দেশে
চালের বাজার আরো বেসামাল হয়ে পড়েছে। এ সপ্তাহে নতুন করে কেজি প্রতি চালের
দাম বেড়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা। চিকন চাল নাজিরশাইল কেজি ৯০ টাকা ছাড়িয়েছে এবং
মোটা চালের কেজি ৫৮ থেকে ৬০ টাকা হয়েছে। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য
বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে কেজি প্রতি চিকন চালের দাম বেড়েছে ৪ দশমিক ৭৩
শতাংশ, মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে ৫ দশমিক শুন্য ৪ শতাংশ এবং মোটা
চালের দাম বেড়েছে ৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ। অর্থাৎ যে চাল গরিব খায়-সেই মোটা চালের
দাম বেড়েছে সবচেয়ে বেশি।
অপরদিকে টিসিবির তথ্যে আরো উল্লেখ করা হয়েছে,
গত এক বছরের ব্যবধানে কেজি প্রতি চিকন চালের দাম বেড়েছে ১৩ দশমিক ১৪
শতাংশ, মাঝারি মানের চালের দাম বেড়েছে ১৫ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং মোটা চালের
দাম বেড়েছে ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ।
চালের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায়
প্রতিকেজি সরু বা মিনিকেট চাল মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় আর
নাজিরশাইল মানভেদে ৯০ থেকে ৯২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মাসখানেক আগে মিনিকেট ৭২
থেকে ৮০ এবং নাজিরশাইলের কেজি ৮০ থেকে ৮৫ টাকা ছিল। এছাড়া মাঝারি বা
ব্রি-২৮ ও পায়জাম জাতের চালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। এছাড়া
মোটা বা গুটি স্বর্ণা জাতের চালের কেজি কিনতে ক্রেতাকে গুণতে হবে ৬০-৬২
টাকা। মোটাদাগে বাজারে এই দামের নিচে কোনো চাল নেই। যদিও একমাস আগে মোটা
চালের কেজি ৫৫ থেকে ৫৬ টাকায় বিক্রি হয়েছিল।
চালের বিক্রেতারা
জানিয়েছেন, কয়েক মাস ধরেই চালের বাজার চড়া। আমনের ভরা মৌসুমের পাশাপাশি
শুল্ক কমানো ও আমদানিসহ কয়েকটি উদ্যোগ নিলেও কোনো কাজে আসছে না। এক মাস ধরে
মানভেদে বিভিন্ন ধরনের চালের কেজিতে ৪ থেকে ৬ টাকা বেড়েছে।
এদিকে চালের
মতো কয়েক সপ্তাহ ধরে মুরগির বাজার বাড়তি। প্রতিকেজি ব্রয়লার বিক্রি হচ্ছে
২০০ থেকে ২২০ টাকায়। এরচেয়ে বেড়েছে সোনালি জাতের মুরগির দাম। এ জাতের
মুরগির কেজি কিনতে হলে কেজিপ্রতি খরচ পড়বে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা। যা আগে
৩০০-৩২০ টাকা ছিল। তবে বাজারে ফার্মের মুরগির ডিমের দাম কম রয়েছে। বড়
বাজারে ফার্মের প্রতি ডজন ডিম কেনা যাবে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। পাড়া মহল্লার
দোকানে ১৪০-১৪৫ টাকা।
বাজারে এখন ক্রেতা কিছুটা স্বস্তি পাচ্ছেন সবজির
বাজারে। কেননা বাজারে শীতের সবজি এখনো কম দামে মিলছে। আলুর দাম ২০-২৫ টাকার
মধ্যে এসেছে। পেঁয়াজ কিনতে পারা যাচ্ছে ৪০-৫০ টাকার মধ্যে। এছাড়া
প্রতিকেজি বেগুন ৪০ থেকে ৫০, শিম ৩০ থেকে ৫০, কাঁচা পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকা,
শসা ২৫ থেকে ৩০ টাকা, করল্লা ৫০ থেকে ৬০ টাকা, মুলা ১৫ থেকে ২০ টাকা,
বরবটি ৫০ থেকে ৬০ টাকা, গাজর ৪০ থেকে ৪৫ টাকা এবং মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৩০
টাকায় কেনা যাচ্ছে। প্রতি পিস ফুল ও বাঁধাকপি মানভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকা এবং
লাউয়ের পিস কেনা যাবে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়।
অন্যদিকে মুদি বাজারে দামের
তেমন হেরফের দেখা যায়নি। প্রতিকেজি আমদানি করা মসুর ডাল ১০৫ থেকে ১১০ ও
দেশি চিকন মসুর ডাল ১৩০ থেকে ১৩৫ থেকে টাকা, মুগডাল ১৬৫ থেকে ১৭০ ও ছোলার
কেজি ১২৫ থেকে ১৩০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাছের বাজার ঘুরেও একই
চিত্র দেখা গেছে। বাজারে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩৩০ থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত,
যা একদিন আগেও দামদর করে ৩০০ টাকাতেই কিনতে পারা গেছে। এছাড়াও বাজারে আজ
টেংরা ৫৫০, ছোট চিংড়ি ৫৫০, বড় চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০, মলা মাছ ৪০০, শোল ৬০০,
বোয়াল ৬০০, শিং ৩৫০-৪০০, বড় কাতল ৩০০, পোয়া মাছ ৩০০ টাকা কেজিতে বিক্রি
হচ্ছে। বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, এগুলোর প্রতিটি মাছই
রাতের ব্যবধানে ৪০ থেকে ৫০ টাকারও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে গরু ও
খাসির মাংসের বাজারেও দাম বৃদ্ধির এমন চিত্র দেখা গেছে। আজকের বাজারে গরুর
মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৭৮০ টাকা পর্যন্ত। প্রতি কেজি খাসির মাংস ১০৫০ টাকা
থেকে ১২০০ টাকা ও ছাগলের মাংস বিক্রি হচ্ছে ১০০০ টাকায়। এছাড়াও গরুর কলিজা ও
খাসির কলিজা বিক্রি হচ্ছে মাংসের দামেই।