পঞ্চগড়ে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশ নেওয়া আল আমিন নামে এক
ইজিবাইক চালক যুবককে হত্যার পর লাশ গুমের অভিযোগে দায়ের করা মামলার প্রধান
আসামি সাবেক রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর
করেছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) সাড়ে ১১টায় মামলার শুনানী শেষে রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট নাহিদা আকতার জুলিয়েট।
এর
আগে, সাবেক রেলমন্ত্রীকে আদালতে তোলার আগে সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণে
নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সুজনকে আদালতে নিয়ে আসা হলে
আদালত চত্বরে জড়ো হওয়া লোকজন ‘ভূয়া ভূয়া’, ‘ভোট চোর, ভোট চোর’ শ্লোগান দিতে
থাকে। সকাল সাড়ে ১০ টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এক ঘণ্টা শুনানী চলে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সুজনের ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করলে ৩ দিনের
রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
মামলার শুনানীকালে আদালতের উদ্দেশে নূরুল
ইসলাম সুজন বলেন, ‘আমি গত ২০ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হিসেবে
দ্বায়িত্ব পালন করেছি। আমি দীর্ঘদিন সুপ্রিম কোর্ট বারের সম্পাদকের
দ্বায়িত্বে ছিলাম, সরকারের সাবেক মন্ত্রী ছিলাম। একই দিনে তিনটি ঘটনায়
ঢাকার যাত্রাবাড়ি, ডেমরা ও পঞ্চগড়ের মামলায় আমাকে আসামি করা হচ্ছে। আমি এই
ঘটনায় সম্পৃক্ত ছিলাম না। আমাকে রাজনৈতিক উদ্দেশে হয়রানি করা হচ্ছে। ঢাকা
থেকে পঞ্চগড়ে যাওয়া আসাতে আমার কষ্ট হচ্ছে। আদালতকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার
করা হচ্ছে। সরকারের পরিবর্তন না হলে এখানে আসতে হতো না।’ আদালতে নিজেকে
নির্দোষ দাবি করেন সুজন।
মামলার শুনানীতে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে
জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আদম সুফি, জিপি আব্দুল বারী, এপিপি
মোস্তাফিজুর রহমান মিলন, এপিপি মোস্তাফিজুর রহমান আইনজীবী হাবীব আল আমিন
ফেরদৌসসহ অন্তত ১০জন অংশগ্রহণ করে।
এদিকে আসামি পক্ষের আইনজীবী হিসেবে
মির্জা সারোয়ার হোসেন, জেলা ও দায়রা জজ আদালতের সাবেক পিপি আমিনুর রহমান,
আজিজার রহমান আজু, আবু বক্কর সিদ্দিক, আলী আসমান বিপুলসহ ১০ থেকে ১৫ জন অংশ
নেয়।
আসামি পক্ষের আইনজীবী মির্জা সারোয়ার হোসেন বলেন, এজহার নামীয়
আসামি নূরুল ইসলাম সুজনের রিমান্ড আবেদনের শুনানী ছিল। রিমান্ড আবেদনে
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা উল্লেখ করেছেন, ঘটনার সময় সুজন সাহেব মোবাইল
ফোনে গুম ও পরে হত্যার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা শুনানীতে বলেছি, বর্তমান তথ্য
প্রযুক্তির যুগে সেই রেকর্ড বের করা সম্ভব। মামলার বাদি আমাদের একটি
এফিডেভিট দিয়েছেন যাতে তিনি বলেছেন, আসামি সুজনকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন
না। তার সঙ্গে কোনো শত্রুতা নেই বলে উল্লেখ করেছেন। দীর্ঘ শুনানীতে আমরা
তার জামিনের আবেদন করেছি। কিন্তু আদালত তিনদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন।
আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা আশা করি তিনি ন্যায় বিচার পাবেন।
রাষ্ট্রপক্ষের
আইনজীবী এবং জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি আদম সুফি বলেন, ‘এটি রহস্যাবৃত।
ভিকটিমের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। রহস্য উদঘাটনের জন্য এই মামলায়
আসামির রিমান্ড প্রয়োজন ছিল। এটি আদালত অনুধাবন করেছেন বিধায় আদালত তিন
দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন। আর আসামি পক্ষ যে এফিডেভিট দেখিয়েছে আদালতে
তাতে কোনো সাক্ষীর স্বাক্ষর নেই। এতে প্রতিয়মান হয় যে সেটি সাজানো। আগামী
দিনে এই মামলায় ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে ইনশাল্লাহ।’
এর আগে, মামলায়
হাজির করার জন্য নূরুল ইসলাম সুজনকে গত মঙ্গলবার রাতে ঢাকার কাশিমপুর
কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে পঞ্চগড় জেলা কারাগারে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে
হাজির করা হয়।
উল্লেখ্য, পঞ্চগড়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অংশ নিয়ে ৪
আগস্ট থেকে গুম হয় আল আমিন। এ ঘটনায় আল আমিনের বাবা মনু মিয়া গত ১০
নভেম্বর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক রেলমন্ত্রী সুজনসহ ১৯ জনকে আসামি
করে হত্যা ও গুমের মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় আরও ১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা
আসামি করা হয়।