মানুষের আয় বাড়ছে না, কিন্তু ক্রমাগতভাবে বাড়ছে জীবনযাত্রার ব্যয়। নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষের, বিশেষ করে স্থির আয়ের মানুষের অবস্থা অত্যন্ত শোচনীয়। এই অবস্থায় রাজস্ব আদায় বৃদ্ধি এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের শর্ত পূরণ করতে গিয়ে অর্থবছরের মধ্যখানেই সরকার পুনরায় ভ্যাট বাড়াতে যাচ্ছে। ওষুধ, গুঁড়া দুধ, ফলমূল, বিস্কুট, জুস, সাবান, মিষ্টিসহ ৬৫টি সেবা ও পণ্যে ভ্যাট বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
এতে মোবাইল ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্যবহার এবং হোটেল-রেস্তোরাঁয় খাবারের খরচও বাড়বে। জানা গেছে, নতুন ভ্যাট আরোপের বিষয়টি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদের অনুমোদনও লাভ করেছে। অচিরেই তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। গত মাসে খাদ্যপণ্যের মূল্যস্ফীতি ছিল ১৩ শতাংশের কাছাকাছি।
আগের মাসে তা ছিল ১৪ শতাংশের কাছাকাছি। আলু, পেঁয়াজ, তরিতরকারির ভরা মৌসুমে মূল্যস্ফীতি মাত্র ১ শতাংশ কমে আসাটা মোটেও ভালো লক্ষণ নয়। চৈত্র মাসের দিকে মৌসুম শেষ হতেই পুনরায় এসব পণ্যের দাম বাড়তে থাকবে। আর আমনের ভরা মৌসুমেও বাড়ছে চালের দাম।
ধারণা করা হয়, বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে বোরো না ওঠা পর্যন্ত দাম বাড়তেই থাকবে। মূল্যস্ফীতির এই বৃদ্ধি শুধু একটি পরিসংখ্যান নয়, এর সঙ্গে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে যুক্ত। আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যহীনভাবে ব্যয় বাড়তে থাকলে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যায়, মানুষকে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটাতে হয়। এমনিতেই দেশে ওষুধের দাম অনেক বেশি। প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা নেওয়া বা ওষুধ কেনার সামর্থ্য দেশের বেশির ভাগ মানুষের নেই বললেই চলে।
সেখানে ভ্যাট আরোপের ফলে ওষুধের দামও বাড়বে। পবিত্র রমজান মাস আসতে দুই মাসও বাকি নেই। প্রতিবছরই এ সময়টায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য, বিশেষ করে খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এ বছরও দাম বেড়েছে। তার ওপর ভ্যাট বৃদ্ধির সুযোগ নেবে ব্যবসায়ী ও মধ্যস্বত্বভোগীরা। সাধারণত রোজার সময় মানুষ ইফতারিতে ফলমূল ও মিষ্টিজাতীয় খাদ্যবস্তু রাখার চেষ্টা করে। ভ্যাট বৃদ্ধির ফলে এগুলোরও দাম বাড়বে।
গণ-অভ্যুত্থান ও সরকার পরিবর্তনের কারণে দীর্ঘদিন একটি অস্থিতিশীল অবস্থা বিরাজ করেছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো নাজুক। এসবের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্প খাতে। কয়েক শ কলকারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে। হাজার হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে গেছে। অনেক উদ্যোক্তা অত্যন্ত কঠিন সময় পার করছেন। অনেক শিল্প-কারখানা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে। এই অবস্থায় অর্থবছরের মধ্যখানে এসে এভাবে ভ্যাট বাড়ানোর কারণে তাঁরা আরো বেশি বিপদগ্রস্ত হবেন। কারণ যেখানে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমশ কমছে, সেখানে উৎপাদিত পণ্যের মূল্যবৃদ্ধি পেলে বিক্রিতে ধস নামবে এবং টিকে থাকাই মুশকিল হয়ে পড়বে।
আমরা মনে করি, আইএমএফ বা অন্য কারো প্রেসক্রিপশন নয়, মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশার কথা ভাবতে হবে। দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডকে গতিশীল রাখতে হবে। আমরা চাই, ভ্যাট বৃদ্ধির বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হোক।