেটাও দেখিয়ে
দেন। আমার মতে, টেস্ট ক্রিকেটের ওজন অনেকটা কমে যাবে কেননা টেস্ট ম্যাচের
সংখ্যা কমে যাবে। খেলোয়াড়দের কাছেও গুরুত্ব হারাতে পারে। তারা সাদা বলের
ক্রিকেটে তখন বেশি মনোযোগী হবে।’’ - বলেছেন মুমিনুল।
২০১৭ সালে তিন
মোড়লের পরিকল্পনায় সমর্থন দিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা,
নিউ জিল্যান্ড, পাকিস্তান ও ওয়েস্টইন্ডিজ । তবে বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা
ও জিম্বাবুয়ে ক্রিকেট বোর্ডের কঠোর আপত্তিতে দ্বিস্তর টেস্ট পদ্ধতির
প্রস্তাব থেকে সরে দাঁড়ায় আইসিসি। তখনও টেস্ট স্ট্যাটাস পায়নি আফগানিস্তান ও
আয়ারল্যান্ড।