দেশের অর্থনীতি নানা রকম
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছে। শিল্প, ব্যবসা, বিনিয়োগ-সব কিছুই যেন তার
স্বাভাবিক গতি হারিয়ে ফেলছে। বিনিয়োগ যেকোনো দেশের শিল্প, ব্যবসা-বাণিজ্য ও
অর্থনৈতিক উন্নতির একটি বড় বিষয়। বিনিয়োগ ব্যক্তি খাতে যেমন হতে পারে,
তেমনি হয় রাষ্ট্রীয় খাতে; যেটি সরকারের বিনিয়োগ।
যেকোনো দেশে ব্যক্তি বা
বেসরকারি বিনিয়োগই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে বেসরকারি বিনিয়োগ,
বেসরকারি ব্যবসা-শিল্প বিশেষ অবদান রাখছে। যে দেশ যত ব্যবসাবান্ধব, সেই
দেশের অর্থনীতি তত সমৃদ্ধ।
সার্বিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা এবং দেশের অন্যান্য পারিপার্শ্বিক অবস্থা কেমন-এটি বিবেচ্য বিষয়।
বাংলাদেশে
ব্যবসার পরিবেশ কেমন? গত রবিবার বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের
(বিসিআই) নেতৃত্বে বেশ কয়েকটি সংগঠনের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ
ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুরের সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়েছে, এখন কঠিন
বাস্তবতার মুখে রুগ্ণ ও সংকটে থাকা ব্যবসা গুটিয়ে নিতে সরকারের কাছে
নীতিমালা চান ব্যবসায়ীরা। কারণ বর্তমানে পরিচালন ব্যয় বৃদ্ধির চাপে আছেন
তাঁরা। তাঁদের নতুন বিনিয়োগে আগ্রহ নেই। বাংলাদেশে অর্থনীতির অবস্থা কখনোই
খুব ভালো ছিল না।
ব্যবসা শুরুর সূচকে আশপাশের অনেক দেশের তুলনায়
বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে আছে। ব্যবসার জন্য কিছু শর্তপূরণ প্রয়োজন। প্রথমত,
পরিবেশ লাগবে। ব্যবসার জন্য পরিবেশ দরকার। ব্যবসার আবহের ওপর অনেক কিছু
নির্ভর করে।
অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে তাই সবার আগে ব্যবসার পরিবেশ
ফেরাতে হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরেও বিনিয়োগবান্ধব হতে পারেনি দেশ। এখনো একজন
বিনিয়োগকারীকে দেশে বিনিয়োগ করতে হলে ২৯টি প্রতিষ্ঠান থেকে ১৪১টি ছাড়পত্র
নিতে হয়। এই জটিলতার পরও সরকারের দেওয়া সেবার মূল্য ও কর বৃদ্ধি অব্যাহত।
গত তিন বছরে গ্যাসের দাম ২৫০ থেকে প্রায় ৪৫০ শতাংশ বেড়েছে।
ব্যবসায়ীরা
দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি
অর্জনে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। একজন ব্যবসায়ী একাধারে বিনিয়োগকারী,
ঝুঁকি গ্রহণকারী, কর্মসংস্থান সৃষ্টিকারী এবং সর্বোপরি দেশের দ্রব্য ও
সেবা সরবরাহকারী। দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হলে বিনিয়োগে স্থবিরতা নেমে
আসে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় না, এমনকি বেকারত্ব বৃদ্ধি পায়। বেকারদের
কর্মসংস্থান নিশ্চিত করতে দরকার বিনিয়োগ, কিন্তু দেশে বিনিয়োগের পরিবেশ
নেই।
যে খাতে অতি দ্রুত স্বাভাবিক অবস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে, সেটি হচ্ছে
দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য। এ খাতের স্বাভাবিক অবস্থার সঙ্গে জড়িয়ে আছে দেশের
অর্থনীতিকে সচল রাখার বিষয়টি। কাজেই এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যা দেশি-বিদেশি
বিনিয়োগের পরিবেশ নিরাপদ করবে।
সরকার পতনের পাঁচ মাস পার হতে চললেও দেশে
ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বাভাবিক পরিবেশ এখনো ফেরেনি, বরং আইন-শৃঙ্খলার অবনতি
এবং সংস্কার ও নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতায় নানা
ধরনের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এতে ব্যবসায়ী, শিল্পপতি ও উদ্যোক্তারা নতুন
বিনিয়োগে আগ্রহ হারাচ্ছেন। অর্থনৈতিক কার্যক্রমে গতি আনতে ব্যবসায়ীদের
মধ্যে আস্থা ফেরানো প্রয়োজন।