বৃহস্পতিবার ৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫
২৪ মাঘ ১৪৩১
ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে নতুন এক বিশ্ব
রাফিয়া জাকারিয়া
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৪ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ১:২৯ এএম আপডেট: ০৪.০২.২০২৫ ১:৫৬ এএম |



 ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে নতুন এক বিশ্ব যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ট্রাম্প প্রশাসন এই ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে চাইছে, যাতে অন্য দেশগুলোকে ভূখণ্ড ও সম্পদের বাইরে নিয়ে যেতে পারে। অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র এই নতুন সহস্রাব্দের শুরু থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার মতো জায়গায় এটি করে আসছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, এটি পশ্চিমা দেশগুলো যেমন- ইইউ রাজ্যগুলো এবং অন্যরাও আমেরিকার রোষানলের শিকার হবে। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’, ইরাক এবং আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে এই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাড়াবাড়ি দেখে দূর থেকে খুশি হয়েছিল। এখন একটি নতুন ধরনের মার্কিন যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং এর লক্ষ্যবস্তু হলো সেই দেশগুলো যারা যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতার শেষ যুগে রক্ষা পেয়েছিল। এই দেশগুলোই আমেরিকার এই নতুন দিনের লক্ষ্যবস্তু।..
গত সপ্তাহ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সবচেয়ে ব্যস্ততম সময় ছিল। তিনি ক্ষমতায় আসার পর সারা বিশ্ব এখন উদ্বিগ্ন। ভারতীয়রা চিন্তিত রয়েছে এইচ-১বি ভিসার হ্রাস এবং জন্মগত নাগরিকত্ব বাদ দেওয়া নিয়ে। এতে মধ্যবিত্তের ওপর কী প্রভাব ফেলতে পারে তা নিয়ে শঙ্কায় ভারতীয়রা। 
চীনারা ১০ শতাংশ শুল্ক নিয়ে চিন্তিত; যা ট্রাম্প তাদের ওপর আরোপ করেছেন। কানাডাও তাদের সঙ্গে বাণিজ্যঘাটতি কমাতে কানাডিয়ান পণ্য কীভাবে শুল্কের মুখোমুখি হবে, সে সম্পর্কে ট্রাম্পের কঠোর বিবৃতি নিয়ে চিন্তিত।
মেক্সিকো একই ইস্যুতে চিন্তিত। ট্রাম্পের দেশ ‘ড্রাগ কার্টেল’ অর্থাৎ বাণিজ্য চুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়ে থাকে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে লাখ লাখ অনথিভুক্ত মেক্সিকানের নির্বাসন নিয়েও বেশ চিন্তিত তারা। বাণিজ্যঘাটতি-সংক্রান্ত ট্রাম্পের বক্তব্যে চরম উদ্বিগ্ন ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। ইইউর পণ্যের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা এবং বাণিজ্য বিধিনিষেধ নিয়েও বিপাকে ইইউ। ন্যাটো বা এর প্রতিরক্ষার প্রতিশ্রুতি টিকিয়ে রাখার ব্যাপারে ট্রাম্পের উৎসাহের অভাব নিয়েও ইইউ খুব উদ্বিগ্ন। ডেনমার্ক গ্রিনল্যান্ড হারানো নিয়ে চিন্তিত। অন্যদিকে পানামা পানামা খালও হারানোর বিষয়ে চিন্তিত। ট্রাম্প ঘোষণা করেছেন, দুটোই যুক্তরাষ্ট্র দখল করতে চায় (সামরিক শক্তির প্রয়োগ বাতিল না করে)।
নিঃসন্দেহে ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে একটি নতুন বিশ্ব হতে চলেছে। এসবের মধ্যে প্রথমত, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে পারে। এ কারণে ভারতীয়দের চিন্তিত হওয়ার বেশ কারণ রয়েছে। ট্রাম্প শুধু অবৈধ অভিবাসন রোধের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন না বরং বৈধ অভিবাসনকেও কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এতে ব্যাপক প্রভাব পড়বে ভারতীয়দের। কারণ, এশিয়ার মধ্যে ভারতীয় অভিবাসী সবচেয়ে বেশি আমেরিকায়। গত সপ্তাহে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমগুলোয় এ বিষয়টি সবচেয়ে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে।
