কুমিল্লায়
সরিষা ফুলের হলুদ গালিচায় মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে উঠেছে কুমিল্লার
বিভিন্ন উপজেলার সরিষার মাঠ। চারপাশে হলুদ ফুল আর সবুজ পাতার সমারোহে
প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে। এ যেন ঘন কুয়াশার মধ্যে যেন হলুদ চাদরে নিজেকে
মুড়িয়ে রেখেছে। এমন নয়নাভিরাম দৃশ্য চারদিকে এক আবেশি পরিবেশের সঙ্গে
মাধুর্যতায় ভরে দিয়েছে সরষে ফুলের ঘ্রাণ।
এবার কুমিল্লা জেলায় সরিষার
বাম্পার ফলনে কৃষকের চোখে মুখেও আনন্দের রেখা ফুটে উঠেছে। সরিষার ফুলে
আকৃষ্ট হয়ে মৌমাছিরা মধু আহরণে ব্যস্ত হয়ে গুনগুন শব্দে ছুটে চলছে এক ক্ষেত
থেকে আরেক ক্ষেতে। সরিষা ফুলের হলুদ রাজ্যে মৌমাছির গুঞ্জনে মুখরিত হয়ে
উঠেছে উপজেলার ফসলি মাঠ। শুরুতে আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় চলতি মৌসুমে এ
উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা আর্জিত না হলেও ভাল ফলন পাবে বলে আশা করছেন চাষিরা।
কুমিল্লা
কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এ বছর সরিষা মৌসুমের শুরুতে বেশ কয়েক উপজেলায়
ভয়াবহ বন্যা ও বৃষ্টিপাত হওয়ায় পতিত জমি থেকে পানি নামতে সময় লাগায় কৃষক
তাদের সরিষার মাঠ প্রস্তুত করতে পারিনি। তাই লক্ষ মাত্র কিছুটা ব্যহত
হয়েছে। এ বছর কুমিল্লা জেলায় সরিষার লক্ষ মাত্র ছিল ১৬ হাজার ৯ শত ৯০
হেক্টর অর্জিত হয়েছে ১৪ হাজার ৩ শত ৫৬ হেক্টর।
সরেজমিনে কুমিল্লার
বিভিন্ন উপজেলার বেশ কিছু কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, যে কোনো ফসলের
চেয়ে সরিষার আবাদ অনেক লাভজনক ও খরচ তুলনামূলক অনেক কম। তাছাড়া এ ফসলের
বাজার সবসময় ভালো থাকে, ফলনও ভালো হয়।
এ বিষয়ে কথা হয় ব্রাহ্মণপাড়া
উপজেলা চান্দলা ইউনিয়নের বড়ধুশিয়া গ্রামের কৃষক মতি মিয়া জানান, বর্ষার
পানি নেমে যাওয়ার পর পৌষ মাসের প্রথমদিকে আমি সরিষার বীজ বুনেছি। আমরা খুব
কম সময়ে সরিষা ঘরে তুলতে পারেন। একই এলাকার আজাদ হোসেন বলেন ৪৬ শতক জমিতে
সরিষা চাষ করেছি আশা করি ভাল ফলন হবে দামও ভালো পাবেন। তবে বিভিন্ন কৃষি
পণ্যের পাশাপাশি সরিষার ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অব্যাহত থাকলে এখানকার
কৃষক আরও বেশি উপকৃত হতো। দেবিদ্বার উপজেলার এগারগ্রাম এলাকার কৃষক মতি
মিয়া জানালেন, ৬০ শতাংশ জমিতে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে সরিষা আবাদ করেছেন।
ঠিকঠাক মতো ফসল উঠলে তার ২০ হাজার টাকা লাভ থাকবে।
বুড়িচং উপজেলার
রাজাপুর ইউনিয়ন শংকুচাইল গ্রামের কৃষক আবদুল মালেক বলেন, প্রতি বছর ৬০ থেকে
৯০ শতক জায়গায় সরিষা চাষ করি কিন্তু এ বছর গোমতী ও সালদানদী ভাঙা পড়ে
জমিতে পানি থাকায় সরিষা চাষ করতে পারেনি। তবে এ বছর আমরা আমাদের জমিতে বোর
ধানের বীজতলা ও জমি প্রস্তুত করে আগাম জাতের বোরোধান চাষ করেছি।
এ বিষয়ে
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক( ডিডি) আইয়ুব মাহমুদ গতকাল
দৈনিক কুমিল্লার কাগজকে বলেন, এ বছর কিছু উপজেলায় ভয়াবহ বন্যা হওয়ার
সরিষা চাষের জন্যে জমি প্রস্তুত করতে কিছুটা ব্যহত হয়েছে। এবং লক্ষ মাত্র
অর্জিত না হলেও তবে মাঠে আবাদ কৃত সরিষা ফলন ভালো হবে বলে তিনি আশা করেন।এ
ছাড়া কম খরচে অধিক মুনাফা পাওয়া যায় বলে প্রতি বছরই সরিষা চাষে কৃষকদের
আগ্রহ দিন দিন বাড়ছে। সরকারিভাবে ও বিভিন্ন প্রকল্পের সহায়তায় উচ্চফলনশীল
জাতের সরিষার আবাদ ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করা যাচ্ছে।