বাংলাদেশে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য আমরা
প্রতিনিয়ত কত কথাই না বলি। ভাসা ভাসা উদ্যোগ বা আয়োজনও কম নয়। দেশে-বিদেশে
প্রতিনিয়ত সফর, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, রোড শো-এমনই আরো অনেক কিছুই করি।
কোনো দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, মন্ত্রী, এমনকি নতুন রাষ্ট্রদূত এলেও তাঁদের
কাছে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করার আবেদন জানাই।
কিন্তু বাস্তবতা হলো
বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগ কাক্সিক্ষত তো নয়ই, অন্য অনেক দেশের তুলনায়ই অনেক
পিছিয়ে। এমনকি দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর তুলনায়ও পিছিয়ে। এমনটা কেন?
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বান্ধব পরিবেশ অনুকূলে নয়।
ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, এখানে নীতির ঠিক নেই।
কোনো সরকারই কথা দিয়ে কথা রাখে না। ইউটিলিটি ঠিকমতো পাওয়া যায় না। যখন-তখন ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানো হয়। হয়রানি ও দুর্নীতি সীমাহীন।
এসব
কারণে রীতিমতো চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকতে হয় বিনিয়োগকারীদের। বুধবার
রাজধানীর পল্টন টাওয়ারে অর্থনৈতিক বিষয়ক সাংবাদিকদের সংগঠন ইকোনমিক
রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত ‘বিনিয়োগের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক
সেমিনারে এভাবেই ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা।
ব্যবসা শুরু
করার ক্ষেত্রেই এখানে নতুন উদ্যোক্তাদের নানা রকম সমস্যা মোকাবেলা করতে হয়।
ব্যবসা শুরুর পরিবেশ নিয়ে বিশ্বব্যাংক প্রতিবছর যে প্রতিবেদন প্রকাশ করে,
তাতে বাংলাদেশের অবস্থান বরাবরই তলানিতে। ১৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের
অবস্থান থাকে ১৭০ থেকে ১৮০-র মধ্যে বা তার কাছাকাছি স্থানে।
এদিক থেকে
দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষে রয়েছে ভারত। দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের পরেই রয়েছে ভুটান,
শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান ও মালদ্বীপ। এমনকি আফগানিস্তানও এই তালিকায়
বাংলাদেশের ওপরে। অর্থাৎ ব্যবসা শুরুর পরিবেশ উন্নয়নে দক্ষিণ এশিয়ার অন্য
দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশ কেবলই পিছিয়ে পড়ছে। এর কারণও আমলাতান্ত্রিক
জটিলতা, ঘুষ-দুর্নীতি। প্রত্যক্ষ, অপ্রত্যক্ষ ট্যাক্সের বোঝাও অনেক বেশি।
সরকার করজাল বিস্তৃত না করে বরং যারা নিয়মিত কর দেয়, ক্রমাগতভাবে তাদের
ঘাড়ে করের বোঝা চাপাতে থাকে। ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন, সম্প্রতি শতাধিক পণ্য
ও সেবায় ভ্যাট আরোপের একতরফা সিদ্ধান্ত ব্যবসার পরিবেশকে আরো ক্ষতিগ্রস্ত
করেছে। রয়েছে গ্যাস, বিদ্যুৎ, জ্বালানির সংকট। তা সত্ত্বেও গ্যাসের দাম
বাড়ানোর যে প্রস্তাব রয়েছে, তা বাস্তবায়ন করা হলে দেশের ব্যবসা ও
শিল্প-কারখানায় তা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনবে। সাম্প্রতিক সময়ে আইন-শৃঙ্খলা
পরিস্থিতির অবনতিও ব্যবসার জন্য একটি বড় প্রতিবন্ধক হয়ে দেখা দিয়েছে।
দেশে
প্রতিনিয়ত কর্মক্ষম জনসংখ্যা বাড়ছে। বেকারের সংখ্যায় উল্লম্ফন ঘটছে। এই
অবস্থায় বিনিয়োগ বাড়ানোর কোনো বিকল্প নেই। কারণ বিনিয়োগ বা কলকারখানা
বাড়লেই কর্মসংস্থান বাড়বে। এ জন্য বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নয়ন করা জরুরি। মনে
রাখতে হবে, বিনিয়োগের পরিবেশ উন্নত না হলে, স্থানীয় বিনিয়োগ না বাড়লে
বিদেশি বিনিয়োগও আকৃষ্ট হবে না।