প্রকাশ: শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:০৮ এএম আপডেট: ০১.০২.২০২৫ ১:৫৫ এএম |
নিজস্ব প্রতিবেদক:
কুমিল্লায় যৌথবাহিনীর অভিযানে আটকের এক যুবদল নেতার মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে।
মারা যাওয়া তৌহিদুল ইসলাম কুমিল্লা সদর উপজেলার ৫ নং পাঁচথুবি ইউনিয়ন
যুবদলের আহবায়ক এবং ইটাল্লা সরকার বাড়ির মোখলেছুর রহমানের পুত্র।
বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ২টার দিকে যৌথবাহিনীর একটি দল তাকে আটক করে নিয়ে
যায় বলে জানিয়েছেন তার ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু। পরে কুমিল্লা মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালে তৌহিদের লাশ দেখতে পান বলে জানান তিনি।
তৌহিদুলের পরিবার
সূত্রে জানা যায়, বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) রাত ২টারদিকে তৌহিদুলকে
যৌথবাহিনীর সদস্যরা বাড়ি থেকে আটক করে নিয়ে যায়। পর দিন (৩১ জানুয়ারি)বেলা
বারোটার দিকে পুলিশ তাদেরকে ফোন করে জানায়, তৌহিদুল আহত অবস্থায় গোমতী নদীর
পাড়ে পড়ে আছে। সেখান থেকে পুলিশ প্রথমে তাকে সদর হাসপাতালে এবং সেখান থেকে
কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা
করেন।
তৌহিদুল ইসলামের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ টিপু বলেন, রাত আড়াইটার
দিকে যৌথবাহিনী ও সিভিল পোশাকে কয়েকজন ব্যক্তি আমার ভাইকে ধরে নিয়ে যায়।
পরদিন শুক্রবার সকাল আটটার দিকে যৌথবাহিনী আমার ভাইকে সহ আরেকজনকে নিয়ে
বাড়িতে এসে এক ঘণ্টা যাবৎ বাড়ির বিভিন্ন ঘরে তল্লাশি চালায় । তল্লাশির পরে
কোনো অস্ত্র না পেয়ে আমার ভাইকে আবারো তারা নিয়ে যায় । দুপুর বারোটার দিকে
পুলিশ আমাদেরকে ফোন করে বলে গোমতী বিলাসের কাছে আমার ভাই পড়ে আছে আহত
অবস্থায়। আপনারা হসপিটালে আসেন আমরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি।হাসপাতালে
গিয়ে আমার ভাইয়ের লাশ দেখতে পাই।
কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা যুবদলের সদস্য
সচিব ফরিদ উদ্দিন শিবলু বলেন, তৌহিদুল ইসলামের পরিবারের সদস্যরা আমাদেরকে
জানিয়েছেন বৃহস্পতিবার রাত আড়াইটার দিকে তাকে যৌথবাহিনী আটক করেছে। পরদিন
দুপুরে হাসপাতালে তার লাশ পাওয়া গেছে। তার শরীরে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।
অতিরিক্ত মারধরের কারণে তার মৃত্যু হয়েছে- এটা বলাই যায়। যতদূর জানি তার
বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। পুলিশও কিছু বলছে না। তিনি অত্যন্ত ভালো মানুষ
ছিলেন, তার দুই মেয়ে হাফেজা।
এদিকে যৌথবাহিনীর অভিযানে আটকের পর যুবদল
নেতা তৌহিদুল ইসলামের মৃত্যুর খবর পেয়ে তার মরদেহ দেখতে কুমিল্লা মেডিক্যাল
কলেজ হাসপাতালে যান বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা সাবেক সংসদ সদস্য
আলহাজ¦ মনিরুল হক চৌধুরী, কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও
কেন্দ্রীয় বিএনপির ত্রাণ ও পুনর্বাসন সম্পাদক হাজী আমিন উর রশিদ ইয়াছিনসহ
নেতৃবৃন্দ।
যুবদল নেতার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে কুমিল্লা কোতয়ালী
মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহিনুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেছেন, যৌথ
বাহিনী আমাদের সকাল এগারোটায় জানায়, গোমতী নদীর পাড় সংলগ্ন ‘গোমতী বিলাসে’
একজন আহত অবস্থায় আছে। পরে সেখান থেকেপুলিশ তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে
যায়। চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
ওসি মাহিনুল আরো জানান, ময়নাতদন্ত শেষে
সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে তার মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। এ
ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা হয়েছে।
এ বিষয়ে কুমিল্লার অতিরিক্ত পুলিশ
সুপার (সদর সার্কেল) মোহাম্মদ সাইফুল মালিক সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, শুক্রবার
বেলা ১১টার দিকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে থানা–পুলিশকে বলা হয় তৌহিদুল
ইসলামকে নেওয়ার জন্য। যখন পুলিশের কাছে তৌহিদুলকে হস্তান্তর করা হয়, তখন
তিনি অচেতন অবস্থায় ছিলেন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত
ঘোষণা করেন। তাঁকে কেন আটক করা হয়েছিল বা কীভাবে তিনি মারা গেছেন, সেটি
এখনই বলা যাচ্ছে না। বিষয়টি বিস্তারিত জানার চেষ্টা করছেন। ময়নাতদন্তের
প্রতিবেদনে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। প্রাথমিকভাবে খোঁজ নিয়ে
তৌহিদুলের বিরুদ্ধে কোনো মামলার তথ্য পাওয়া যায়নি বলে জানান এই পুলিশ
কর্মকর্তা।