গোমতী
নদীর অব্যাহত ভাঙ্গনে তিতাস ও দাউদকান্দি উপজেলার বিভিন্ন স্থানে
এলাকাবাসি আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে।ইতোমধ্যে তিতাস উপজেলার নারান্দিয়া ইউনিয়নের
আসমানিয়া বাজার,নারান্দিয়া পূর্ব ও পশ্চিম পাড় এবং দাউদকান্দি উপজেলার
ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের খোশকান্দি গ্রামের বিভিন্ন স্থাপনা পুরোপুরি
নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।নদীভাঙ্গন রোধকল্পে ব্যবস্থা
নিতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) মহাপরিচালকের কাছে আবেদন করা হলেও
অদ্যাবধি কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। ফলে আসমানিয়া বাজার ব্যবসায়ী ও
খোশকান্দি গ্রামবাসি চরম আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে।
এদিকে নদীভাঙ্গন রোধের আবেদনটি ফাইল চালাচালির মধ্যেই আটকে পড়ে আছে বলে ভুক্তভোগীরা জানান।
কুমিল্লা
থেকে প্রবাহিত খরস্রোতা গোমতী নদী । এটি তিতাস ও দাউদকান্দি উপজেলার
সীমান্ত দিয়ে মেঘনা নদীতে গিয়ে মিশেছে। গত ১০/১২ বছর ধরে গোমতী নদীর
অব্যাহত ভাঙ্গনে তিতাস উপজেলার লালপুর ও নারান্দিয়া এবং দাউদকান্দি উপজেলার
খোশকান্দি,লক্ষ্মীপুর ও চান্দের চর গ্রামের অংশে বহু কাঁচা-পাকা ঘর-বাড়ি,
মসজিদ, স্কুল ও বৈদ্যুতিক খুটি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।গত বছরের
প্রলয়ংকরী বন্যাকালে নদীভাঙ্গনে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে
খোশকান্দি,নারান্দিয়া ও লক্ষ্মীপুর এলাকা। গোমতী নদীর করালগ্রাসে ইতোমধ্যে
নারান্দিয়া পূর্ব ও পশ্চিম এবং খোশকান্দি গ্রামের কমপক্ষে ৫০ টি বাড়ি ও
৯০বিঘা চাষের জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এতে শতাধিক পরিবার আশ্রয়হীন হয়ে
পড়েছে।
ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের আওলাদ হোসেন মেম্বার বিশদ বর্ণনা
দিলেন জনদুর্ভোগের।এই জনপ্রতিনিধি জানান, গোমতী নদীর ভাঙ্গন রোধকল্পে
নদীতে বালুভর্তি জিও ব্যাগ অথবা ব্লক ফেলানোর জন্য ঢাকায় পানি উন্নয়ন
বোর্ডের (পাউবো) মহাপরিচালকের (ডিজি) কাছে আবেদন করেছি।পাউবো'র কুমিল্লা
নির্বাহী প্রকৌশলী অফিস নদীভাঙ্গন এলাকার সার্ভে শেষে ব্যয়ের এস্টিমেট করে
ঢাকায় ডিজি অফিসে পাঠিয়েছেন। কিন্তু অদ্যাবধি নদীভাঙ্গন রোধে কার্যকর কোনো
ব্যবস্থা নেননি।নদীপাড়ের মানুষগুলো চরম হতাশা ও উৎকন্ঠায় বিনিদ্র রাত
কাটাচ্ছে।
তিতাস উপজেলার নারান্দিয়া পূর্ব পাড়ের বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিন
সরকার বলেন,আমার পুরো বাড়ি গোমতী নদীতে বিলিন হয়ে গেছে, আমিন এখন অন্যের
বাড়িতে ভাড়া থাকি। একই গ্রামের বাসিন্দা আমেনা বেগম বলেন,আমার বিল্ডিং নদী
গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে, এখন সরকার যদি ব্লক দিয়ে স্থায়ী ভাবে ভাঙ্গন রোধে
ব্যবস্থা নেয়ে তাহলে আমার বাকী বাড়ি টুকু থাকবে,তা না হলে বর্ষায় তাও ভেঙে
যাবে।
নারান্দিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আরিফুজ্জামান খোকা
বলেন, আজ কয়েক বছর ধরেই পানি উন্নয়ন বোর্ডে আবেদন করে আসছি গোমতী নদী
ভাঙ্গন রোধে স্থায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য,কিন্তু বরাদ্দ না থাকায় বিলম্ব
হচ্ছে।
ইলিয়টগঞ্জ উত্তর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন বলেন,গোমতী
নদীভাঙনে শতাধিক পরিবার গৃহহারা হয়েছে। ৮০ /৯০বিঘা চাষের জমি নদীগর্ভে
বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙ্গনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে তিনি সংশ্লিষ্ট
কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি করেছেন।
চররায়পুর গ্রামের বিশিষ্ট সমাজসেবী
কফিলউদ্দিন আহমেদ বলেন, লক্ষ্মীপুর ও খোশকান্দি গ্রামের অংশে গোমতী নদীর
ভাঙ্গনে গত ১০/১৫ বছরে মানুষের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে।বিষয়টি
জনগুরুত্বপূর্ণ।ভাঙ্গনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া অতীব জরুরী।
পাউবো'র
কুমিল্লা নির্বাহী প্রকৌশলী খাঁন ওয়ালিউজ্জামান বলেন,নদীভাঙ্গন রোধকল্পে
ব্যয়ের প্রাক্কলন করে ঢাকায় ডিজি অফিসে পাঠিয়েছি।অর্থ বরাদ্দ নেই। তাই কাজ
করা যাচ্ছে না।
মন্ত্রণালয় থেকে অর্থ বরাদ্দ হলে ডিজি অফিস আমাদের কাজের নির্দেশ দিবেন।