কিছুটা উন্নত জীবনের প্রত্যাশায় প্রতিবছর শত শত তরুণ অবৈধ পথে বিদেশে পাড়ি জমান। তাঁদের কেউ কেউ প্রচণ্ড দুর্ভোগ মোকাবেলা করে শেষ পর্যন্ত গন্তব্যে পৌঁছাতে পারলেও অনেকেই তা পারেন না। অনেককেই অত্যন্ত করুণ পরিণতির মুখোমুখি হতে হয়। হয় সাগরে ডুবে মৃত্যু হয়, না হয় মরুভূমিতে অনাহারে বা তৃষ্ণায় জীবন যায়।
কখনো কখনো ঠাঁই হয় গণকবরে। অনেক সময় জিম্মি করে অত্যাচার-নির্যাতন চালানো হয় এবং তাঁদের পরিবারকে বাধ্য করা হয় মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ দিতে। তার পরও বেকারত্বের অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে অনেক তরুণই দালালদের পাতা ফাঁদে পা দেন।
পত্রিকান্তরে প্রকাশিত এক খবরে বলা হয়েছে, লিবিয়ার ব্রেগা উপকূলে উদ্ধার হওয়া ২০ জনের মরদেহের সবাই বাংলাদেশি বলে আশঙ্কা করছে স্থানীয় রেড ক্রিসেন্ট।
লিবিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস জানিয়েছে, মরদেহগুলো পচন ধরায় নাগরিকত্ব শনাক্ত করা যায়নি। ওদিকে ২ ফেব্রুয়ারি ও গত ২৮ জানুয়ারি প্রকাশিত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, বিভিন্ন কারখানা ও ক্যান্টনমেন্টে মালি বা বাবুর্চির কাজ দেওয়ার কথা বলে তরুণদের পাঠানো হয় রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে। সেখানে অকাতরে প্রাণ হারাচ্ছে অনেকে। প্রথমে ওমরাহ ভিসায় সৌদি আরবে নেওয়া হয় তাঁদের।
এরপর তাঁদের বিক্রি করে দেওয়া হয় রাশিয়ান একটি চক্রের কাছে। যেসব রিক্রুটিং এজেন্সি এই তরুণদের রাশিয়ায় পাঠাচ্ছে, এসব এজেন্সি নিবন্ধিত নয়। নিবন্ধিত রিক্রুটিং এজেন্সি না হয়েও এভাবে প্রকাশ্যে বিদেশে শিক্ষার্থী ও কর্মী পাঠানোর বিষয়টিকে প্রতারণা বলছেন প্রবাসীকল্যাণ খাতসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, এটি নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি। অভিবাসন বিশেষজ্ঞদের মতে, ওমরাহ ভিসা নিয়ে সেখান থেকে রাশিয়ায় পাঠানো অন্যায়।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে অতিদ্রুত ট্রাভেল এজেন্সির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে বলেও মত প্রকাশ করেছেন তাঁরা।
উন্নত জীবনের খোঁজে ইউরোপে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে রাশিয়ার যুদ্ধদাসে পরিণত হচ্ছেন অনেক তরুণ। এই তরুণদের বিভিন্ন ছলচাতুরী করে রাশিয়ায় ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে কাজ দেওয়ার কথা বলে এখন যুদ্ধ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। যুদ্ধ না করলে হত্যা করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। মাগুরার একটি উপজেলার ছয়জনকে ইতালি বা জার্মানিতে পাঠানোর কথা বলে ১৫ থেকে ১৮ লাখ টাকা পর্যন্ত হাতিয়ে নিয়ে দালালচক্র রাশিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে বিক্রি করে দিয়েছে।
ইউরোপের শ্রমবাজারে যাওয়া সহজ নয় এবং সেখানে যে কেউ যেকোনো সময় যেতে পারে না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ব্যাপারে সচেতনতামূলক প্রচার চালাতে হবে। এই প্রচার সরকার গণমাধ্যমের মাধ্যমে করতে পারে। তাঁরা মনে করেন, শেষ মুহূর্তে তাদের আটকানোর একটা ব্যবস্থা করা উচিত। ইমিগ্রেশন কর্তৃপক্ষেরও তো একটি দায়িত্ব রয়েছে। অভিযুক্ত ট্রাভেল এজেন্সিকে পাচারের আইনে বিচার করতে হবে। রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যে ট্রাভেল এজেন্সি খোলে, সেটা নিষিদ্ধ করা উচিত বলে মনে করেন তাঁরা।
মানবপাচার বৈধ অভিবাসনকেও ঝুঁকিতে ফেলছে। দালালদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্বান্ত হওয়া থেকে তরুণদের রক্ষা করতে হবে। কঠোর অভিযান চালাতে হবে। একই সঙ্গে দেশে কর্মসংস্থান ও বৈধভাবে বিদেশে কর্মসংস্থানের সুযোগ বাড়াতে হবে।