বৃহস্পতিবার ৩০ জানুয়ারি ২০২৫
১৭ মাঘ ১৪৩১
নবিজির (সা.) সাত আকাশ ভ্রমণ ও নবিদের সাথে সাক্ষাৎ
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০২৫, ১২:৪১ এএম |


মালেক ইবনে সা’সাআহ (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, মেরাজের রাতে কী ঘটেছিল সে প্রসঙ্গে আল্লাহর নবি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, এক রাতে আমি কাবার হাতিম অংশে কাত হয়ে শুয়েছিলাম। এমন সময় হঠাৎ একজন আগন্তুক আমার কাছে এলেন। তিনি আমার কণ্ঠনালীর নিম্নভাগ থেকে নাভির উপরিভাগ পর্যন্ত বিদীর্ণ করলেন। তারপর ইমানে পরিপূর্ণ একটি স্বর্ণের থালা আমার কাছে আনা হলো এবং আমার অন্তরকে ধৌত করা হলো। তারপর তা ইমানে পরিপূর্ণ করে আবার পূর্বের জায়গায় রাখা হলো।
তারপর আকারে খচ্চরের চেয়ে ছোট এবং গাধার চেয়ে বড় এক সাদা বর্ণের বাহন আমার সম্মুখে উপস্থিত করা হয়। তাকে বলা হয় ‘বোরাক’। তার দৃষ্টি যত দূর যেত, সেখানে তার পা সেখানে রাখত। আমাকে তার ওপরে আরোহণ করানো হলো। জিবরাইল (আ.) আমাকে সাথে নিয়ে যাত্রা করলেন এবং নিকটতম আকাশে পৌছে দরজা খুলতে বললেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরাইল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তখন বলা হলো, তাকে স্বাগতম! তার আগমন অত্যন্ত শুভ। তারপর দরজা খুলে দেয়া হলো। ভেতরে প্রবেশ করে সেখানে দেখতে পেলাম ইয়াহইয়া ও ঈসাকে (আ.)। তারা দুইজন পরস্পর খালাতো ভাই। জিবরাইল (আ.) বললেন, ইনি হলেন ইয়াহইয়া (আ.) আর উনি ঈসা (আ.)। আপনি তাদের সালাম করুন। যখন আমি সালাম করলাম, তারা উভয়ে সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবিকে স্বাগতম।
জিবরাইল (আ.) আমাকে নিয়ে তৃতীয় আকাশে উঠলেন এবং দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরাইল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সঙ্গে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তাকে স্বাগতম। তার আগমন খুবই কল্যাণকর। তারপর দরজা খুলে দেয়া হলো। ভেতরে প্রবেশ করে আমি সেখানে ইউসুফকে (আ.) দেখতে পেলাম। জিবরাইল (আ.) বললেন, ইনি হলেন ইউসুফ (আ.)। তাকে সালাম করুন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবিকে স্বাগতম।
জিবরাইল (আ.) আমাকে নিয়ে আরো ওপরে উঠলেন এবং চতুর্থ আকাশে গিয়ে এসে দরজা খুলে দিতে বললেন। জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি কে? তিনি বললেন, জিবরাইল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। পুনরায় প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তাকে স্বাগতম। তার আগমন বড়ই শুভ! তারপর দরজা খুলে দেয়া হলো। ভেতরে প্রবেশ করে দেখলাম, সেখানে ইদরীস (আ.)। জিবরাইল (আ.) বললেন, ইনি ইদরীস (আ.) তাকে সালাম করুন। আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবিকে স্বাগতম।
জিবরাইল (আ.) আমাকে নিয়ে আরও ঊর্ধ্বে আরোহণ করলেন এবং পঞ্চম আকাশে গিয়ে দরজা খুলে দিতে বললেন। প্রশ্ন করা হলো, কে? বললেন, জিবরাইল। প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তাকে স্বাগতম! তার আগমন খুবই কল্যাণকর! তারপর দরজা খুলে দিলে আমি ভেতরে ঢুকলাম। সেখানে হারুনকে (আ.) দেখতে পেলাম। জিবরাইল (আ.) বললেন, ইনি হারুন (আ.) তাকে সালাম করুন। আমি তাকে সালাম করলে তিনি উত্তর দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবিকে স্বাগতম।