অনেকেই জন্মগত নাগরিকত্ব-সংক্রান্ত নিয়মের পরিবর্তন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। সাংবিধানিকভাবে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জন্মগ্রহণকারী যেকোনো শিশু স্বয়ংক্রিয়ভাবে আমেরিকান নাগরিকত্ব পায়।
এ সপ্তাহে ট্রাম্প স্বাক্ষরিত এক নির্বাহী আদেশে এই নিয়ম পরিবর্তনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। এটি অ-অভিবাসী ভিসায় থাকা শিশুদের (ছাত্রভিসা এবং কাজের ভিসাসহ) বা নথিভুক্ত কর্মীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে না। ভারতীয় সংবাদপত্রের আলোচনা অনুসারে, এতে ভারতীয় মধ্যবিত্তের অনেকের চিন্তাভাবনাকেই পরিবর্তন করে দেবে। বিশেষ করে, যারা আমেরিকার ভিসা পেতে আগ্রহী। তার পর যারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকাকালীন সন্তান ধারণের চেষ্টা করেন এবং আমেরিকার নাগরিকত্ব চান, তারাও এ বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। 
নাগরিকত্বের ভিত্তি পরিবর্তনে ট্রাম্পের যে আদেশ, তা মার্কিন ফেডারেল আদালতে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে। একজন বিচারক সাময়িকভাবে এই আদেশটি ব্লক করে দিয়েছেন। যদি এই নিয়ম অবিলম্বে বাস্তবায়িত না হয়, তাহলে এটি অনেকটা অনিশ্চয়তার উদ্রেক করবে। 
যারা অবৈধভাবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আছেন তারাও সামনে কঠিন সময়ের মুখোমুখি হতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে বর্তমানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকা পাকিস্তানি নাগরিকরাও বিপদে আছেন।
সপ্তাহান্তে যে অভিবাসন অভিযানগুলো শুরু হওয়ার কথা রয়েছে, তা সম্ভবত অভিবাসী জনসংখ্যার পরিমাণ যে এলাকায় বেশি সেই অঞ্চলের লোকদের ধরতে ব্যবহৃত হতে পারে। যারা এই সমস্যায় উপনীত হতে পারেন তাদের এসব বিষয় জানা উচিত। যদি তারা মার্কিন সীমান্তের কাছাকাছি না থাকেন, ইমিগ্রেশন এবং কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) অফিসারদের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের কোনো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে না।
মার্কিন সীমান্ত চেকপয়েন্ট নয়, এমন জায়গায় যোগাযোগ করার সময় শনাক্তকরণ বা ডকুমেন্টেশন দেওয়ার কোনো দরকার নেই। যদি এমন কোনো সম্ভাব্য কারণ না থাকে, যা এজেন্টকে সন্দেহ করে যে, ওই ব্যক্তি অবৈধ হতে পারেন। মানুষের জাতিগত প্রোফাইলিং সম্ভাব্য কারণের জন্য দেখানোর দরকার নেই। পরিচয় না দেওয়া বা প্রশ্নের উত্তর না দেওয়া এবং নিজেই অভিবাসী বলে মনে করাকে আটক না করার ভিত্তি পরিমাপ করা ঠিক নয়। যারা এমন ব্যবসা চালান, যেগুলোতে নথিবিহীন লোকদের নিয়োগ দেওয়া হয়, তারা আইসিই (ওঈঊ) অফিসারদের কাছে বিচারের মাধ্যমে গ্রেপ্তারের জন্য জিজ্ঞেস করতে পারেন। যদি তাদের ব্যবসার স্থানকে তাদের অভিযানের জন্য লক্ষ্য করা হয় তাহলে এমন হতে পারে। তারা তাদের কর্মচারীদের নির্দেশ দিতে পারেন যে, তারা এ ধরনের ওয়ারেন্ট তৈরি না হওয়া পর্যন্ত শনাক্তকরণ বা বৈধ বসবাসের প্রমাণ দেখাতে অস্বীকার করবেন। 
