খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১৩
শতাংশের কাছাকাছি। নিম্নবিত্ত ও নিম্নমধ্যবিত্তের চিড়েচ্যাপটা অবস্থা।
ক্রেতা বা ভোক্তাদের ক্রয়ক্ষমতা অনেক কমে গেছে। ছোটখাটো অনেক শিল্পের
বিক্রিতে রীতিমতো ধস নেমেছে।
এমন পরিস্থিতিতেও গত ৯ জানুয়ারি জাতীয়
রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অর্ধশতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়ে
অধ্যাদেশ জারি করেছে। অন্যদিকে শিল্প-কারখানায় চাহিদামতো গ্যাস পাওয়া যায়
না। উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যেও গ্যাসের দাম বাড়িয়ে প্রায় দ্বিগুণ
করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
দেশের শিল্প ও বিনিয়োগ বিরোধী এমন সব
সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ফুঁসে উঠেছেন ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন,
বর্ধিত ভ্যাট বাতিল না হলে কারখানা বন্ধ করে দিয়ে তাঁরা রাস্তায় নামতে
বাধ্য হবেন।
ব্যবসায়ীদের কেউ কেউ এমনও বলেছেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা না
করে একেবারে সর্বনিম্ন স্তরের পণ্যের ওপরও অযৌক্তিকভাবে ভ্যাট ও শুল্ক আরোপ
করা কোনোভাবেই জনবান্ধব সিদ্ধান্ত নয়। কাদের স্বার্থে এই সরকার কাজ করছে,
তা নিয়েও তাঁরা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন।
দেশের কোথাও কোথাও ব্যবসায়ীরা,
বিশেষ করে রেস্তোরাঁ ব্যবসায়ীরা এরই মধ্যে রাস্তায়ও নেমেছেন। এর
পরিপ্রেক্ষিতে এনবিআর রেস্তোরাঁর বর্ধিত ভ্যাট প্রত্যাহারের ঘোষণাও দিয়েছে।
বৃহস্পতিবার রাজধানীর ঢাকা ক্লাবে আয়োজিত পণ্যের ওপর বাড়তি ভ্যাট ও
সম্পূরক শুল্ক আরোপ এবং প্রস্তাবিত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে একটি
সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসরস অ্যাসোসিয়েশন
(বাপা) আয়োজিত সম্মেলনে বাপার সভাপতি এম এ হাশেম বলেন, নতুন করে
ভ্যাট-ট্যাক্স বাড়ানোর ফলে দেশের শিল্প খাত বড় ধাক্কা খাচ্ছে। শিল্প না
বাঁচলে কর্মসংস্থান হবে না।
ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ালে ব্যবসায়ীরা ছাড়াও
শ্রমজীবী-কৃষক এবং সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বাপার কার্যনির্বাহী
সদস্য এবং প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী আহসান খান
চৌধুরী বলেন, ‘আগামী সাত দিনের মধ্যে যদি আরোপিত ভ্যাট ও শুল্কের সঙ্গে
গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব থেকে সরকার সরে না আসে, তবে স্বেচ্ছায়
কারখানার উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ এবং সচিবালয়ের সামনে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ
করার সিদ্ধান্ত নেব। আমরা ব্যবসায়ী, দয়া করে আমাদের পথে নামাবেন না।’
পবিত্র
রমজান মাস আসতে আর মাত্র মাস দেড়েক বাকি। এ সময় এমনিতেই বাজার অস্থির
থাকে। রমজানে অতি প্রয়োজনীয় প্রায় প্রতিটি খাদ্যপণ্যের দাম বেড়ে যায়। এরই
মধ্যে সেই আলামত ক্রমেই স্পষ্ট হচ্ছে। এমন সময় এভাবে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়িয়ে
বাজার আরো অস্থির করা হচ্ছে কেন? সাধারণত ইফতারিতে মানুষ কিছু ফলমূল, ফলের
রস ও মিষ্টিজাতীয় খাদ্যবস্তু রাখার চেষ্টা করে। ভ্যাট আরোপের ফলে এগুলোরও
দাম বেড়ে যাবে। রোজায় গরিব মানুষ খুবই কষ্ট পাবে।
আমরা চাই, অবিলম্বে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হোক। শিল্প রক্ষার পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দেওয়া হোক।