জিবরাইল (আ.) আমাকে সাথে নিয়ে আরো ঊর্ধ্বে উঠলেন। ষষ্ঠ আকাশে গিয়ে তিনি দরজা খুলে দিতে বললে প্রশ্ন করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরাইল। প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। প্রশ্ন করা হলো তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। বলা হলো, তাকে স্বাগতম। তারা আগমন কতই না উত্তম! তারপর দরজা খুলে দিলে আমি ভেতরে প্রবেশ করলাম। সেখানে মুসাকে (আ.) দেখতে পেলাম। জিবরাইল (আ.) সালাম বললেন, ইনি হলেন, মুসা (আ.) তাকে সালাম করুন। আমি তাকে সালাম করলে তিনি তার জবাব দিয়ে বললেন, নেককার ভাই ও নেককার নবিকে স্বাগতম। আমি যখন তাঁকে অতিক্রম করে অগ্রসর হলাম, তিনি কেঁদে ফেললেন। তাকে জিজ্ঞাসা করা হলো, আপনি কাঁদছেন কেন? তিনি বললেন, আমি এ জন্য কাঁদছি যে, আমার পরে এমন একজন যুবককে নবি হিসেবে পাঠানো হলো, যার উম্মত আমার উম্মতের চেয়ে বেশি সংখ্যায় জান্নাতে প্রবেশ করবে।
জিবরাইল (আ.) আমাকে নিয়ে সপ্তম আকাশে আরোহণ করলেন। দরজা খুলতে বললে আগের মতোই প্রশ্ন করা হলো, কে? তিনি বললেন, জিবরাইল। আবার প্রশ্ন করা হলো, আপনার সাথে আর কে? তিনি বললেন, মুহাম্মাদ (সা.)। প্রশ্ন করা হলো, তাকে কি ডেকে পাঠানো হয়েছে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। তারপর বলা হলো, তাকে স্বাগতম! তার আগমন কতই না উত্তম! আমি যখন ভেতরে প্রবেশ করলাম সেখানে ইবরাহিমকে (আ.) দেখতে পেলাম। জিবরাইল (আ.) বললেন, ইনি হলেন আপনার বাবা ইবরাহিম (আ.) তাকে সালাম করুন। তখন আমি তাকে সালাম করলাম। তিনি সালামের জবাব দিয়ে বললেন, নেককার পুত্র ও নেককার নবিকে স্বাগতম।
তারপর আমাকে সিদরাতুল মুনতাহা (সপ্তম আকাশে অবস্থিত একটি কুল গাছ) পর্যন্ত ওঠানো হলো। আমি দেখতে পেলাম, তার ফল হাজার নামক অঞ্চলের মটকার মতো এবং তার পাতা হাতির কানের মতো। জিবরাইল (আ.) বললেন, এটাই সিদরাতুল মুনতাহা। আমি সেখানে আরো দেখতে পেলাম চারটি নহর। দুটি নহর অপ্রকাশ্য, আর দুটি প্রকাশ্য। আমি জিজ্ঞেস করলাম, জিবরাইল! এ নহরের তৎপর্য কি? তিনি বললেন, অপ্রকাশ্য দুটি হলো জান্নাতে প্রবাহিত দুটি নহর। আর প্রকাশ্য দুটি হলো (মিশরের) নীল নদ (ইরাকের) ফোরাত নদী।
আমাকে বায়তুল মা’মূর দেখানো হলো। তারপর আমার সামনে হাজির করা হলো এক পাত্র মদ, এক পাত্র দুধ ও এক পাত্র মধু। আমি দুধ গ্রহণ করলাম এবং তা পান করলাম। জিবরাইল (আ.) বললেন, এটা ফিতরাতের (স্বভাব-ধর্মের) নিদর্শন। আপনি এবং আপনার উম্মত সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবেন।
তারপর আমার ওপর দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করা হলো। আমি তা গ্রহণ করে ফিরছিলাম। মুসার (আ.) সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় তিনি বললেন, আপনাকে কী করতে আদেশ করা হয়েছে? আমি বললাম, দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজের সালাতের আদেশ করা হয়েছে। তিনি বললেন, আপনার উম্মত দৈনিক পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারবে না। আল্লাহর শপথ! আপনার আগে আমি মানুষকে পরখ করে দেখেছি। বনি