এটি শুধু এমন নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের এবং আমেরিকান নাগরিকত্বের জন্য তার সীমানা বন্ধ করে দিচ্ছে বরং পণ্যগুলোর জন্যও এমন আদেশ দেওয়া হচ্ছে। দাভোস সামিটে সম্প্রচারিত এক বক্তৃতায় ট্রাম্প ঘোষণা করেছিলেন, তিনি বাইডেনের অধীনে করপোরেট ট্যাক্সের হার ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনবেন। যদি ব্যবসাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে তাদের পণ্য তৈরি করতে পছন্দ করে তাহলে এমনটা প্রযোজ্য হবে। ট্রাম্পের অধীনে সুদের হারও হ্রাস পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, যা আমেরিকানদের জন্য প্রযোজ্য হবে। যারা মুদ্রাস্ফীতিকে বাইডেন প্রশাসনের প্রতি তাদের অসন্তুষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে মনে করেন, তাদের জন্য কিছুটা আশার আলো। আমেরিকান ম্যানুফ্যাকচারিংকে পুনরুজ্জীবিত করার ওপর ফোকাস করা হয়েছে, যাতে আমেরিকানদের কাজের সুযোগ বাড়ানো যায়। বিশেষ করে রাস্ট বেল্টের রাজ্যগুলোতে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন আউটসোর্স শুরু করার পর থেকে মন্দার সম্মুখীন হয়েছে। 
যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের সবচেয়ে ধনী এবং বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ। ট্রাম্প প্রশাসন এই ক্ষমতাকে কাজে লাগাতে চাইছে, যাতে অন্য দেশগুলোকে ভূখণ্ড ও সম্পদের বাইরে নিয়ে যেতে পারে। অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্র এই নতুন সহস্রাব্দের শুরু থেকে মধ্যপ্রাচ্য এবং দক্ষিণ এশিয়ার মতো জায়গায় এটি করে আসছে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে যে, এটি পশ্চিমা দেশগুলো যেমন- ইইউ রাজ্যগুলো এবং অন্যরাও আমেরিকার রোষানলের শিকার হবে। ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ’, ইরাক এবং আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে এই দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের বাড়াবাড়ি দেখে দূর থেকে খুশি হয়েছিল। 
এখন একটি নতুন ধরনের মার্কিন যুদ্ধ শুরু হয়েছে এবং এর লক্ষ্যবস্তু হলো সেই দেশগুলো যারা যুক্তরাষ্ট্র ক্ষমতার শেষ যুগে রক্ষা পেয়েছিল। এই দেশগুলোই আমেরিকার এই নতুন দিনের লক্ষ্যবস্তু। আমেরিকা যখন অন্যদের সঙ্গে এটি করেছিল তখন তারা কথা বলেনি। তাই আমেরিকার মাধ্যমে নিপীড়িত হওয়া এখন অন্য কারও পালা, এখন তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
লেখক: আমেরিকার আইনজীবী 
ডন থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদুল ইসলাম সকাল














সর্বশেষ সংবাদ
অর্ধলক্ষাধিক বইয়ের সমাহার কুমিল্লার গণগ্রন্থাগারে
চৌদ্দগ্রামে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
কুমিল্লার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের ফোন নাম্বার হ্যাক
জামায়াত নেতা মাহবুবর রহমানের মায়ের ইন্তেকাল
ব্রাহ্মণপাড়ায় বিজিবি অভিযানে গাঁজাসহ মাদক কারবারি গ্রেপ্তার
আরো খবর ⇒
সর্বাধিক পঠিত
সৌদি আরবে সড়ক দুর্ঘটনায় কুমিল্লার এক যুবক নিহত
কুমিল্লায় একদিনে তিন লাশ উদ্ধার
চৌদ্দগ্রামে যুবককে পিটিয়ে হত্যা
যুবদল নেতা তৌহিদুল ইসলাম স্মরণে শোক সভা
সৌদি আরবে সড়ক দর্ঘটনায় কুমিল্লার এক যুবক নিহত
Follow Us
সম্পাদক ও প্রকাশক : মোহাম্মদ আবুল কাশেম হৃদয় (আবুল কাশেম হৃদয়)
বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়ঃ ১২২ অধ্যক্ষ আবদুর রউফ ভবন, কুমিল্লা টাউন হল গেইটের বিপরিতে, কান্দিরপাড়, কুমিল্লা ৩৫০০। বাংলাদেশ।
ফোন +৮৮ ০৮১ ৬৭১১৯, +৮৮০ ১৭১১ ১৫২ ৪৪৩, +৮৮ ০১৭১১ ৯৯৭৯৬৯, +৮৮ ০১৯৭৯ ১৫২৪৪৩, ই মেইল: [email protected]
© সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত, কুমিল্লার কাগজ ২০০৪ - ২০২২