মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের দুনিয়ার জীবন শেষ হয়। শুরু হয় কবরের জীবন, তারপর সংঘটিত হবে কেয়ামত; পুরো বিশ্বজগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে এবং সব প্রাণের মৃত্যু হবে। তারপর আল্লাহ তাআলা আবার সবাইকে জীবন দান করবেন, ভালো-মন্দ কাজের বিচার করবেন এবং চূড়ান্ত পরিণাম অর্থাৎ জান্নাত ও জাহান্নাম নির্ধারিত হবে।
জান্নাত ও জাহান্নাম মানুষের চূড়ান্ত ঠিকানা, চূড়ান্ত প্রতিফলের জায়গা। জান্নাত-জাহান্নামের মানুষ যাবে কেয়ামত ও শেষ বিচারের পর। কিন্তু দুনিয়ার ভালো ও মন্দ কাজের প্রতিদান ও শাস্তি শুরু হয়ে যায় মৃত্যুর পর কবরের জীবন থেকেই। বিভিন্ন হাদিসে নবিজি (সা.) কবরের বিভিন্ন শাস্তি ও প্রতিদানের কথা বলেছেন।
এর মধ্যে একটি প্রতিদান/শাস্তি হলো কবরে মুমিন ও নেক জান্নাতের নেয়ামতের জন্য অপেক্ষা করে আবার কাফের ও গুনাহগার ব্যক্তি অপেক্ষা করে জাহান্নামের ভয়াবহ শাস্তির জন্য। কবরে প্রতিদিন দুই বার মৃত ব্যক্তিকে তার চূড়ান্ত ঠিকানা দেখানো হয়। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কোনো ব্যক্তি মারা যায়, তখন সকাল-সন্ধ্যায় তার পরকালের আবাসস্থল তার সামনে পেশ করা হয়। সে জান্নাতবাসী হলে তাকে জান্নাতে তার ঠিকানা আর জাহান্নামবাসী হলে তাকে জাহান্নামে তার ঠিকানা দেখানো হয়। (সহিহ বুখারি)
আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত আরেকটি হাদিসে কবরের সওয়াল-জবাব এবং কীভাবে প্রতিদান ও শাস্তি শুরু হয় তা বর্ণনা করে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, কাউকে যখন দাফন করা হয় এবং তার সঙ্গীরা চলে যায়, তখন মুগুর হাতে ফেরেশতা আসেন, তাকে বসান এবং বলেন, এই ব্যক্তি (মুহাম্মাদ সা.) সম্পর্কে তুমি কী বলো? যদি সে মুমিন হয়, তাহলে বলে, আমি সাক্ষ্য দেই আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ তার বান্দা ও রাসুল। ফেরেশতা বলেন, তুমি সত্য বলেছ। তারপর তার জন্য জাহান্নামের দিকে একটি দরজা খুলে দেন এবং বলেন, এটা তোমার জায়গা হতো যদি তুমি তোমার রবকে অস্বীকার করতে। যেহেতু তুমি তোমার রবের ওপর ইমান এনেছ, তাই তোমার জায়গা হলো এটা এবং জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেন। মুমিন ব্যক্তি চায় দ্রুত সেখানে চলে যেতে। ফেরেশতা তাকে বলেন, শান্ত হও, তারপর তার কবর প্রশস্ত করে দেন।
আর কাফের বা মুনাফিককে যখন বলা হয় তুমি এই ব্যক্তি সম্পর্কে কী বলো? সে বলে, আমি জানি না। আমি মানুষকে এটা ওটা বলতে শুনেছি। ফেরেশতা বলেন, তুমি জানোনি, শেখোনি, হেদায়াতও পাওনি। তারপর জান্নাতের দিকে একটি দরজা খুলে দেন এবং বলেন, যদি তুমি তোমার রবের ওপর ইমান আনতে, তাহলে এটা তোমার ঠিকানা হতো। তুমি যেহেতু কুফুরি করেছো, আল্লাহ তাআলা এই ঠিকানার পরিবর্তে তোমার জন্য এটা নির্ধারণ করেছেন এবং জাহান্নামের দিকে দরজা খুলে যায়। তারপর ফেরেশতা মুগুর দিয়ে এত জোরে আঘাত করেন, যে আঘাতের শব্দ জীন ও মানুষ ছাড়া আল্লাহর সব সৃষ্টি শুনতে পায়। (মুসনাদে আহমদ)