ইসরাইলের হেদায়াতের জন্য আমি যথাসাধ্য পরিশ্রম করেছি। তাই আপনি আপনার রবের কাছে ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের পক্ষে নামাজ আরো কমিয়ে দেওয়ার আবেদন করুন। আমি ফিরে গেলাম এবং তার পরামর্শ অনুযায়ী প্রার্থনা করলাম। আল্লাহ তাআলা আমার ওপর থেকে দশ ওয়াক্ত নামাজ কমিয়ে দিলেন। আমি মুসার (আ.) কাছে ফিরলে তিনি আবারও অনুরূপ কথা বললেন। আমি আবার আল্লাহর কাছে ফিরে গেলাম। তিনি আমার ওপর থেকে আরো দশ ওয়াক্ত নামাজ কমিয়ে দিলেন। আবার আমি মুসার (আ.) কাছে ফিরলে তিনি অনুরূপ কথাই বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম। তখন আল্লাহ তা’আলা আরো দশ ওয়াক্ত নামাজ মাফ করে দিলেন। আমি মুসার (রা.) কাছে ফিরলে তিনি আবারও ওই কথাই বললেন। আমি আবার ফিরে গেলাম। আল্লাহ তাআলা আমার জন্য দশ ওয়াক্ত নামাজ কম করে দিলেন এবং আমাকে প্রত্যেক দিন দশ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের নির্দেশ দিলেন। আমি মুসার কাছে ফিরলে এবারও তিনি অনুরূপ কথাই বললেন। ফলে আমি পুনরায় ফিরে গেলে আমাকে প্রত্যেক দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের নির্দেশ দেওয়া হলো।
আমি মুসার (আ.) কাছে ফিরলে তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আপনাকে কী করতে আদেশ করা হলো? আমি বললাম, আমাকে দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এবারও তিনি বললেন, আপনার উম্মত প্রত্যেক দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করতে পারবে না। আপনার আগে আমি মানুষদের পরখ করে দেখেছি এবং বনি ইসরাইলের হেদায়াতের জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা ও কষ্ট স্বীকার করেছি। আপনি আবার আপনার রবের কাছে ফিরে যান এবং আপনার উম্মতের জন্য আরো কম করার জন্য প্রার্থনা করুন। আমি বললাম, আমি আমার রবের কাছে এত বেশি আবেদন করেছি যে আবার ফিরে যেতে লজ্জাবোধ করছি, বরং আমি আল্লাহর এ নির্দেশের ওপর সন্তুষ্ট এবং আমি আমার ও আমার উম্মতের ব্যাপার আল্লাহর ওপর অর্পণ করছি। যখন আমি মূসা আলায়হিস সালাম-কে অতিক্রম করে সামনে অগ্রসর হলাম, তখন আল্লাহর পক্ষ থেকে একজন ঘোষণাকারী ঘোষণা দিলেন, আমার অবশ্য পালনীয় আদেশটি আমি জারি করে দিলাম এবং বান্দাদের জন্য সহজ করে দিলাম।
সূত্র: সহিহ বুখারি ও সহিহ মুসলিম













সর্বশেষ সংবাদ
নামাজ পড়েই গাড়ি চুরির চেষ্টা যুবকের!
চ্যাম্পিয়ন আনসার আলী মেমোরিয়াল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি
কুমিল্লায় গ্রাহকের অভিযোগে ফেঁসে গেলেন পূবালী ব্যাংক ম্যানেজার
‘দুদক দুর্নীতিগ্রস্থ না হলে দুর্নীতি কমে আসবে’ -দুদক চেয়ারম্যান
ইতালিতে পাঠানোর কথা বলে লিবিয়ায় মাফিয়া চক্রের হাতে তুলে দেয়ার অভিযোগ!
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
কুমিল্লায় গ্রাহকের অভিযোগে ফেঁসে গেলেন পূবালী ব্যাংক ম্যানেজার
এবতেদায়ী মাদ্রাসা জাতীয়করণ হচ্ছে
দেশে ফেরেই গ্রেপ্তার স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা সাদ্দাম
কুমিল্লা ক্লাবের নির্বাচন ঘিরে ব্যাপক উৎসাহের আমেজ
নদী-খাল কিছু নেই,তবুও নির্মিত হচ্ছেপৌনে ৪ কোটি টাকার সেতু
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২