সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবার লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ
এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। গত বছরের প্রথম দিকে লন্ডনভিত্তিক ইকোনমিস্ট গ্রুপের
অঙ্গপ্রতিষ্ঠান ‘ইকোনমিস্ট ইমপ্যাক্ট’ একটি জরিপ করে। জরিপের ফল অনুযায়ী
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ছয়টি অঞ্চলের ৪০টি দেশের
অন্তর্ভুক্তিমূলক স্বাস্থ্য সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান সর্বনিম্নে। অন্যদিকে
গত বছর জুলাই মাসে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক
প্রতিবেদনে বলা হয়, চিকিৎসা ব্যয় বহন করতে গিয়ে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে
যাচ্ছে ৩.৭ শতাংশ মানুষ।
চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশের মানুষকে অতিরিক্ত খরচ
বহন করতে হয়। স্বাস্থ্যসেবার ৭৩ শতাংশ ব্যয় মানুষের পকেট থেকে মেটাতে হয়।
এই ব্যয় দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়,
একটি পরিবারের একজন সদস্য হাসপাতালে ভর্তি হলে গড়ে প্রায় ৫৫ হাজার টাকা
ব্যয় করতে হয়।
এর প্রায় ৫৪ শতাংশ ওষুধে ব্যয় হয়। হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রেও মোট ব্যয়ের প্রায় ২৫ শতাংশ ওষুধের পেছনে চলে যায়।
চিকিৎসকের
ফি, রোগ নির্ণয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার খরচ, ক্রমাগতভাবে দাম বাড়তে থাকা ওষুধ ও
আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র কেনা-সব মিলিয়ে চিকিৎসার ব্যয় ক্রমেই বাড়ছে। ফলে
দরিদ্র ও নিম্নবিত্ত মানুষের পক্ষে অসুখবিসুখে চিকিৎসা নেওয়া কঠিন হয়ে
পড়েছে।
ঠিক এই অবস্থায় ২০২৪-২৫ অর্থবছরের মাঝপথে এসে শতাধিক পণ্য এবং
সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর বা মূসক ও সম্পূরক শুল্ক বাড়াল সরকার। এতে
মানুষের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সঙ্গে ওষুধের দাম ২.৪ থেকে ৩ শতাংশ পর্যন্ত
বেড়েছে। এতে প্রতিটি ওষুধের দাম বাড়ছে। গত সোমবার ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে
প্রতিষ্ঠানটির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও সংশ্লিষ্ট আমদানিকারকদের মধ্যে
অনুষ্ঠিত এক সভায় ডলারের মূল্য সমন্বয় ও পণ্যমূল্যের সঙ্গে ভ্যাট যুক্ত
করে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য পুননির্ধারণের দাবি জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
ওষুধের দামের সঙ্গে বাড়ছে অন্যান্য খরচও।
ফলে ব্যক্তির চিকিৎসা খরচ
ক্রমেই ঊর্ধ্বমুখী হচ্ছে। এমনিতেই অন্য অনেক দেশের তুলনায় বাংলাদেশে
রোগীদের ব্যক্তিগত চিকিৎসা ব্যয় অনেক বেশি। এর ওপর ওষুধের দাম বাড়লে,
নিম্নবিত্ত মানুষ তো বটেই, মধ্যবিত্ত ও স্থির আয়ের মানুষের পক্ষেও চিকিৎসার
খরচ বহন করা রীতিমতো অসাধ্য হয়ে উঠবে। শুধু ওষুধ নয়, চিকিৎসকের ফি,
পরীক্ষা-নিরীক্ষার ব্যয়, হাসপাতালের খরচ-সবই ক্রমাগতভাবে বাড়বে। মানুষ
কোথায় যাবে?
দেশে গত কয়েক বছরে বেশির ভাগ অতি প্রয়োজনীয় ওষুধের দাম
শতভাগ পর্যন্ত বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ওষুধের দাম বাড়ালে চিকিৎসাসেবা বড়
সংকটে পড়বে। তাঁদের মতে, ওষুধের দাম নির্ধারণ করা উচিত জনগণের ক্রয়ক্ষমতা,
দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থার ওপর ভিত্তি করে। আমাদের প্রত্যাশা, জীবন
রক্ষাকারী ওষুধের মূল্য সাধারণ রোগীদের নাগালের মধ্যে রাখতে সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষ দ্রুত কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।