কুমিল্লা
শহরজুড়ে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়েছে। দিনের বেলা কিংবা রাতের আঁধার;
প্রকাশ্যে কিংবা কিছুটা নিরিবিলিতে অস্ত্র ঠেকিয়ে পথচারীদের সর্বস্ব লুট
করে নিচ্ছে ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা। আর ছিনতাইয়ের শিকার লোকজন বেশিরভাগ
সময়ই থানা-পুলিশে অভিযোগ করেন না। করলেও মালামাল ফেরত পাওয়ার নজির খুব একটা
নেই। অপরদিকে পুলিশ বলছে, ইদানিং সময়ে ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য অনেকটাই
বেড়েছে। ইতোমধ্যে তাদের ধরতে অভিযান অব্যাহত আছে। বেশ কয়েকজনকে আটকও করা
হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কুমিল্লা শহরের কান্দিরপাড় এলাকার টাউন
হলের সামনে, লিবার্টি মোড়, পুবালি চত্ত্বর, রাণীর দিঘির পাড়, মহিলা কলেজ
রোড, চকবাজার শাপলা মার্কেট, তেলিকোনা চৌমুহনী, গোবিন্দ কুপুর পাড়, দক্ষিণ
চর্থা, রাণীর বাজার, ঠাকুরপাড়া, রেইসকোর্স ধানমন্ডি সড়ক এলাকা, টমসনব্রিজ
থেকে বাখরাবাদ সড়কের কয়েকটি এলাকা, কালিয়াজুড়ি পাক্কার মাথা, সংরাইশ
কালিবাড়ি মোড়, টিক্কারচর, তালকুপুর পাড়, শাসনগাছা ও আশপাশের এলাকার অন্তত
অর্ধশাধিক স্থানে ছিনতাই কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে চক্রের সদস্যরা।
প্রতিদিনই
এসব স্থানে কোথাও না কোথাও ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এদের মধ্যে বেশির ভাগ
ছিনতাইকারীই টাউন হল ও আশপাশের এলাকায় ঘাপটি মেরে থাকে। সুযোগ পেলেই অস্ত্র
ঠেকিয়ে পথচারীদের কাছ থেকে টাকা, গহনা, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান সামগ্রী লুট
করে নিয়ে যায়।
ছিনতাইয়ের শিকার লোকজন বিভিন্ন প্রকার অস্ত্র ঠেকিয়ে
ছিনতাইকারীরা তাদের কাছ থেকে সবকিছু কেড়ে নিয়েছেন। ছিনতাইয়ের কবলে পড়ার পর
অস্ত্রের মুখে তাদেরকে কিছু বলার উপক্রম থাকে না। আর কোনো কিছু দিতে না
চাইলে তারা অস্ত্র দিয়ে আঘা করে। তাই নিরুপায় হয়ে সব কিছু দিয়ে দিতে হয়।
গত
বুধবার রাতে কুমিল্লা শহরের রাণীর দিঘির পাড় এলাকায় ছিনতাইকারীদের কবলে
পড়েন আজাদ হোসেন নামে কুমিল্লা ইপিজেডের একটি কোম্পানীর কর্মকর্তা। তিনি
জানান, ব্যাংক থেকে বেতনের টাকা তুলে রাত ১০টার দিকে রাণীর দিঘির পাড় হয়ে
রিকশায় চড়ে বাসায় যাচ্ছিল। একটু নিরিবিলিতে তিনজন ছিনতাইকারী এসে রিকশার
গতিরোধ করে। এদের মধ্যে দুইজন দেশীয় অস্ত্র এবং একজন মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে
তার কাছে থাকায় ৪০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।
এর কয়েকদিন আগে
কান্দিরপাড় এলাকায় এক নারী পথচারীর ব্যাগ থেকে টাকা ছিনতাই করতে গিয়ে জনতার
হাতে মারধরের শিকার হয় এক ছিনতাইকারী। পরে তাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়। গত
সোমবার রাতে পূবালী চত্ত্বও এলাকা থেকে অস্ত্রসহ দুই ছিনতাইরীকে আটক করে
ধোলাই দেয় জনতা। এর আগে গেলো ডিসেম্বরে কান্দিরপাড় এলাকায় ছিনতাইয়ের কবলে
পড়ে মোবাইল ফোন হারিয়েছেন ইমরান হোসেন সোহান নামে নাঙ্গলকোটের এক সাংবাদিক।
বিষয়টি তাৎক্ষণিক পুলিশকে জানানো হলেও তার মোবাইল ফোনটি আর উদ্ধার করা
সম্ভব হয়নি। পরে কোতয়ালী মডেল থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন তিনি। সব
মিলিয়ে গত দুই মাসে কুমিল্লা শহরে অন্তত কয়েক শ’ ছিনাইয়ের ঘটনা ঘটেছে। যদিও
এসব ঘটনার বেশিরভাগেরই থানায় কোনো অভিযোগ করা হয়নি। যদিও পুলিশ বলছে
অভিযোগ না পেলেও ছিনতাইকারীদের ধরতে নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ।
সাম্প্রতিক
সময়ে কুমিল্লায় ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বেড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে
নিয়ে কুমিল্লা কোতয়ালী মডেল থানার তদন্ত কর্মকর্তা শিবেন বিশ^াস বলেন, গেলো
কিছুদিন ধরে কুমিল্লা শহরে ছিনতাইকাদের দৌরাত্ম্য কয়েকগুণ বেড়েছে। এদের
সাথে সবসময় ছোটোখাটো অস্ত্র থাকে। কেউ ধরতে গেলেই আহত হওয়ার শঙ্কা থাকে।
এসব ছিনতাইকারী বেশিরভাগ সময়ই নেশাগ্রস্ত থাকে। নেশাগ্রস্ত অবস্থায় এরা
বেশ উগ্র থাকে। রাত বাড়ার সাথে সাথেই ওরা বেপরোয়া হয়ে উঠে। তবে আমাদের
অভিযান অব্যাহত আছে। সে অভিযানের অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার সকালে কুমিল্লা
টাউন হল এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৭ ছিনতাইকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদিনই
তাদেরকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে
কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোহাম্মাদ নাজির আহমেদ খাঁন বলেন, জনগণের নিরাপত্তা
নিশ্চিত করতে পুলিশ সবসময় সচেষ্ট আছে। এজন্য পুলিশের টহল এবং পেট্রোল টিম
বাড়ানো হয়েছে। শহরের মধ্যে যেনো সাধারণ জনগণ ছিনতাইয়ের কবলে না পড়েন এজন্য
থানা, ফাঁড়ি এবং ডিবি পুলিশের টিমও কাজ করছে। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর থেকে
শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্পটগুলোতে পুলিশের টহল জোরদার করা হয়েছে। তারপরও
সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। যারা ছিনতাই করে তাদের কাছে ছোটোখাটো অস্ত্র থাকতে
পারে। এ ধরণের কোনো ঘটনার তথ্য পেলে আমরা দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।